বাংলায় সহীহ নামাজ শিক্ষা

Join Telegram for More Books
Table of Contents
Shahih Learning Salah in Bangla, সহীহ নামাজ শিক্ষা

বাংলায় সহীহ নামাজ শিক্ষা - Sahih Learning Salah in Bangla

পাঁচ কালেমা শিক্ষা

ধর্ম-বিশ্বাসের বাক্য ও বাক্যসমষ্টিকে কালেমা বলা হয়। এই কালেমা গুলোর উচ্চারণ বা পাঠই হল আন্তরিক ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। কালেমা প্রধানতঃ ৫টি।

নিম্নে ওই পাঁচ কালেমা উল্লেখ করা হল:

১. কালেমা তাইয়্যেব (উত্তম বাক্য):

 لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ

উচ্চারণঃ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রসূ-লুল্লাহ্। 

অর্থঃ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, ‘মুহাম্মদ' সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল।

২. কালেমা-ই শাহাদাত (সাক্ষ্য বাক্য):

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَاشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

উচ্চারণঃ আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূ-লুহূ।

অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চয়ই তাঁর প্রিয় বান্দা ও রসূল।

৩. কালেমা-ই তাওহীদ (আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসের বাক্য):

لَا إِله إِلَّا أَنْتَ وَاحِدًا لَّا ثَانِيَ لَكَ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ اِمَامُ الْمُتَّقِينَ رَسُولُ رَبِّ الْعَالَمِينَ

উচ্চারণঃ লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়া-হিদাল লা- সা-নিয়া লাকা মুহাম্মাদুর রসূ-লুল্লা-হি ইমামুল মুত্তাকী-না রসূ-লু রব্বিল আলামীন।

অর্থঃ (হে মা'বূদ) তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। তুমি একক, অদ্বিতীয়। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল, ধর্মভীরুদের ইমাম ও বিশ্বরবের প্রেরিত।

৪.কালেমা-ই তামজীদ (আল্লাহর সম্মান ও গুণবাচক বাক্য): 

لا إله إِلَّا أَنْتَ نُورًا يَّهْدِى اللَّهُ لِنُورِهِ مَنْ يَّشَاءُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ اِمَامُ الْمُرْسَلِينَ وَخَاتَمُ النَّبِيِّين

উচ্চারণঃ লা-ইলা-হা ইল্লা-আন্তা নূ-রাই ইয়াহদিল্লা-হু লিনূ-রিহী মাই ইয়াশা-উ, মুহাম্মাদুর রসূ-লিল্লা-হি ইমামুল মুরসালী-না ওয়া খা-তামুন্ নাবিয়্যী-ন।

অর্থঃ (হে মা'বূদ) তুমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। তুমি জ্যোতির্ময়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নূরের দিকে চালিত করেন। আল্লাহর প্রেরিত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম রসূলগণের ইমাম এবং নবীগণের মধ্যে সর্বশেষ।

৫. কালেমা-ই রদ্দে কুফর (কুফর খন্ডন বাক্য):

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُبِكَ مِنْ اَنْ اُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا أَنَا أَعْلَمُ بِهِ وَاسْتَغْفِرُكَ لِمَا أَعْلَمُ بِهِ وَمَا لَا اَعْلَمُ بِهِ تُبْتُ عَنْهُ وَتَبَرَّأتُ مِنَ الْكُفْرِ وَالشَّرُكِ وَالْمَعَاصِي كُلَّهَا وَاَسْلَمْتُ وَامَنتُ وَأقُولُ أنْ لا إله إلا الله مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন আন্ উশরিকা বিকা শাইআওঁ ওয়া আনা আ'লামু বিহী, ওয়াস্তাগফিরুকা লিমা আ'লামু বিহী ওয়া মা- লা-আ'লামু বিহী তুবতু আনহু ওয়া তাবারা’তু মিনাল কুফরি ওয়াশ্ শিরকি ওয়াল মা’আ-সী কুল্লিহা, ওয়া আসলামতু ওয়া আ-মানতু ওয়া আকূ-লু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রসূ-লুল্লা-হ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি যেন আমার জানা মতে কাউকেও তোমার সাথে অংশীদার না করি। আমার জানা-অজানা গুনাহ হতে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তা থেকে তাওবা করছি। কুফর, শির্ক ও অন্যান্য সমস্ত গুনাহ হতেও পবিত্র থাকছি এবং মেনে নিয়েছি ও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মা'বূদ নেই, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রসূল।

গোসলের পদ্ধতি
গোসলের তিনটি ফরয রয়েছে। ১. এভাবে কুল্লি, করা যাতে ঠোঁট, জিহ্বা এবং কণ্ঠনালীর কিনারা পর্যন্ত মুখের সম্পূর্ণ স্থানে পানি পৌঁছে। যদি দাঁতে কোন কিছু লেগে থাকে তাহলে তা ভালভাবে পরিস্কার করা প্রয়োজন, যদি পরিস্কার করতে কোন ক্ষতি কিংবা কষ্ট না হয়। ২.নাকে পানি দেওয়া, এমনভাবে যাতে, নাকের ছিদ্রের নরম অংশে পানি পৌঁছে, যাতে করে ওই স্থানের লোম ও অন্য কিছু থাকলে তাও পরিস্কার হয়ে যায়। এক কথায় নাকের ভিতরে ভাল করে পরিস্কার করে পানি পৌঁছাতে হবে। ৩.সমস্ত শরীর ভালভাবে ধৌত করা। এমনভাবে ধৌত করতে হবে, যাতে পানি মাথার তালু থেকে পায়ের নিচে পর্যন্ত শরীরের প্রত্যেক পরতে পরতে পৌঁছে, যাতে শরীরের প্রতিটি লোমকূপে পানি পৌঁছে যায়। একটি লোমও যাতে শুকনো না থাকে। যদি একটি লোম পরিমাণ জায়গাও শুকনো থাকে, তাহলে গোসল শুদ্ধ হবে না। যদি নাভীর নিচের লোমে পানি পৌঁছার ব্যাপারে সন্দেহ হয়, তাহলে সেখানে হাত দিয়ে ভালভাবে পানি পৌঁছাতে হবে। উল্লিখিত ফরযসমূহসহ গোসলের সুন্নাতসম্মত পদ্ধতি হচ্ছে- প্রথমে গোসলের নিয়্যত করবে।
গোসলের নিয়্যত:
نَوَيْتُ الْغُسْلَ لِرَفْعِ الْجَنَابَةِ
উচ্চারণ : নাওয়াইতুল গোসলা লিরফ ইল জানা-বাতি। 
তারপর, প্রথমতঃ দু'হাতের কব্জি তিনবার করে ধৌত করবেন। তারপর প্রস্রাবের রাস্তা (লিঙ্গ) ভালভাবে পরিস্কার করবেন, সেখানে 'নাজাসাত' (অপবিত্র বস্তু) থাকুক বা না-ই থাকুক। অতঃপর যদি শরীরের অন্য কোন স্থানে অপবিত্র কিছু লেগে থাকে তা পরিস্কার করতে হবে। তারপর শরীরে ধীরে ধীরে পানি পৌঁছাতে হবে। প্রথমে ডান পার্শ্বে তিন বার পানি, তারপর বাম পার্শ্বে তিনবার পানি দেওয়ার পর সমস্ত শরীর হাত দ্বারা আস্তে আস্তে রগড়াতে বা মর্দন করতে হবে। অতঃপর মাথায় এবং সমস্ত শরীরে তিনবার পানি দিতে হবে। গোসলের সময় ক্বেবলামুখী হওয়া কিংবা কারো সাথে কোন প্রকার কথাবার্তা বলা এবং কোন দো'আও পড়া যাবে না বরং গোসল করা শেষ হলে এগুলো করবেন।

