মেধা বিকাশ ও ছাত্র-ছাত্রীর ভূমিকা - Talent development and the role of students

মেধা বিকাশ ও ছাত্র-ছাত্রীর ভূমিকা - Talent development and the role of students
Join Telegram for More Books
Table of Contents

মেধা বিকাশ ও ছাত্র-ছাত্রীর ভূমিকা

প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্যে মেধা একটি বহুমূল্য শুন। এই শুন সকলের মধ্যে সমান ভাবে থাকে না। কেউ জন্মগতভাবে এই শুন নিয়ে পৃথিবীতে আসে না। নিজের শিক্ষাজীবনে তথা ব্যক্তিজীবনে এই শুনটি নিজের মধ্যে প্রতিভাত করতে হয়। নিজের আত্মবিশ্বাস আর আস্থার মাধ্যমে এই গুন অর্জন করতে হয়।


প্রতিবছর আমাদের দেশে যেসব ছাত্র বা ছাত্রী ম্যাট্রিক কিংবা ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় খুব ভাল রেজাল্ট করে- তাদের এই সফলতার পেছনে কোন যাদু বা মন্ত্রের কারসাজি নেই। তারা কেউই যাদুকর নয়। এই সফলতার জন্যে তাদের সবাইকে করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম। আর এই পরিশ্রমের জন্যেই তারা অর্জন করেছে সুন্দর এবং চমৎকার ফলাফল ।


জন্মের পর থেকে একটি মানুষ যখন ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে- তখন থেকেই তার মধ্যে মেধার কিছুটা প্রাবল্য দেখা যায়। একটি শিশুও মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই মেধার পরিচয় দিয়ে ফেলে। এই মেধা তার জন্মগত প্রাপ্তি নয়। প্রতিটি শিশু অনুকরণপ্রিয়। তাই তার চারপাশের পরিচিত মানুষদের মধ্যেকার মেধার বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করে একটি শিশুর মধ্যে মেধার বিকাশ ঘটতে পারে।


আমি আগেই বলেছি, তুমি নিজেই জানো না তোমার মধ্যে কি পরিমাণ মেধা লুকিয়ে আছে। তোমার প্রতিভা তোমার মধ্যেই লুকায়িত। এই প্রতিভাবে জাগ্রত করতে হবে তোমাকেই। তবেই তুমি জয়ী হতে পারবে।


ছাত্রজীবন হচ্ছে মানুষের সবচাইতে বড় যুদ্ধক্ষেত্র। তবে এই যুদ্ধক্ষেত্রে কোন মারনাস্ত্র ব্যবহার করা হয় না। ব্যবহৃত হয় কলম নামের এক ধারালো তরবারী আর কাগজ নামক যুদ্ধক্ষেত্র। এই কাগজ আর কলমের মাধ্যমেই একটি ছাত্র বা ছাত্রী তাদের মেধার পরিচয় দেয় পরীক্ষার খাতায়।


একজন ভাল ছাত্রকে নতুন করে কিছু আবিষ্কার করতে হয় না। এটার দরকারও নেই। তাকে যেটা করতে হয় সেটা হলো, আবিষ্কৃত তথ্য বা প্রচলিত বিষয়াবলী থেকেই তাকে অর্জন করতে হয় পরীক্ষার খাতায় উপযুক্ত নাম্বার পাবার মতো যোগ্যতা। এটা কিন্তু এমন কোন কঠিন কাজ নয়। একজন অতি সাধারণ মাত্রার ছাত্র বা ছাত্রীই এই গুনটি অর্জন করতে পারে অনায়াসে।


পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যেসব মেধাবী ছাত্র বা ছাত্রী পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করেছে- তাদের সবাই যে খুব একটা ভাল ছাত্র বা ছাত্রী তা নয়। বরং তাদের মধ্যে রয়েছে পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত পরিশ্রম করার মনোভাব।


ছাত্রজীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। এই সময়টা শুধু পড়ার সময়। এই সময়ের মূল্য যে দিতে পেরেছে- সেই লাভবান হয়েছে।


তুমি এখন ছাত্র। কিন্তু এমন একদিন আসবে তোমার সন্তানরাই ছাত্র হবে। তখন তোমার উপর অর্পিত হবে সন্তান মানুষ করার এক বিশাল দায়িত্ব। শুধু তাই নয়, পড়াশোনা শেষ করার পর একটা পরিণত বয়সে তোমার ঘাড়ে এসে পড়বে দেশ ও জাতির প্রতি একটা কর্তব্যের বোঝা। তুমি চাইলেও এই কর্তব্যকে অস্বীকার করতে পারবে না। তুমি যদি তোমার ছাত্রজীবনের মূল্যবান এইসব সময়গুলোকে হেলায় নষ্ট কর, তাহলে পরিণত বয়সে তোমাকে তার মাশুল দিতে হবে। তুমি চাইলেও তখন তোমার মনের মতো করে জীবন গড়তে পারবে না।


