ডেঙ্গু - রূপবদলে ভয়

ডেঙ্গু - রূপবদলে ভয়, এডিস মশা, ডেঙ্গুর নামকরণ, ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত, ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত, বাংলাদেশে ডেঙ্গুজ্বর লক্ষণ ও করণীয় ওষুধ
Join Telegram for More Books
Table of Contents

 

ডেঙ্গু - রূপবদলে ভয়

(toc)

সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গি বা প্রচলিত ভাষায় ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে এবার অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিও এ ভাইরাস ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এমন পরিস্থিতি গত ২০ বছরেও দেখা যায়নি। মূলত, যারা আগে এক বা একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তারা ডেঙ্গু-৩ ও ডেঙ্গু-৪ এ আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি জটিল রূপ নিচ্ছে।



এডিস মশা

এডিস মশা প্রথমে ছিল আফ্রিকায়, সেখানে মশা বাস করত গাছের কোটরে, পাতার বোটা ও বাঁশের গোড়ার গর্তে। বৃষ্টি হলেই এসব জায়গায় জমে থাকা পানিতে মশা ডিম পাড়ে। প্রতিটি ডিম থেকে শত শত মশার জন্ম হতো। বর্ষাকাল এবং অতিরিক্ত আর্দ্র পরিবেশ এডিস মশার বংশ বৃদ্ধির জন্য খুবই উপযোগী। বৃষ্টির পানি শুকিয়ে যাওয়ার পরও ডিমগুলো অনেক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। আবার বৃষ্টির পানি পেলেই ডিম থেকে এডিস মশার জন্ম হয়। ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনকারীরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করলে এ মশাগুলো একসময় আফ্রিকা থেকে জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্রপথে আমেরিকা ও এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।


ডেঙ্গুর নামকরণ

৪২০ খ্রিষ্টাব্দে চীনাদের বর্ণনায় জানা যায়, এ ভাইরাস “উড়ভ কীট'-এর মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। কিন্তু ধারণা করা হয়, আফ্রিকার সোয়াহিলি ভাষার প্রবাদ 'কান্ডডিঙ্গা পেপো' থেকে 'ডেঙ্গু' নামটি এসেছে। ঐ শব্দের অর্থ শয়তানের শক্তির কাছে আটকে যাওয়ার মতো ব্যথা। কারও কারও ধারণা স্প্যানিশ ডেঙ্গু শব্দ থেকে এ রোগের নামকরণ করা হয়, যার অর্থ 'হাড়ভাঙা জ্বর'। আবার কোনো কোনো স্প্যানিশ এটিকে বলে 'ডিঙ্গা', যার অর্থ "যত্নশীল বা সতর্ক থাকা" । নেদারল্যান্ডসের এক ডেঙ্গু গবেষকের মতে, সোয়াহিলি ভাষার ডিঙ্গা শব্দটি স্প্যানিশ শব্দ ডেঙ্গু থেকে আসতে পারে, যার অর্থ 'সতর্ক থাকা'। অনেকের ধারণা ওয়েস্ট ইন্ডিজের গোলাম বা দাসরা এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকটা ত্যাড়াবাঁকা হয়ে হাঁটতো, তখন তাদের হাঁটার ভঙ্গিমা ডান্ডি নৌকার মতো বলে ডাকা হতো 'ডান্ডি ফিভার', সেখান থেকে ডেঙ্গু নামটি এসেছে। ১৮২৮ সালের পর ডেঙ্গুজ্বর শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়।


ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত

ডেঙ্গু ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চলে। ১৯৪৪ সালে ডক্টর আলবার্ট সাবিন ইউএস আর্মি কমিশনে ডেঙ্গু এবং সান্ডফ্লাইর ওপর কাজ করতে গিয়ে প্রথম ওষুধ ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত করেন । তিনি ডেঙ্গু-১ ও ডেঙ্গু-২ নামে দুটো সেরো টাইপ ভাইরাসকে শনাক্ত করেন। এরপর ১৯৫৬ সালে ডাক্তার হ্যাম ও তার সহকর্মী আরও দুটো নতুন ডেঙ্গু সেরো টাইপ ভাইরাস শনাক্ত করেন। যাদের নাম দেওয়া হয় ডেঙ্গু-৩ ও ডেঙ্গু-৪।


ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত

ডেঙ্গু একটি প্রাচীন রোগ। এ রোগের প্রথম উল্লেখ পাওয়া গেছে। চীনের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্রে। সেখান থেকে জানা যায় ১৯২ সালে চীনে যা পানি বিষ নামে পরিচিত, এমন প্রথম মহামারির ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়, ডেঙ্গুজ্বরের উপসর্গের সঙ্গে তার মিল আছে। সেখানে অবশ্য একে উড়ন্ত পোকামাকড়ের কারণে বিষাক্ত পানির রোগ বলে বর্ণনা করা হয়। তবে এ দাবি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ১৬৩৫ সালে ফ্রান্স, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ১৬৬৯ সালে পানামাতে যে মহামারির বিবরণ পাওয়া যায় তাও ডেঙ্গুজ্বর বলেই ধারণা করা হয়। ডেঙ্গু মহামারির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় ১৭৭৯ ও ১৭৮০ সালে, যখন মহামারির কবলে পড়েছিল এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মহামারি আকারে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৯৫০ সালের দিকে ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডে। আফ্রিকাতে প্রথম দেখা যায় ১৯৫২ সালে। পরবর্তীতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন- ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার এবং ইন্দোনেশিয়াতে এটি বিস্তার লাভ করে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, কোনো দেশে একবার ডেঙ্গুজ্বর দেখা দিলে সে দেশে দুই-তিন বছর অন্তর এটি দেখা দিতে থাকে।


বাংলাদেশে ডেঙ্গুজ্বর

১৯৬২ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডেঙ্গুজ্বর পরিলক্ষিত হয়। তখন বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগীর রক্ত পরীক্ষা করার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় জুরের প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হয়নি বলে একে বলা হয় 'ঢাকা ফিভার'। কিন্তু গত শতাব্দীর শেষভাগে হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেলে তা সবার নজরে আসে। এরপর ১৯৯৮ সালে কিছু কিছু রোগীর দেহে ডেঙ্গু ভাইরাস ধরা পড়ে। ১৯৯৯ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে রাজধানীর অনেক রোগীর দেহে ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া যায়, তবে ২০০০ সালে ব্যাপক আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়।


লক্ষণ ও করণীয়

ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ জ্বর। ১০১-১০৬ পর্যন্ত উঠতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে। ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবার আসতে পারে। সঙ্গে শরীর ও মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। ডেঙ্গু হলে প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। ডাবের পানি, লেবুর জুস ও স্যালাইন পান করতে হবে।


ওষুধ

ডেঙ্গুজ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ডাক্তারের পরামর্শক্রমে প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবেন। তবে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না।


WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now