সাবধানতা!
মাথার চুল যদি ঘন না হয়, তাহলে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরয। আর চুল যদি ঘন হয়, তাহলে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো দরকার। চুলের খোঁপা খুলতে হবে না। চুল যদি এমন ঘন হয় যে, খোঁপা খোলা ব্যতীত চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে না, তাহলে খোঁপা খুলতে হবে। নাকের ছিদ্রের বিধান হচ্ছে- যদি এগুলো বন্ধ না হয় তাহলে পানি পৌঁছানো প্রয়োজন। আর যদি ছিদ্র ছোট হয়, তাহলে নড়াচড়া করে পানি পৌঁছানো দরকার। কোন স্থানে যদি জখম হয় এবং ওই স্থানে ব্যান্ডেজ থাকে আর এটা খুললে যদি ব্যাথা কিংবা ক্ষতি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে অথবা কোন স্থানে কোন রোগ অথবা ব্যথার কারণে পানি প্রবাহিত করলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে ওই সব স্থানে সম্পূর্ণরূপে মসেহ করতে হবে। আর যদি ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তা হলে শুধু ব্যান্ডেজ মসেহ করবে, সম্পূর্ণ স্থান নয় এবং ব্যান্ডেজও প্রয়োজনীয় ক্ষতস্থান ছাড়া বেশি স্থানে রাখবে না। নতুবা মসেহ যথেষ্ট হবে না। যার ওযু নেই অথবা ধৌত করার প্রয়োজন আছে অথচ পানি ব্যবহারে অক্ষম অথবা এমন রোগ হয়েছে যে, যদি ওযু কিংবা গোসল করে তাহলে রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে অথবা আরোগ্য লাভ করা বিলম্বিত হবার সম্ভাবনা থাকে এসব অবস্থায় পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নামায আদায় করতে হবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই নামায ছেড়ে দেয়া যাবে না। তায়াম্মুমের বিবরণ পরবর্তীতে আসছে।

বিশেষ জ্ঞাতব্য
যার উপর গোসল ফরয, তার জন্য মসজিদে যাওয়া, বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করা, ক্বোরআন মজীদ স্পর্শ করা, অথবা স্পর্শ করা ছাড়া দেখে দেখে মুখে পড়া বা কোন আয়াত লিখা ও স্পর্শ করা অথবা এমন আংটি পরা, যার উপর কোরআন মজীদের কোন অংশ আছে - এসবই না-জায়েয।

■ ক্বোরআনের অনুবাদ ফার্সী অথবা উর্দূ অথবা যেকোন ভাষায় হোক না কেন স্পর্শ করা এবং পড়া ক্বোরআনের হুকুমের অনুরূপ। দুরূদ শরীফ এবং অন্যান্য দো'আ ইত্যাদি পাঠ করলে যদিও কোন অসুবিধা নেই, তবুও ওযূ কিংবা কুল্লি করে পাঠ করা উচিত। উল্লিখিত ব্যক্তিদের আযানের উত্তর প্রদানে কোন অসুবিধা নেই। এটা বৈধ।

■ যদি রাতে গোসল ফরয হয়, কিন্তু ফজরের নামাযের সময় গোসল করতে চায়, তাহলে রাতে প্রস্রাব সেরে ওযূ করে অথবা হাত-মুখ ধৌত করে ও কুল্লি করে পুনরায় ঘুমাবেন। এভাবে যদি খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলেও ওযূ করে, হাত ধৌত করে এবং কুল্লি করে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে।

ওযূ ও তায়াম্মুম করার পদ্ধতি

ওযূর ফরয ৪টি

১. মুখমন্ডল ধৌত করাঃ এর পরিধি হচ্ছে দৈর্ঘ্যে কপালের চুলের গোড়া থেকে কণ্ঠনালী পর্যন্ত আর প্রস্থে উভয় কানের লতি পর্যন্ত। উল্লিখিত সম্পূর্ণ স্থানে পানি পৌঁছানো ফরয।

২. উভয় হাত ধৌত করাঃ এর বিধান হচ্ছে, হাতের নখ থেকে শুরু করে কুনুই সমেত। যদি উক্ত স্থানের কোন অংশে এক লোম পরিমাণ জায়গাও শুষ্ক থাকে, তাহলে ওযূ হবে না। উল্লেখ্য যে, কুনুই হাতের অন্তর্ভুক্ত; তাই, তাও ধৌত করতে হবে। যদি নখে নখ-পলিশ থাকে, তাহলে নখে পানি না পৌঁছার কারণে ওযূ হবে না। তাই, নখ-পলিশ উত্তমরূপে দূরীভূত করে ওযূ করতে হবে। যদি গয়না, চুড়ি, আংটি এতই ছোট হয় যে, ওই স্থানে পানি না পৌঁছার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ওই অলঙ্কার খুলে ওই স্থান ধৌত করা ফরয। আর যদি নাড়াচাড়া করলে ওই স্থানে পানি পৌঁছে যায়, তাহলে ভালভাবে নেড়েচেড়ে নেওয়া জরুরী। আর যদি বেশি ঢিলা হয়, নাড়াচাড়া ব্যতীত পানি যথাস্থানে পৌঁছে যায়, তবে নাড়াচাড়ার প্রয়োজন নেই।

৩. মাথা মসেহ করাঃ মাথার এক চতুর্থাংশ মসেহ করা ফরয। আর মসেহ করার সময় হাত ভেজা থাকা প্রয়োজন। যদি ইতোপূর্বে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার কারণে ভেজা থাকে, তবে যথেষ্ট হবে। অবশ্য নতুনভাবে ভিজিয়ে মসেহ করা ভাল। আর যদি মাথায় চুল না থাকে তাহলে মাথার (চামড়ার) এক চতুর্থাংশ, আর যদি মাথায় চুল থাকে, তবে বিশেষত মাথার চুলের এক চতুর্থাংশ মসেহ করা ফরয। উল্লেখ্য, পূর্ণ মাথা মসেহ করা মুস্তাহাব। পাগড়ী, টুপি ও দু'পাট্টার উপর মসেহ করা বৈধ নয়। অর্থাৎ এ মসেহ যথেষ্ট নয়।

৪. উভয় পা ধৌত করাঃ পায়ের তালু থেকে গোড়ালী সমেত একবার ভাল করে ধৌত করা ফরয। আমাদের দেশে এমন কতেক লোক আছে, যাদের পায়ের আঙ্গুলে কোন রোগ হলে তা এমনভাবে বেঁধে রাখে যে, পায়ের নিচে পানি পৌঁছে না; ফলে ওযূও হয় না। আর ওযূর স্থানে এমন প্রসাধনী ব্যবহার করাও ঠিক নয়, যার কারণে ওই স্থানে পানি পৌঁছতে পারে না। একই কারণে নখে পলিশ থাকা অবস্থায় ওযূ হবে না।

ওযূর সুন্নাত

১. নিয়্যত করাঃ ওযূর নিয়্যত-

نَوَيْتُ أَنْ أَتَوَضَّأَ رَفْعًا لِلْحَدَثِ وَاسْتِبَاحَةً لِلصَّلوةِ وَتَقَرُّبًا إِلَى اللَّهِ تَعَالَى