সময় হচ্ছে বহমান নদীর মতো। একবার চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। সুতরাং ছাত্রজীবনের মূল্যবান সময়গুলো হেলায় নষ্ট করলে পরিণত বয়সে তার ফল তোমাকেই ভোগ করতে হবে।


ভলতেয়ার নামের একজন বিশিষ্ট দার্শনিক বলেছেন, প্রতিভা বলতে আসলে কিছু নেই। প্রতিভাবান মানুষরাও এমন কোন দেবতা নয়। তারাও আমাদের মতোই সাধারণ আর


স্বাভাবিক মানুষ। কিন্তু তারা প্রতিভা বিকাশের জন্যে পরিশ্রম করেছো বলেই আজ প্রতিভাবান মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।


উপরের বক্তব্য থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিভা বা মেধা মানুষ ইচ্ছে করলেই অর্জন করতে পারে। নিজের উপর গভীর আস্থা আর সময়ের সাথে নিজেকে যোগ্য ছাত্র করে গড়ে তোলার অভিপ্রায় থাকলে একজন অতি বোকা বা মেধাবিহীন ছাত্র বা ছাত্রীও কালক্রমে মেধাবী ছাত্র হিসেবে শিক্ষাঙ্গনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে।


একথা তো সত্যি, যত্নে একটি বন্য প্রাণীও পোষ মানে। যত্ন করলে বুনো ফুলগাছও সুন্দর লাগে। একটি চারাগাছকে যত্ন করলে সেটা তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠে ফল দেয়। সুতরাং তুমি তোমার মেধার যত্ন ঠিকমতো করলে তার সুফল পেতে কোন অসুবিধা নেই।


তুমি পরীক্ষায় ফেল করেছো। এতে হতাশ হবার কিছু নেই। তোমার মধ্যে মেধার কোন কমতি নেই। ইচ্ছে করলেই তুমি সবার চাইতে ভাল ফল করতে পার। তোমার মধ্যে সেই সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে।


তুমি বোকা ছাত্র। তোমার কোন প্রতিভা নেই। পরীক্ষায় ভাল ফল লাভ করতে পার না। ক্লাসে তুমি সবসময় অন্যান্য ছাত্র বা ছাত্রীদের থেকে পিছিয়ে থাক। ঠিক মতো হোমওয়ার্ক করতে পার না। তাতে কি হয়েছে? তুমি ইচ্ছে করলেই সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পার, তোমার মধ্যেও মেধা আছে। আর সব ছাত্র বা ছাত্রীর চাইতে তুমি আরও ভাল ফল লাভ করতে পার পরীক্ষায়।


তুমি গরীবের ছেলে বা মেয়ে। একটা সাধারণ স্কুলে বা কলেজে পড়াশোনা করো। তোমার রেজাল্ট ভাল নয়। এই কারণে, তোমার মধ্যে একটা হীনমন্যতা সবসময়ই কাজ করে- যদি তোমার বেশি টাকা থাকতো। তাহলে নিশ্চয় ভাল স্কুলে বা কলেজে পড়তে পারতে। তাহলে নিশ্চয় তোমার রেজাল্ট ভাল হতো। আসলে এটা ঠিক নয়।


তুমি যে পরিবেশেই থাক না কেন, যদি মনোযোগ দিয়ে নিয়মমাফিক লেখাপড়া করো তাহলে বিশ্বাস করো মাত্র একবছরের মধ্যেই তুমি তোমার অবস্থান পাকা করতে পারবে যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এর জন্য চাই নিজের ওপর আস্থা এবং পড়াশোনার প্রতি গভীর অনুরাগ। তুমি পড়াশোনায় যেটুকু শ্রম দেবে তার চাইতে দ্বিগুন পাবে। বিশ্বাস করো, একটি কথাও আমি বানিয়ে লিখছি না। তুমি যখন আমার এই বইটি পড়ছো, নিশ্চয় এই বইয়ের কথাগুলো বিশ্বাস করা তোমার উচিত কারণ আমি একটি কথাও যুক্তির বাইরে বলিনি। শুধু তাই নয়, আমি আমার নিজের জীবনে যেটুকু দেখেছি বা এখনও ছাত্র পড়িয়ে যা দেখছি তাতে আমার মধ্যে এই বোধটুকু জাগ্রত হয়েছে- ছাত্রজীবনে  মনোবল চাঙ্গা রেখে পড়াশোনায় মনোযোগী হলেই একজন ছাত্র বা ছাত্রী অনায়াসে দেখার মতো রেজাল্ট করতে পারে পরীক্ষায়।


