Table of Contents
সহজ ইলমুছ্ ছীগাহ্ পিডিএফ
>সহজ ইলমুছ্ ছীগাহ্ (সংশোধিত নতুন সংস্করণ) মূল- এনায়েত আহমাদ, বঙ্গানুবাদ- মাওলানা মুহাম্মদ আবুল কালাম আযাদ
Sahaj Ilmus Sigah (Revised New Edition) Author- Enayet Ahmad, Banganubad- Maulana Muhammad Abul Kalam Azad
ইলমুছ ছরফ কিতাবের বিষয় পরিচিতিঃ
• تعريف সংজ্ঞ : صرف শব্দের আভিধানিক অর্থ ঘুরানো, ফিরানো, রূপান্তর করা, ব্যয় করা ইত্যাদি।
পরিভাষায় ইলমুছ ছরফ বলা হয়ঃ
عِلْمٌ يُبْحَثُ فِيهِ عَنْ صِيعَ الكَلِمَاتِ الْعَرَبِيَّةِ وَأَحْوَالِهَا مِنْ حَيْثُ الْوَزْنِ
অর্থাৎ যে ইলমের মধ্যে আরবী কালিমাসমূহ গঠন ও রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ইলমুছ ছরফ বলে।
• غَرْض উদ্দেশ্য: আরবী শব্দসমূহকে সহীহ শুদ্ধরূপে লিখতে পড়তে ও বলতে সক্ষম হওয়াই হল ইলমুছ ছরফের উদ্দেশ্য।
• موضوع আলোচ্য বিষয়ঃ আরবী শব্দাবলীই হল ইলমুচ্ছরফ এর আলোচ্য বিষয়।
ইলমুছ ছরফ এর পাঠ্য কিতাবঃ
• ফুছুলে আকবরী, ইলমুছ ছীগাহ, ইলমুছ ছরফ, পাঞ্জেগঞ্জ, মীযান ও মুনশাইব।
কিতাবের লিখক পরিচিতিঃ
জন্ম ও বংশ
ইলমুছ ছীগাহর সম্মানিত লেখক মুফতী এনায়েত আহমদ রহ. ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দ মুতাবেক ১২২৮ হিজরীর ৯ই শাওয়াল ভারতের বারাবাঙ্কী জিলার দেও নামক গ্রামে জন্ম লাভ করেন। তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতার নাম মুশী মুহাম্মদ বশ। দাদার নাম মুন্নী গোলাম মুহাম্মদ। তাঁর দাদার শ্বশুরালয় ছিল কাকুরীতে। পিতা মুশী মুহাম্মদ বশ এবং চাচা শায়েখ আব্দুল হাসীব মাতুলালয়ের সম্পর্কের ভিত্তিতে কাকুরীতে বসবাস করতে থাকেন। এরপর তাঁদের সমস্ত নিকটতম আত্মীয়-স্বজনও কাকুরীতে এসে বসবাস শুরু করেন। এ জন্য তাঁদেরকে কাকুরাবীও বলা হয়ে থাকে। এখনও তাঁদের বংশধরগণ সেখানে আছেন।
শিক্ষাজীবন
তিনি শিক্ষার প্রাথমিক পর্ব শৈশবে কাকুরীতেই সমাপ্ত করেন। এরপর তের বছর বয়সে জ্ঞানের পরিধি আরো বিস্তৃত করার জন্যে তিনি রামপুরে আসেন। এখানে এসে তিনি সাইয়েদ আহমদ বেরলবী রহ-এর কাছে নাহু, ছরফ তথা আরবী ব্যাকরণের উপর পড়াশোনা করেন। এখানকার শিক্ষা শেষ করে তিনি দিল্লীতে শাহ্ মুহাম্মদ ইসহাকু মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ- এর কাছে ধারাবাহিকভাবে হাদীস পড়াশোনা শুরু করেন এবং তাঁর কাছ থেকেই হাদীসের সনদ লাভ করেন। এখান থেকে তিনি আলীগড় যান। সেখানে মাওলানা বুযুর্গ আল মারহাবী রহ. - এর কাছে তাফসীর ও যুক্তি বিদ্যায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তাঁর কাছে তিনি প্রাচীন পদার্থ বিদ্যা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বুৎপত্তি অর্জন করেন।
কর্ম জীবন