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ আতাওয়াদ্ব দ্বো-আ রাফ‘আল লিল হাদাসি ওয়াসতিবা-হাতাল লিস সোয়ালা-তি ওয়া তাক্বররুবান ইলাল্লা-হি তা’আ-লা-। ২. “বিসমিল্লাহ' সহকারে আরম্ভ করা। ৩. মিয়াক করা। ৪. তিন বার কুল্লি করা। ৫. তিনবার নাকের ভিতর পানি পৌঁছানো। ডান হাতে পানি পৌঁছাবেন এবং বাম হাতে নাক পরিষ্কার করবেন। ৬. দাড়ি থাকলে তা খিলাল করা (ইহরামবিহীন অবস্থায়)। ৭. হাত ও পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা। ৮. তিন বার করে ধৌত করা। ৯. গোটা মাথা একবার মসেহ করা। ১০. কান দু'টিও মসেহ করা। ১১. তারতীব সহকারে অঙ্গগুলো ধোয়া বা মসেহ করা। ১২. অঙ্গগুলো এভাবে ধোয়া যেন পরবর্তী অঙ্গ ধোয়ার সময় পূর্ববর্তী অঙ্গ শুকিয়ে না যায়।

ওযূর মুস্তাহাব

১. ডান দিক থেকে আরম্ভ করা। ২. আঙ্গুলগুলোর পিঠ দ্বারা ঘাড় মসেহ করা। ৩. ক্বিবলামুখী হয়ে ওযূ করা। ৪. উঁচু জায়গায় বসে ওযূ করা। ৫. ওযূর পানি পবিত্র জায়গায় ফেলা। ৬. পানি ঢালার সময় সংশ্লিষ্ট অঙ্গে হাত বুলানো। ৭. নিজ হাতে পানি সংগ্রহ করা। ৮. পরবর্তী ওয়াক্বতের জন্য পানি সংগ্রহ করে রাখা। ৯. ওযূ করার সময় বিনা প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য না নেওয়া। ১০. আংটি ঢিলা হওয়া অবস্থায় তা নেড়েচেড়ে নেওয়া। (অন্যথায় ফরয) ১১. ওযর না থাকলে ওয়াক্বতের পূর্বে ওযূ করে নেওয়া। ১২. প্রশান্ত চিত্তে ওযূ করা (এমনি তাড়াহুড়া না করা যাতে কোন সুন্নাত কিংবা মুস্তাহাব ছুটে যায়)। ১৩. কাপড়-চোপড়কে ওযূর টপকে পড়া পানি থেকে বাঁচানো। ১৪. কান দু'টি মসেহ করার সময় ভেজা আঙ্গুল কানের ছিদ্র দু'টিতে প্রবেশ করানো। ১৫. যেসব অঙ্গে পানি উত্তমরূপে না পৌঁছার সম্ভাবনা থাকে, সেগুলোতে পানি পৌঁছানোর ব্যপারে খেয়াল রাখা ইত্যাদি।

কি কি কারণে ওযু ভঙ্গ হয়

১. পায়খানা-প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কোন বস্তু নির্গত হওয়া। ২. শরীরের কোন স্থান থেকে রক্ত অথবা পূঁজ বের হয়ে ওই স্থান থেকে গড়িয়ে পবিত্র স্থানে পৌঁছা। ৩. কোন কিছুর সাথে হেলান দিয়ে ঘুমানো (এভাবে যে, ওই বস্তুটি সরিয়ে নিলে সে পড়ে যাবে)। ৪. মুখ ভরে বমি করা। ৫. নামাযের অভ্যন্তরে বালেগ ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসা, যদিও ভুল বশতঃ হয়। ৬. বে-হুঁশ হয়ে যাওয়া, যদিও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হয়। ৭. পুরুষ ও মহিলার লজ্জাস্থান মধ্যখানে কোন আড়াল ছাড়া একত্রিত হওয়া। এরূপ দু'মহিলার মধ্যখানে ঘটলেও ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।

কি কি কারণে ওযূ মাকরূহ হয়

ওযূর মধ্যে মাকরূহ কাজ ১২টি- ১. মুখমণ্ডলে সজোরে পানি দেওয়া। ২. প্রয়োজনের চেয়ে কম বা বেশী পানি ব্যবহার করা। ৩. ওযূ করার সময় নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা। ৪. তিনবার নতুন পানি দ্বারা মাথা মসেহ করা। ৫. অপবিত্র স্থানে ওযূ করা। ৬. স্ত্রীলোকের ব্যবহারের অবশিষ্ট পানি দ্বারা ওযূ করা। ৭. মসজিদের ভিতর ওযূ করা। ৮. ওই পানিতে থুথু ফেলা বা নাক থেকে নাকটি বা শ্লেষা ফেলা, যে পানি দিয়ে ওযূ করছে, যদিও চলমান পানি হয়। ৯. ওযূর মধ্যে পা ধোয়ার সময় পা ক্বেবলার দিক থেকে না ফেরানো। ১০. কুল্লি করার জন্য বাম হাত দ্বারা পানি নেওয়া, ওইভাবে নাকে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রেও। ১১. বিনা ওযরে ডান হাত দ্বারা নাক পরিষ্কার করা এবং ১২. নিজ ওযূর জন্য কোন পাত্র নির্দিষ্ট করে রাখা। 

ওযূ করার পদ্ধতি

নিয়্যত করার পর নিম্নলিখিত দো'আ পড়তে পড়তে ওযূ আরম্ভ করবেন-

بِسْمِ اللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى دِينِ الْإِسْلَام - الْإِسْلَامُ حَقٌّ وَالْكُفْرُ بَاطِلٌ- الْإِسْلَامُ نُورٌ وَالْكُفْرُ ظُلُمَة

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হিল আলিয়্যিল আযীম ওয়াল হামদু লিল্লা-হি আলা- দী-নিল ইসলাম। আল ইসলামু হাকুন ওয়াল কুফরু বা-তিলুন। আল ইসলা-মু নূ-রুন ওয়াল্ কুফরু জুলমাতুন।

তারপর এমনভাবে ওযূ করবেন যাতে ওযূর ফরয, সুন্নাত ও মুস্তাহাবসমূহ যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়। তা এভাবে- মহান আল্লাহ্ তা'আলার বিধান পালনের জন্য ওযূর প্রারম্ভে বিসমিল্লাহ্ শরীফ পাঠ করে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার করে ধৌত করতে হবে। কমপক্ষে তিনবার ডানে-বামে, উপরে নিচে, দাঁতে মিসওয়াক করবেন এবং প্রত্যেকবার মিসওয়াক ধৌত করতে হবে। অতঃপর হাতের তিন অঞ্জলি পানি দ্বারা মুখ ভর্তি তিনটি কুল্লি করবেন। রোযাদার না হলে গরগরা করবেন। অতঃপর তিনবার নাকের ভিতর পানি পৌঁছাবেন। রোযাদার না হলে নাকের ভিতরের নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছাবেন। আর কব্জি দু'টি ডান হাত দ্বারা সম্পূর্ণ এবং বাম হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করবেন। তারপর দু'হাতে তিনবার মুখ ধৌত করবেন। মুখ ধৌত করার সময় আঙ্গুল দ্বারা দাড়ি খিলাল করবেন। তবে ইহরামকারী হাজী সাহেব দাড়ি খিলাল করবেন না। অতঃপর উভয় হাত কুনুইসহ তিনবার করে ধৌত করবেন।