তুমি তোমার ক্লাসের দিকেই তাকিয়ে দেখ। যে ভাল ছাত্র বা ছাত্রী তোমার সহপাঠি। সে কিন্তু তোমাদের মতোই স্বাভাবিক একজন মানুষ। তার এমন কোন আলাদা ক্ষমতা নেই- যার বলে সে পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে থাকে। ক্লাসে যে ছাত্রটি ফার্স্ট হিসেবে পরিচিত- তার এমন কোন বাড়তি গুন নেই- যার বলে সে পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়। এমন অনেক ভাল ছাত্র তোমার ক্লাসে আছে- যাদের পারিবারিক বা অর্থনৈতিক দিকগুলো অত্যন্ত দুর্বল।


এই প্রসঙ্গে আমার একটি কথা মনে পড়ে গেল। স্কুল জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমার এক বান্ধবী ছিল, নাম লাবনী। আমাদের ক্লাসে তার রোলনাম্বার বরাবর ফার্স্ট কিংবা সেকেন্ডে যেন বাঁধা ছিল। কিন্তু আমাদের ক্লাসে তার অবস্থান ছিল অনেক নিচে। কারণ সে গরীব।


লাবনীর বাবা মারা গেছে তার ছোট বেলায়। সংসারে মা ছাড়া তার আর কেউ ছিল না। তার মা একটি বেসরকারী প্রাইমারি স্কুলে মাস্টারী করতো। খুব কম বেতনের চাকরি। এই বেতন দিয়ে ঠিকমতো সংসার চালানোই কষ্টকর। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত একটি ভাঙাচোরা বাড়িতে সে বাস করতো। আমার জানামতে মাঝে মাঝে এমনও দিন গেছে সে সকালে না খেয়েই স্কুলে আসতো। ক্লাসের অন্যান্য মেয়েরা তার সাথে ঠিকমতো কথা বলতো না। তবে কেউ তার সাথে কথা না বললেও বা তাকে অবহেলা করলেও দেখা যেত ক্লাস পরীক্ষায় সেই ভাল করেছে।


আমার মনে আছে, ক্লাসের সবচাইতে দেমাগী বড়লোকের মেয়ে বলে পরিচিত রোকেয়া নামের এক বান্ধবী উক্ত লাবনীর স্কুল ইউনিফর্মে কলমের কালি ফেলে। দিয়েছিল। এতে করে তার স্কুল ড্রেসে বিশ্রী আর বড়ো দাগ হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনায় লাবনী যে পরিমাণ কেঁদেছিল তা আজ আমি মনে করলে আমার চোখে পানি চলে আসে। বিষয়টা সেদিন কেউ বুঝতে পারেনি কিন্তু আমি বুঝেছিলাম। তার এই একটাই ইউনিফর্ম। এটা পরেই সে স্কুলে আসে। কিন্তু কলমের কালি এত বিশ্রীভাবে দাগ ফেলেছে যে, এটা পরে কাল সে স্কুলে আসতে পারবে না। তার অন্য কোন স্কুল ড্রেসও নেই। সুতরাং কাল তার স্কুলে আসা হবে না। শুধু কাল কেন, যতদিন পর্যন্ত স্কুলড্রেসটি ঠিকমতো পরিষ্কার না করতে পারবে ততদিন সে স্কুলে আসতে পারবে না। স্কুলে না আসতে পারার সম্ভাবনায় সে আকুল হয়ে কাঁদছে।


প্রথম প্রথম আমি মনে করেছিলাম, বাহ বেশ মজাতো। স্কুল ড্রেসের জন্যে লাবনীর স্কুলে আসা হবে না। এতে তো তার ভালই হবে। কিন্তু সে কাঁদছে কেন? তারপর হঠাৎ করেই যেন আমি বুঝতে পারলাম বিষয়টা। অর্থনৈতিক কারণে তার কোন প্রাইভেট টিউটর নেই। বেশ কয়েকটা বইও তার নেই। স্কুলে এসে বান্ধবীদের কাছ থেকে সেই বই সংগ্রহ করে সেখান থেকে নোট করে নেয় সে। শিক্ষকদের পড়ানো গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনে। তারপর এই শোনা আর সংগ্রহকৃত নোট সে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়ে। স্কুলে না আসা হলে তার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে। এই কারণেই তার আকুল কান্না।


আজ লাবনী একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ। থাই এয়ারলাইন্সে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।মাসিক বেতন সত্তর হাজার টাকার কাছাকাছি। ঐরকম স্কুল ড্রেস সে এখন মাসে পঞ্চাশটা বানাতে পারে। সেটের পর সেট বই কিনতে পারে। তার এই উন্নতির পেছনে কোন কারণটি ছিল বলতে পার?