মাওলানা বুযুর্গ আলী মারহাবী রহ. ছিলেন শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহ. ও শাহ রফীউদ্দীন দেহলভী রহ.-এর ছাত্র। তিনি আলীগড়ের জামে মসজিদ-মাদ্রাসায় দ্বীনী খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। ১২৬২ হিজরীতে তাঁর ইন্তেকালের পর মুফতী এনায়েত আহমদ ফারেগ হয়ে এখানেই মুদাররিস নিযুক্ত হন এবং এক বছর পর মুফতী পদে উন্নীত হন। ফতোয়া বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি তিনি ফারায়েজের শিক্ষাদানেও নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। এরপর তিনি বিচারক পদে উন্নীত হন। আদালতের এজলাসেও তিনি শিক্ষাদানে তৎপর থাকতেন। দু'বছর পর বেরলীতে স্থানান্তরিত হয়ে ছদরুল আমীন মর্যাদায় উন্নীত হন। বেরলীতে এসেও তিনি শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন। এর পাশাপাশি লেখালেখিও চালিয়ে যান।
এর চার বছর পর প্রধান বিচারপতি পদে নিযুক্ত করে তাকে আগ্রায় স্থানান্তরিত করা হয়। ইত্যবসরে ঐতিহাসিক ১৮৫৭ সালের (১২৭২ হিঃ) আযাদী আন্দোলন ও সিপাহী বিপ্লব শুরু হয়ে গেলে তিনি আগ্রায় রওয়ানা দিতে পারেন নি। ১৮৫৭ সালের ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে মুফতী এনায়েত আহমদ সাহেবকেও নেতৃত্ব দেবার অভিযোগে গ্রেফতার করা হলো। অন্যান্যদের মতো তাঁকে ও পাঠানো হলো আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে। সুদীর্ঘ চার বছর বন্দী জীবন কাটিয়ে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে (১২৭৭ হি.) তিনি মুক্তি পান। অতঃপর মুফতী সাহেব কানপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখানে ফয়যে আম' নামে এক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন যা কানপুরের প্রসিদ্ধ দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি এত ব্যস্ততা ও কষ্টের মধ্যেও বেশ কিছু অমূল্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যেঃ ইলমুল ফারায়েয খোলাছাতুল হিসাব ও তাসদীকুল মাসীহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শাহাদাত বরণ আন্দামান থেকে মুক্তি পাবার দু'বছর পর তিনি মাদ্রাসায়ে ফয়যে আমে মৌলভী সাইয়্যেদ হুসাইন শাহ্ বুখারী রহ.-কে মুদাররিসে আউয়াল এবং মৌলভী লুতফুল্লাহ সাহেব রহ.-কে মুদাররিসে ছানী নিযুক্ত করে পানির জাহাজে করে হজ্জে রওয়ানা হন। তিনি ছিলেন আমীরুল হুজ্জাজ। জেদ্দার কাছাকাছি পৌছে জাহাজটি এক পাহাড়ে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। মুফতী সাহেব তখন ইহরাম অবস্থায় নামাযরত ছিলেন এবং এ অবস্থাতেই তিনি ১২৭৯ হিজরীর ৭ ই শাওয়াল শাহাদাত বরণ করেন।
ইলমুছ ছীগাহ:
এ কিতাবখানি মুফতী সাহেবের অন্যতম রচনা। কিতাবখানি রচনা করা হয়েছে এক বৈরী পরিবেশে। মুফতী সাহেব এ কিতাব লেখার শুরুতেই লিখেছেন-' এ কিতাব বন্ধুবর হাফেয উযীর আলী সাহেবের অনুরোধে আন্দামান দ্বীপে লেখা হয়। এ কিতাব লেখার সময় এ বিষয়ের কোন কিতাব আমার কাছে ছিল না। অধম এ কিতাবখানি এমনভাবে লিখেছে যে, মীযান-মুনশাইব, পাঞ্জেগাঞ্জ, যুবদাহ ও ছরফেমীরের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায়।' এ কিতাবখানি রচনার সময় লেখকের কাছে কোন প্রকার সহায়কগ্রন্থ ছিলো না। তিনি তাঁর অসাধারণ স্মৃতিশক্তি দ্বারা এ মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। পরে দেশে ফিরে এসে দেখেন যে, অক্ষরে অক্ষরে তা সঠিক হয়েছে। কোথাও কোন প্রকার ভুল হয়নি। মুফতী মুহাম্মদ শফী সাহেব রহ. এর মতে দ্বীনি মাদরাসাসমূহে যতগুলো ছরফের কিতাব পড়ানো হয় তন্মধ্যে ইলমুছ ছীগাহ প্রকৃত অর্থেই পরিপূর্ণ।