অতঃপর সম্পূর্ণ মাথা, দু'কান এবং গর্দান মসেহ করবেন। তারপর উভয় পা গোড়ালীসহ বাম হাত দ্বারা ধৌত করবেন। হাত-পা ধৌত করার সময় আঙ্গুল থেকে শুরু করতে হয়। যেসব অঙ্গ অযূতে ধৌত করতে হয় সেগুলো তিন তিন বার করে ধৌত করতে হয় এবং ডান দিক থেকে আরম্ভ করতে হয়। অঙ্গসমূহ এমনভাবে ধৌত করতে হবে যাতে এক লোম পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। হাত-পায়ের আঙ্গুলগুলোকে মধ্যম ধরনের খিলাল করতে হবে। তারপর ওযূ করে যে পানিটুকু পাত্রে অবশিষ্ট থাকবে তার কিছু পরিমাণ দাঁড়িয়ে পান করা মুস্তাহাব, এতে রোগমুক্তি লাভ হয়। তখন আকাশের দিকে মুখ করে নিম্নের দো'আটি পাঠ করতে হয়-

سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ اَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَه إِلَّا أَنْتَ اسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ

উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লা-আন্তা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতু-বু ইলায়কা।

অতঃপর কলেমা শাহাদাত ও সূরা ‘ইন্না আনযালনা' পড়বেন। অতঃপর দু'রাক'আত তাহিয়্যাতুল ওযূ আদায় করবেন। তাতে অনেক সাওয়াব রয়েছে। ওযূর সময় কেবলার দিকে থুথু কিংবা কুল্লি করা এবং দুনিয়াবী কথা বলা মাকরূহ।

সাবধানতাঃ 

প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করে হাত মালিশ করে নিতে হবে, যাতে পানি শরীর কিংবা কাপড়ে টপকে না পড়ে। বিশেষতঃ মসজিদে ওযূর পানির ফোঁটা পড়া মাকরূহ-ই তাহরীমী। নামায, তিলাওয়াত-ই সাজদা, জানাযার নামায এবং কোরআন মজীদ স্পর্শ করার জন্য ওযূ থাকা ফরয। ওযূ ও গোসল করার সময় প্রয়োজন অনুসারে পানি ব্যবহার করতে হয়। বিনা কারণে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। রক্ত, পূঁজ অথবা হলদে পানি ক্ষতস্থান থেকে বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে ওযূ ভেঙ্গে যাবে। আর যদি একই স্থানে থেকে যায়, গড়িয়ে না পড়ে তাহলে ওযূ ভাঙ্গবে না। ঘুমের কারণেও ওযু ভঙ্গ হয়।

তায়াম্মুম

যার ওযূ নেই কিংবা গোসল করার প্রয়োজন হয়, অথচ পানি ব্যবহার করার ক্ষমতা নেই সে ওযূ ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। পানি ব্যবহার করার ক্ষমতা না থাকায় কতিপয় অবস্থা রয়েছে। যেমন- এমন রোগে আক্রান্ত যে, ওযূ কিংবা গোসল করলে রোগ বেড়ে যাবার কিংবা দীর্ঘায়িত হবার আশঙ্কা থাকে, এক বর্গমাইলের অভ্যন্তরে পানির সন্ধান পাওয়া যায় না, এতো বেশী ঠাণ্ডা পড়ছে যে, গোসল করলে মরে যাবার কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, শত্রুর ভয় থাকলে, যে মেরে ফেলবে কিংবা মাল ছিনিয়ে নেবে, কূপ আছে, অথচ বালতি-রশি নেই, এ পরিমাণ পানি আছে যে, তা দিয়ে ওযূ বা গোসল করে ফেললে পিপাসার্ত হবার সম্ভাবনা থাকে ইত্যাদি।

তায়াম্মুম করার পদ্ধতি

তায়াম্মুমের নিয়্যতে ‘বিসমিল্লাহ' পড়ে এমন কোন পাক জিনিসের উপর, যা মাটি জাতীয় হয়, উভয় হাত মেরে হাত দু'টি উল্টিয়ে নেবেন, ধূলিবালি বেশী লাগলে ঝেড়ে নেবেন, অতঃপর দু'হাতে সমগ্র মূখমণ্ডল মসেহ করে নেবেন, অতঃপর ২য় বার ওইভাবে হাত মারবেন এবং নখ থেকে কুনুইসহ উভয় হাত মাসেহ করে নেবেন। তায়াম্মুম হয়ে যাবে। তায়াম্মুমে মাথা ও পা মাসেহ করতে হয় না। তায়াম্মুমে শুধু ৩টি কাজ ফরয; বাকী সব সুন্নাত। ফরয ৩টি হচ্ছে: ১.নিয়্যত করা, ২.মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তুর উপর হাত মেরে সমগ্র মুখে হাত বুলিয়ে নেওয়া এবং ৩. ২য় বার হাত মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তুর উপর মেরে উভয় হাতের কুনুই সমেত মাসেহ করা।

তায়াম্মুম কিভাবে ভঙ্গ হয়?

যে সব কারণে ওযূ ভঙ্গ হয় কিংবা গোসল ওয়াজিব হয়, ওই সব কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়। এতদ্ব্যতীত পানি ব্যবহারে সক্ষম হলেও তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়।

নামাজের পদ্ধতি ও মাসয়ালা
নামাযের ৬টি পূর্বশর্ত
১. শরীর পাক হওয়া, ২. কাপড় পাক হওয়া, ৩. সতর ঢাকা, ৪. কেবলামুখী হওয়া, ৫. সময় আসা ও ৬. নিয়্যত করা।

নামাযের মধ্যে ৭টি রুকন বা ফরয রয়েছে
১. প্রথমে ‘আল্লাহু আকবার” বলে ‘তাকবীরে তাহরীমাহ্' বাঁধা, ২.দাঁড়িয়ে নামায পড়া, ৩. ক্বিরআত পড়া, ৪. রুকু' করা, ৫.সাজদা করা, ৬.শেষ বৈঠকে বসা, ৭.সালাম ফিরানো (অর্থাৎ, এমন কোন কাজ করে নামায থেকে বের হয়ে আসা, যা করলে নামায ভঙ্গ হয়ে যায়। সালামও এমন একটি উত্তম কাজ)। নামাযের মধ্যে ১৯টি ওয়াজিব, ২৬টি সুন্নাত, ১৫টি মুস্তাহাব রয়েছে। ‘তাকবীরে তাহরীমাহ' মূলত নামাযের শর্তাবলীর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু নামাযের ক্রিয়াদির সাথে গভীর সম্পর্কের কারণে রুকনের মধ্যও গণ্য করা হয়।