তার এই উন্নতির পেছনে যে কারণটি লুকিয়ে ছিল সেটা হলো তার একাগ্রতা। তার একনিষ্ঠতা। পড়াশোনার প্রতি তার গভীর মনোযোগ। আমার মনে আছে যখন সে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে- সেই সময় সারা ঢাকা শহরে যেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়েছিল লাবনী। খবরের কাগজে, রেডিওতে টেলিভিশনে তার ছবি সহ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। তার এই সাফল্যে আমাদের স্কুল যেন উৎসবে মুখরিত হয়ে উঠেছিল।


সুতরাং বড়ো লোক বা গরীব কোন বিষয় ছাত্রজীবনে নেই। তোমার মধ্যে যে লুক্কায়িত মেধা আছে- সেটাকে জাগ্রত করতে পারলেই পরীক্ষায় ভাল ফল লাভ করতে পারবে তুমি।


একটি অত্যন্ত ধারালো চাকু বা ছুরি কিছুদিন ব্যবহার না করলে সেটাতে মরচে ধরে যায়। কিন্তু যদি সেটাকে নিয়মিত ব্যবহার করা হতো তাহলে দেখা যেত সেটা ধারালো আর চকচকে হয়ে আছে। একটি ভোতা ছুরিকে ঘষলে বা যত্ন করলে সেটা সামান্য যত্নেই ধারালো হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং তোমার ব্রেনকে তীক্ষ্ণ আর বুদ্ধিসম্পন্ন করতে হলে তাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রতিনিয়ত সেটার পরিচর্যা করতে হবে। আর এই কাজের জন্যে তোমার প্রয়োজন, সঠিকভাবে ব্রেনের ব্যবহার। ছাত্রজীবন হচ্ছে তোমার সেই উপযুক্ত সময়। যে সময়টাতে তুমি তোমার এই ব্রেনকে কাজে লাগাতে পারো। ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সকালের আশায়।


পাঠ্য বইয়ের একটি বিষয় যদি তোমার কাছে কঠিন বলে মনে হয় কিংবা যদি সেই বিষয়টি তোমার কাছে দুর্বোধ্য লাগে- তবে হতাশ হবার কোন কারণ নেই। মাথা ঠান্ডা রেখে ধীরে সুস্থে সেটা বুঝতে চেষ্টা করো। দেখবে অনায়াসে সেটাকে তোমার মস্তিষ্ক গ্রহণকরছে। যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে তোমার কোন বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে পার।


যদি এটাও সম্ভব না হয় তাহলে তোমার ক্লাসের সেই বিষয়ের শিক্ষক বা শিক্ষিকার কাছে গিয়ে বিষয়টা বুঝিয়ে নিতে পার। আমার বিশ্বাস পৃথিবীতে এমন কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা নেই- যে তার ছাত্র বা ছাত্রীর কোন পড়ার ব্যাপারে অসহযোগিতা করে। কোন ছাত্র বা ছাত্রী পড়া বুঝিয়ে নিতে তার কাছে গেলে গভীর আনন্দের সাথেই সেই শিক্ষক বা শিক্ষিকা তাকে বুঝিয়ে দেবে।


তুমি যদি কোন বিষয় মুখস্ত করতে না পার। বা বিষয়টা তোমার মনে থাকছে না এমন কোন বিষয় ঘটে। তাহলে সেটা প্রথমে বুঝে নাও, তারপর মুখস্ত করো। এই প্রক্রিয়ায় যদি তোমার মুখস্ত নাও হয়- তাতেও কোন অসুবিধা নেই। বুঝে পড়ার কারণে বিষয়টার উপর ভিত্তি করে তুমি পরীক্ষার খাতায় কয়েক লাইন অন্তত লিখতে পারবে।