নামাযের মধ্যে ওয়াজিব কি কি
১. ফরয নামাযের প্রথম দু'রাক্’আতকে ক্বিরআতের জন্য নির্দিষ্ট করা। ২. সূরা ফাতিহা পড়া। ৩. সূরা ফাতিহাকে সূরা মিলানোর পূর্বে পড়া। ৪. পূর্ণ সূরা ফাতিহা একবার পড়া। ৫. ফরয নামাযের প্রথম দু'রাকআতে এবং ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাযের সকল রাক'আতে সূরা মিলানো। ৬. দু’সাজদার মধ্যেকার তারতীব ঠিক রাখা। ৭. ক্বাওমাহ অর্থাৎ রুকু' থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো। ৮. জালসাহ অর্থাৎ দু’সাজদার মধ্যখানে সোজা হয়ে বসা। ৯. তা’দীল অর্থাৎ রুকু, সাজদাহ, ক্বাওমাহ্ ও জলসায় ‘সুবহা-নাল্লা-হ' বলার মত সময়ের জন্য অঙ্গগুলো স্থির রাখা। ১০. ইমামের জন্য জরুরী (ফজর, মাগরিব, এশা, জুমু'আহ, উভয় ঈদ, তারাভীহ ও রমযান শরীফের বিতরের) নামাযে উচ্চস্বরে ক্বিরআত পড়া, আর যোহর ও আসরের নামাযে নিম্নস্বরে ক্বিরআত পড়া। ১১. তিন অথবা চার রাক'আত বিশিষ্ট নামাযের প্রথম বৈঠক করা, হোকনা তা নফল নামায। ১২. উভয় বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া। ১৩. ‘আস্-সালাম' শব্দের সাথে নামায থেকে বের হওয়া। ১৪. দো'আ কুনূতের তাকবীর বলা। ১৫. দো'আ কুনূত পাঠ করা। ১৬. উভয় ঈদের অতিরিক্ত তাকবীরসমূহ বলা। ১৭. ইমামের ক্বিরআতের সময় মুক্‌তাদী চুপ থাকা। ১৮. ইমামের অনুসরণ করা এবং ১৯. সাজদাহ-ই তিলাওয়াত করা।
উল্লেখ্য, এগুলো ব্যতীত নামাযে আরো কিছু কাজ আছে, সেগুলো হয়তো সুন্নাত, নতুবা মুস্তাহাব। ওইগুলো এখানে পৃথকভাবে বর্ণনা না করে এ সব বিষয়ের সমন্বয়ে সুন্নী হানাফী মাযহাব অনুযায়ী নামাযের পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা গেল-

নামাযের পদ্ধতি
কিয়াম:
ওযূ সহকারে উভয় পা ক্বেবলার দিকে করে উভয় পায়ের মধ্যবর্তী স্থানে শুধুমাত্র চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রেখে দণ্ডায়মান হবেন। আর নিয়্যত বাঁধার সময় উভয় হাতের তালু ক্বেবলামুখী করে এতটুকু উপরে তুলতে হবে যেন হাত কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং নিয়্যত করে ‘আল্লাহু আকবার' বলে উভয় হাত নাভীর নিচে বাঁধতে হবে। বাম হাতের উপর ডান হাতকে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে ডান হাতের মধ্যম তিন আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের উপরে থাকে এবং ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে বাম হাতকে জড়িয়ে ধরতে হবে। অতঃপর ‘সানা’ পড়তে হবে-
سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهُ غَيْرُكَ 
উচ্চারণ : সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রকাসমুকা ওয়া তা‘আ-লা- জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গায়রুকা। এরপর ‘আউযু বিল্লাহ্' ও ‘বিস্মিল্লাহ' পড়ে ‘সূরা ফাতিহা’ শরীফ পাঠান্তে নিচু স্বরে ‘আ-মীন' বলতে হবে। তারপর একটি সূরা কিংবা ছোট তিন আয়াত কিংবা তিন আয়াতের সমপরিমাণ দীর্ঘ এক আয়াত পড়তে হবে। এরপর ‘আল্লাহু আকবার' বলে রুকুতে যেতে হবে। তাও এমনভাবে যে, হাঁটুর উপর হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করা থাকবে এবং পিঠ ও মাথার উপরিভাগ সমান হবে, উঁচু-নিচু হবে না। এ সময় কমপক্ষে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুবহা-না রব্বিয়াল ’আযী-ম) বলতে হবে।

ক্বাওমা:
রুকু থেকে سَمِعَ اللهُ لِمَن حمِده (সামি 'আল্লা-হু লিমান হামিদাহ) বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। যদি নামাযী একাকী হয়, তাহলে এরপর ربَّنا لك الحمدُ (রব্বানা লাকাল হামদ)ও বলতে হবে।
■ যে ব্যক্তি পূর্ণ সময় ক্বিয়াম করতে (দাঁড়াতে) সক্ষম নয়, তবে কিছু সময় ক্বিয়াম করতে (দাঁড়াতে) সক্ষম, তার বেলায় বিধান হচ্ছে- এমন ব্যক্তি যতটুকু সময় দাঁড়াতে সক্ষম ততটুকু সময় দাঁড়াবে। এটা অপরিহার্য, যদিও ‘তাহরীমাহ’ (প্রথম তাকবীর) ও এক আয়াত পরিমাণ হয়। উল্লেখ্য, এ সামান্য পরিমাণ দাঁড়ানোও যখন অপরিহার্য, তখন সামান্য অসুবিধার কারণে বসে নামায পড়া কীভাবে জায়েয হবে? এ মাসআলা ভালভাবে স্মরণ রাখা ও আমল করা জরুরি। কেননা, মানুষ এ ব্যাপারে বড়ই গাফিল। আলমগীরী, রুকনে দ্বীন ইত্যাদি।
■ যে ব্যক্তি ক্বিয়াম তথা দাঁড়াতে পারে, কিন্তু রুকূ'-সাজদা করতে সক্ষম নয়, তার সম্পর্কে বিধান হচ্ছে- সে বসে নামায আদায় করার চেয়ে দাঁড়িয়ে ইশারার সাহায্যে নামায আদায় করবে। এটাই উত্তম। (ফাতওয়া-ই শামী।)

সাজদাহ:
এরপরে ‘আল্লাহু আকবার' বলে সাজদায় যাবেন। এভাবে যে, প্রথমে হাঁটু মাটিতে রেখে তারপর উভয় হাত ক্বেবলামুখী করে মাটিতে রাখতে হবে। তার মধ্যখানে সাজদা করতে হবে, এভাবে যে, প্রথমে নাক, তারপর মাথা রাখবেন যাতে কপাল ও নাকের নরম হাড্ডি মাটির উপর সমানভাবে থাকে।
হাতের বাহুকে পাঁজরের সাথে, পেটকে উরুর সাথে মিলানো যাবে না এবং উরুকে গোড়ালী থেকে পৃথক রাখবেন ও উভয় পায়ের সব আঙ্গুলের পেটের উপর ভর করে সেগুলোর সম্মুখভাগ ক্বেবলামুখী করে রাখতে হবে। হাতের তালু মাটির সাথে মিলিয়ে রাখতে হবে। তখন কমপক্ষে ৩ বার سبحان رَبِّي الأعلى (সুবহা -না রব্বিয়াল আ’লা) বলবেন। তারপর মাথা উঠাবেন এভাবে যে, প্ৰথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর মুখমণ্ডল, তারপর হাত উঠাবেন।

বৈঠক:
দু’সাজদার মাঝখানে অবস্থান করাকে ‘জালসাহ' বা বৈঠক বলে। সাজদা থেকে মাথা উঠিয়ে ডান পা সোজা রেখে আঙ্গুলগুলো ক্বেবলামুখী করে এবং বাম পা মাটিতে বিছিয়ে এর উপর উত্তমরূপে সোজা হয়ে বসতে হবে। হাত দু'টি দু’উরুর উপর ক্বেবলামুখী করে রাখতে হবে। এখন (দু’সাজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসা অবস্থায় اللّهُـمَّ اغْفِـرْ لي وَارْحَمْـني وَاهْدِنـي  وَارْزُقْنـي وَعافِنـي (আল্লাহুম্মাগ ফিরলী- ওয়ারহামনী- ওয়াহদিনী- ওয়ার যুক্বনী- ওয়া’ফিনী-) বলা ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ের জন্য মুস্তাহাব। [ফতোয়ায়ে রেযভিয়াহ্, ৩য় খণ্ড]
বৈঠকে কমপক্ষে ১বার ‘সুবহানাল্লাহ' বলার সময় পরিমাণ সোজা হয়ে বসা ‘ওয়াজিব’। (বাহারে শরীয়ত)

দ্বিতীয় সাজদা
‘আল্লাহু আকবার’ বলে দ্বিতীয় সাজদায় যেতে হবে এবং প্রথম বারের মতই সাজদা করতে হবে। তারপর মাথা উঠিয়ে হাঁটুতে হাত দিয়ে ও ভর করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।

দ্বিতীয় রাক্‘আত
এখন শুধু ‘বিসমিল্লাহ্’ শরীফ পাঠ করে ‘সূরা ফাতিহা' পড়ে অন্য একটি সূরা বা ছোট তিন আয়াত বা সমপরিমাণ দীর্ঘ এক আয়াত (ক্বিরআত) পড়ে রুকূ’তে, এরপর সাজদায় যেতে হবে।
ক্বা'দাহ বা বৈঠক
সাজদা থেকে উঠে ডান পা খাড়া রেখে বাম পা বিছিয়ে বসতে হবে এবং ‘তাশাহহুদ’ (আত্তাহিয়্যা-তু) পাঠ করতে হবে এবং ‘আত্তাহিয়্যা-তু’ পড়ার সময় যখন শব্দ لا (লা-) এর নিকটে যাবেন, তখন ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা দ্বারা বৃত্ত বানাবেন, তারপর কনিষ্ঠা ও কনিষ্ঠার পার্শ্ববর্তী আঙ্গুলকে হাতের তালুর সাথে মিলাতে হবে। আর যখন لا -তে পৌঁছবেন, তখন শাহাদাত আঙ্গুল উঠাতে হবে আর যখন اِلّا শব্দে পৌঁছবেন, তখন শাহাদাত আঙ্গুল নামিয়ে নিতে হবে। হাতের তালুকে পূর্বের ন্যায় তাৎক্ষণিকভাবে সোজা করে নেবেন এবং আঙ্গুলগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেবেন।

তৃতীয় ও চতুর্থ রাকা আত
যদি নামায দু'রাক'আতের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তাশাহ্হুদ পড়ে দণ্ডায়মান হতে হবে। যদি ফরয ছাড়া অন্য নামায হয় তাহলে প্রতি রাক'আতে সূরা মিলাবেন আর যদি ফরয হয়, তাহলে শুধু ‘সূরা ফাতিহা' পড়তে হবে। অন্য কোন সূরা মিলাতে হবে না। পূর্বে উল্লিখিত নিয়মে রুকূ’-সাজদা করে অবশিষ্ট রাকআত বা রাক‘আতগুলো সম্পন্ন করার পর শেষ বৈঠকে বসে যেতে হবে।

শেষ বৈঠক
এখন পূর্বের ন্যায় বসে প্রথমে তাশাহহুদ পড়ে নামাযের দরূদ তথা ‘দরূদে ইব্রাহীমী শরীফ' পড়ে সবশেষে দোআ’-ই মা’সূরা পড়তে হবে। 

তাশাহহুদের কতিপয় জরুরী বিষয়
তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যা-ত) পড়ার সময় সেটার অর্থের দিকে ধ্যান দেওয়া জরুরী। অর্থাৎ তাশাহহুদ পড়ার সময় ইচ্ছা এ থাকবে যে, ‘আমি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করছি এবং আল্লাহর মাহবুব-ই আযম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র পবিত্র দরবারে সালাম পেশ করছি। তদসঙ্গে নিজেদের উপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর সালাম পাঠ করছি।' তবে তাশাহহুদ পড়ার সময় যেন মি'রাজের ঘটনার ধ্যানে মগ্ন না হয়ে যান। দুররে মুখতার, ফতোয়ায়ে আলমগীরী। তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাত) পড়ার সময় হুযূরে আক্বদাস সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম'র নূরানী সূরতকে নিজের হৃদয়ে হাযির জানবেন। আর হুযূরে আক্বদাসের সূরত মোবারককে নিজের অন্তরে নিবদ্ধ করে ‘আস্ সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু' আরয করবেন। নিশ্চিত বিশ্বাস রাখবেন যেন আমার এ সালাম হুযূর আক্বদাস্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহান দরবারে পৌঁছছে। আর হুযূর আক্বদাও আমার সালামের, হুযূরের মহামর্যাদার উপযোগী জবাবও দান করছেন। [ইমাম গায্যালী কৃত ইয়াহ্ইয়াউল উলূম (আরবী) ১ম খন্ড, ১০৭পৃ.]

■ দরূদ শরীফ (দরূদে ইব্রাহীমী শরীফ) তে হুযূর আক্বদাস্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম'র পবিত্র নামের পূর্বে ‘সায়্যিদিনা’ সংযোজন করে বলা উত্তম। 
তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যা-ত)-এর পর দরূদ-ই ইব্রাহীমী শরীফ এবং দো'আ-ই মা’সূরা পাঠ করে সালাম ফেরাবেন।

সালাম
ডান দিকে মুখ করে السلام عليكم ورحمه الله (আস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্) বলবেন। তারপর একই বাক্য বলে বাম দিকে সালাম ফেরাতে হবে। যদি ফরয নামায হয় তা হলে সালাম শেষে। اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ ... الخ (আল্লা-হুম্মা আন্তাস্ সালাম... শেষ পর্যন্ত) পড়বেন।

■ উল্লেখ্য, জামা'আত সহকারে নামায আদায় করলে ইমাম সালাম ফিরানোর পর সবাই উচ্চস্বরে যিকর করবেন। সাহাবায়ে কেরাম তখন এত উচ্চস্বরে যিকর করতেন যে, তাঁদের আওয়াজ শোনে পার্শ্ববর্তী এলাকায় মহিলা ও শিশুরা বুঝতে পারতেন মসজিদে জামা'আত সমাপ্ত হয়েছে। সুতরাং তখন নিম্নলিখিত যিকর ও সালাম পাঠ করা যেতে পারে-
لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا شَريكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الحَمدُ يُحى وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ-  الصَّلَوةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدِى يَا رَسُولَ الله - اَلصَّلوةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدِي يَا نَبِيَّ اللَّهِ - اَلصَّلَوةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدِى يَا حَبِيبَ اللهِ وَ عَلَى الِكَ وَأَصْحَابِكَ يَا سَيِّدِى يَا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ - 
উচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহূ- লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হাম্‌দু, ইয়ুহয়ী- ওয়া ইয়ুমী-তু ওয়া হুয়া 'আলা- কুল্লি শাইন্‌ ক্বদী-র। আস্সালাতু ওয়াস্ সালামু আলায়কা এয়া সাইয়্যিদী এয়া রসূলাল্লাহ। আস্সালাতু ওয়াস্ সালামু আলায়কা এয়া সায়্যিদী এয়া নাবীয়্যাল্লাহ। আস্সালাতু ওয়াস্ সালামু আলায়কা এয়া সাইয়্যিদী এয়া হাবীবাল্লাহ। ওয়া আলা- আ-লিকা ওয়া আসহা-বিকা এয়া সাইয়্যিদী এয়া রহমাতাল লিল আ-লামী-ন।