তুমি যদি ক্লাসে খুব খারাপ ছাত্র হও, তাহলে ক্লাসের সবচাইতে ভাল ছাত্রটির দিকে লক্ষ্য করো। তার ভাল গুনগুলোকে অনুসরণ করার চেষ্টা করো। অলৌকিক কোন উপায়ে সেই ছাত্রটি ভাল হয়নি। শুধু চেষ্টার জোরেই আজ সে ক্লাসের ফার্স্ট বয়। তুমি ইচ্ছে করলেই এই ফার্স্ট বয় হবার যোগ্যতা অর্জন করতে পার। এজন্যে চাই সঠিক নিয়ম মেনে লেখাপড়া করা। পড়াশোনার প্রতি গভীর মনোযোগী হওয়া। কঠোর পরিশ্রম করা। তুমি যদি পরীক্ষার খাতায় ভাল লেখ বা ভাল উত্তর দাও- তাহলে ঐ ফার্স্ট হওয়া ছাত্রকে ডিঙিয়ে যাওয়া তোমার জন্যে কঠিন কিছু নয়। এজন্যে তোমাকে সঠিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। ছাত্রজীবনের যুদ্ধে তোমাকে জিততে হবে এই মানসিকতা তোমার নিজের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। তাহলেই ঘটবে তোমার মেধার বিকাশ এবং প্রতিভার স্ফুরণ। পরীক্ষায় ভাল ফল লাভ তো তখন শুধু সময়ের ব্যাপার।


এই কাজটি তোমার হয়তো একদিনে হবে না। দিনে দিনে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে তোমাকে। একবারে না হলে কখনও হতাশ হবে না। হতাশা ছাত্রজীবনের সবচাইতে খারাপ দিক। হতাশ ছাত্র বা ছাত্রী কখনও ভাল ফল লাভ করতে পারে না। তুমি ভাল করে খোঁজ নিলে জানতে পারবে, পরীক্ষার মেধা তালিকায় যেসব ছাত্র বা ছাত্রী স্থানলাভ করে তারা কেউই হতাশাবাদী নয়। বরং পড়াশোনায় তারা সত্যিকারের মনোযোগী A+ এবং পরিশ্রমী। মানুষ হিসেবে তারা কেউই কিন্তু মেধা বা প্রতিভার দিক দিয়ে তোমার চেয়ে বেশি কিছু নয়। কিন্তু তারা নিজেদের মেধা বা প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পেরেছে- নিজের পরিশ্রম আর একাগ্রতার জোরে।


পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবান মহামনীষীদের জীবন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে দেখতে পাবে, এদের মধ্যে অনেকেই স্কুলজীবনের প্রথম দিকে খারাপ ছাত্র হিসেবে অবহেলার শিকার ছিল। কিন্তু এই খারাপ দিকটাকে তারা জয় করতে পেরেছেন। পৃথিবী বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেছেন, তাঁর আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়। বহু বছর ধরে তিনি যে চিন্তা করেছেন আর কঠোর পরিশ্রম করেছেন- তারই ফলশ্রুতিতে তিনি জটিল আর গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বসমূহ আবিষ্কার করতে পেরেছেন।


বিখ্যাত রসায়নবীদ বলে খ্যাত বিজ্ঞানী ডালটনের কথা হলো, তাঁর নিজের মধ্যে প্রতিভার কোন বালাই নেই। অথচ মানুষ তাকে প্রতিভাবান বলে। নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, একমাত্র কঠিন পরিশ্রম করা ছাড়া তার আর কোন গুন আছে বলে তিনি মনে করেন না।


সুতরাং বুঝতে পেরেছো তো, প্রতিভাবান বা মেধাবী হয়ে কেউ জন্ম নেয় না। প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্ক একই উপাদানে তৈরি। জন্মের পর থেকে একটি শিশু একই মস্তিষ্ক নিয়ে বড়ো হয়ে ওঠে। তুমিও তার ব্যতিক্রম নও। প্রতিভা বিকাশের জন্যে সোজা বা শর্টকার্ট কোন রাস্তা নেই। একটিই রাস্তা। সেটা হলো সঠিকপথে একাগ্রচিত্তে পরিশ্রম করা।


সুতরাং এখন তুমি যে অবস্থাতেই থাক না কেন, ছাত্রজীবনকে একটা উপযুক্ত যুদ্ধক্ষেত্র মনে করে এখনই ঝাপিয়ে পড়ো তোমার কলম আর কাগজ নামের অস্ত্র নিয়ে। গভীর একাগ্রতা আর একনিষ্ঠতা থাকলে সামান্য কিছুদিনের ভেতরই তোমার মধ্যে সঠিক মেধা বা প্রতিভার স্ফুরণ তুমি দেখতে পাবেই পাবে। 

আপনার পছন্দের আর দেখুন
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

Post a Comment

Assalamu Alaikum Wa Rahmatullah
Greetings!
Provide your feedback.