সাবধানতা! 
একাগ্রতা ও নম্রতা সহকারেই নামায পরিপূর্ণরূপে আদায় করবেন। তাড়াহুড়ো করে ওযূ করা, ইমামের আগে নামাযে কিছু করা, স্বীয় নামাযে রুকু, সাজদা একাগ্রতার সাথে না করা, রুকু'র পর সম্পূর্ণরূপে সোজা হয়ে দণ্ডায়মান না হওয়া, দু’সাজদার মাঝখানে সম্পূর্ণরূপে না বসা, অন্যান্য মাসআলা-মাসাইলের ব্যাপারে সতর্ক না থাকা অনেক ক্ষতির কারণ হয়। ইমামের পেছনে মুক্তাদীর জন্য ক্বিরআত ও সূরা ফাতিহা ইত্যাদি পড়া নিষেধ।

ফরয নামায, বিতর, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এবং ফজরের সুন্নাত দাঁড়িয়ে পড়া ফরয। কোন কারণ ব্যতীত, সুস্থ-সবল ব্যক্তি বসে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না। প্রয়োজনে লাঠি কিংবা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে হবে। যদি দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র ‘আল্লাহু আকবার' বলার সামর্থ্য থাকে তাহলে এতটুকু বলবে অতঃপর বসে বসে অবশিষ্ট নামায আদায় করবে। কোন কোন মহিলা ও পুরুষ এ ক্ষেত্রে নানা বাহানা করে; কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত যে, দাঁড়িয়ে নফল নামায আদায় করা ও বসে আদায় করার চেয়ে দ্বিগুণ সাওয়াব।

মহিলার নামায
নামায পড়ার সময় মহিলাগণ প্রথমে নিয়্যত করে হাতদু'টি কাপড়ের ভিতর নিজের কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করবেন এবং ‘আল্লাহু আকবার' বলে হাত নিচে নামিয়ে বুকের উপর হাত দু'টি বাঁধবেন। রুকূ'তে এতটুকু ঝুঁকবেন যে, হাত হাঁটুতে পৌঁছে যাবে অতঃপর হাতের আঙ্গুল হাঁটুর উপর মিলিতভাবে রাখবেন। সাজদা সঙ্কুচিত হয়ে করতে হবে। এভাবে যে, বাহু পাঁজরের সাথে, পেট উরুর (রান) সাথে, উরু পায়ের গোড়ালীর সাথে এবং গোড়ালী মাটির সাথে মিলিত থাকবে। সাজদার পর উভয় পা ডান দিকে বের করে বাম রানের উপর বসতে হবে। অবশিষ্ট নামায একইভাবে আদায় করতে হবে। কামিজের আস্তীন সম্পূর্ণ, ওড়না ও পোশাক এতটুকু ঢিলাঢালা হওয়া প্রয়োজন, যাতে শরীরের রঙ এবং চুলের চমক দৃষ্টিগোচর না হয়। আর সালোয়ার পায়ের গোড়ালীর নিচে পর্যন্ত লম্বা হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পবিত্রতা ও নামায সংক্রান্ত এ গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত মাসআলা-মাসাইল আ'লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলায়হি'র সুযোগ্য খলীফা সদরুস শারী‘আহ মাওলানা মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী রহমাতুল্লাহি আলায়হি'র সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ- ‘বাহারে শরীয়ত, ২য় ও ৩য় খণ্ড', তাছাড়া ‘ফাতাওয়া-ই রেযভিয়াহ', 'দুররে মুখতার' ও ‘ফাতওয়া-ই শামী' ইত্যাদি হতে উদ্ধৃত। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, মুসলমানদের জন্য নামায অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন ইসলামী ফরয। এটা মুসলমানদের জীবনে অবশ্য পালনীয়। নিজেও এবং নিজেদের সন্তানদের দ্বীনদার এবং পাঁচ ওয়াকৃত নামাযী হিসেবে গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। হাদীস শরীফ ও ফিক্বহের বিধানানুসারে সন্তানের বয়স যখন ৭ বছর হবে তখন নামায পড়ার জন্য নির্দেশ দিতে হবে। যখন দশ বছর হয় এবং ছেলে বা মেয়ে নামায না পড়ে, স্ত্রীও যদি বে-নামাযী হয়, তখন তাদের মারধর করে নামায পড়ানোর নির্দেশ রয়েছে। নামায সংক্রান্ত মাসআলা-মাসাইল ভালভাবে নিজে জেনে নেওয়া এবং অপরাপর সবাইকেও জানিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।

কি কি কারণে নামায ভঙ্গ হয়
১. কথা বলা। (চাই তা ইচ্ছে করে হোক কিংবা ভুলে, কম হোক বা বেশি।) ২. সম্মান দেখানোর উদ্দেশ্যে সালাম করা। চাই তা ইচ্ছে করে হোক বা ভুলে। ৩. সালামের জবাব দেওয়া- ইচ্ছাকৃত হোক কিংবা ভুলবশতঃ। ৪. হাঁচির জবাব দেওয়া। ৫. দুঃসংবাদের জবাবে إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ পড়া। ৬. সুখবর শুনে الْحَمْدُ لِلَّهِ বলা। ৭. আশ্চর্যজনক খবর শুনে سُبْحَانَ اللهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ বলা। ৮. নামাযে নিজ ইমাম ব্যতীত অন্য কাউকে লুকুমাহ দেওয়া। ৯. নামাযের মধ্যে এমন কিছু চাওয়া, যা মানুষের কাছে চাওয়া হয়। যেমন- “হে খোদা, আমার সাথে অমুক মহিলার বিবাহ দাও অথবা আমাকে এক হাজার টাকা দাও।” ১০. আহ! উহ! কিংবা উফ্ বলা। ১১. ক্বোরআন শরীফ থেকে দেখে দেখে তিলাওয়াত করে নামায পড়া। ১২. ক্বোরআন শরীফ ভুল পড়া। ১৩. আমলে কাসীর (যে কাজে উভয় হাত ব্যবহৃত হয়), যা দেখে দূরবর্তী লোকের এমন ধারণা হয় যে, ওই কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তিটি নামাযে রত নয়। (যেমন, কাপড় পরিধান করা, স্বেচ্ছায় অথবা কারো ধাক্কায় নামাযী নিজ স্থান থেকে কয়েক কদম সরে যাওয়া ইত্যাদি কারণে নামায ভেঙ্গে যাবে।) ১৪. জেনে-শুনে কিংবা ভুলে কোন কিছু খাওয়া বা পান করা। ১৫. বিনা ওজরে ক্বিবলাহ্র দিক থেকে বুক ফেরানো। ১৬. বিনা প্রয়োজনে দু'সারি পরিমাণ স্থান একবারে চলা। ১৭. ইমামের আগে চলে যাওয়া। ১৮. নামাযে তিনটি শব্দ পরিমাণ লেখা। ১৯. ব্যথা কিংবা বিপদের কারণে কাঁদা বা শব্দ করা। ২০. উচ্চস্বরে হাসা। ২১. নামাযে নয় এমন ব্যক্তির কথা নামাযরত ব্যক্তি মান্য করা। ২২. কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে জামা'আতে কোন মহিলা, কোন পুরুষের বরাবর হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া। ২৩. ইমামতের অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে ইমামের স্থলবর্তী করা। ২৪. কাউকে খলীফা না বানিয়ে ইমাম মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা। ২৫. বায়ু ত্যাগ করার পর (ওযূ' চলে যাওয়ার পর) ওই স্থানে ৩ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হ' পড়ার সময় পরিমাণ অবস্থান করা।

কি কি কারণে নামায মাকরূহে তাহরীমী হয়
১. চাদর ও ওড়না নিয়ম অনুযায়ী না পরে উভয় কাঁধের উপর দিয়ে মাথার উপর থেকে ছেড়ে দেওয়া। ২. বিনা অসুবিধায় ছোট ছোট পাথর সাজদার স্থান থেকে সরানো। আর যদি সাজদা করতে অসুবিধা হয়, তবে একবার সরানো জায়েয আছে। ৩. মাটি লেগে যাওয়ার ভয়ে কাপড় উপরে উঠানো। ৪. জামার হাত কিংবা কিনারা উঠানো অবস্থায় নামায পড়া। ৫. নামাযী নিজ শরীর, কাপড় কিংবা দাড়ি নিয়ে খেলা করা। ৬. এমন কোন বস্তু মুখে রাখা, যা দ্বারা ওয়াজিব পরিমাণ ক্বিরআত আদায়ে অসুবিধা হয়। ৭. নামাযরত অবস্থায় আঙ্গুল চটখানো। ৮. এক হাতের আঙ্গুলসমূহ অন্য হাতের আঙ্গুলের ভিতরে ঢুকানো। ৯.নামাযরত অবস্থায় উভয় হাত কোলের উপর রাখা। ১০ নামাযে রত অবস্থায় মুখ ফিরিয়ে এদিক-ওদিক দেখা। ১১. নামাযে কুকুরের মত বসা। অর্থাৎ নিতম্বের উপর বসে উভয় হাঁটু খাড়া করে বুকের সাথে লাগিয়ে উভয় হাত দিয়ে মাটির উপর ভর করে বসা। অথবা উভয় পা খাড়া করে গোড়ালির উপর বসা এবং উভয় হাত মাটির উপর রাখা। ১২. নামাযী ব্যক্তি অন্য কারো মুখের দিকে মুখ করে বসা মাকরূহে তাহ্রীমী। ১৩. নিজ থেকে (স্বেচ্ছায়) হাই তোলা। ১৪. পুরুষ চুলচুটি বেঁধে নামায পড়া। ১৫. কোন অসুবিধা ছাড়া ইমাম একহাত উঁচু স্থানে আর মুতাদী নিচে দাঁড়ানো। ১৬. নামাযী ব্যক্তি প্রাণীর ছবি সম্বলিত কাপড় পরে নামায পড়া। তেমনিভাবে নামাযী ব্যক্তির উপরে কিংবা ডানে-বামে প্রাণীর ছবি থাকাও মাকরূহে তাহরীমী। ১৭. রুকু, সাজদা, ক্বাওমাহ (রুকু' থেকে সোজা দাঁড়ানো) ও উভয় সাজদার মধ্যখানের বৈঠক ধির-স্থির ও স্বস্তি সহকারে না করা। ১৮. পায়খানা ও পেশাবের বেগ নিয়ে নামায পড়া। ১৯. চাদর শরীরে এভাবে পেঁচানো যে, কোন দিক দিয়ে হাত বের করা যায় না। ২০. মাথার মধ্যভাগ খোলা রেখে পাগড়ী বেঁধে নামায পড়া। ২১. নাক, মুখ ঢেকে যায় এমন কাপড়ের টুকরা দ্বারা নাক, মুখ বেঁধে নামায পড়া। ২২. জামা থাকা সত্ত্বেও খোলা দেহে অথবা গেঞ্জি জাতীয় কাপড় পরে নামায পড়া। ২৩. ইমামের পেছনে মুক্তাদীর ক্বিরআত পড়া। ২৪. পায়ের গোড়ালীর নিচে কাপড় ঝুলানো ইত্যাদি।

কি কি কারণে নামায মাকরূহে তানযীহী হয়
১. ভাল কাপড় থাকা সত্ত্বেও ময়লা কাপড় পরে নামায পড়া। ২. কোন অসুবিধা ছাড়া একাকী মেহরাবের ভিতরে দাঁড়ানো। ৩. চাদর ইত্যাদি ডান বগলের নিচ দিয়ে এনে বাম কাঁধের উপর দিয়ে উভয় প্রান্ত ছেড়ে দেওয়া। ৪. অপারগতা ছাড়া চার জানু হয়ে বসা। ৫. হাই আসার সময় মুখ খোলা রাখা। ৬. চক্ষু বন্ধ করা। ৭. ‘সুবহানাল্লাহ' ইত্যাদি আঙ্গুল কিংবা তাসবীহের সাহায্যে গণনা করা। তবে যদি আঙ্গুলের মাথা দাবিয়ে দাবিয়ে গণনা করে, তবে মাকরূহ হবে না। ৮. ওযর ছাড়া ‘আমলে ক্বলীল' (পূর্বোল্লিখিত আমলে কাসীরের কম পর্যায়ের কাজ) করা। ৯. থুথু ফেলা, আস্তীনের সাহায্যে বাতাস করা ও ফুঁক দিয়ে এ ধরনের আমলে ক্বলীল' করা। ১০. ওযর ছাড়া খালি মাথায় নামায পড়া। তবে টুপি বা পাগড়ী মাথা থেকে পড়ে গেলে আমলে ক্বলীলের মাধ্যমে তা উঠিয়ে নিতে অসুবিধে নেই। ১১. সাজদায় পা ঢেকে ফেলা। ১২.ডানে-বামে হেলে যাওয়া বা ঝুঁকে যাওয়া। ১৩. ওযর ছাড়া এক পায়ের উপর জোর দেওয়া। ১৪. নামাযে সুগন্ধী শুঁকা। ১৫. সাজদা ইত্যাদিতে হাত-পায়ের আঙ্গুলসমূহ ক্বিবলার দিক হতে ফিরিয়ে রাখা। ১৬. মসজিদে নিজ নামাযের জন্য কোন স্থান নির্দিষ্ট করা। ১৭. শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়াগুলো নাড়া-চাড়া করে চটখানো। ১৮. ওযর ছাড়া রুকূ'তে হাঁটুর উপর এবং সাজদায় মাটির উপর হাত রাখা। ১৯. তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত কানের উপরে উঠানো কিংবা কাঁধের নিচে রাখা। ২০. সাজদায় হাঁটুর সাথে পেট মিলানো। ২১. ইমামের অনুপস্থিতিতে ইক্বামতের সময় সবাই দাঁড়িয়ে সারি-কাতার সোজা করা। ২২. ইমাম তাড়াহুড়ো করে নামাযের এক রুকন থেকে অন্য রুকনে চলে যাওয়া, যে কারণে মুতাদীগণ সুন্নাতসম্মত যিকগুলো আদায় করতে পারে না। ২৩. বিনা প্রয়োজনে মশা-মাছি তাড়ানো। উল্লেখ্য, রুকু-সাজদা করার সময় পাজামা-পাঞ্জাবি কিংবা লুঙ্গি ইত্যাদি উঠালে তা মাকরূহে তাহরীমী হবে।

আপডেট চলমান

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now