আল্লামা কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী (রহ:) এর জীবনী - Biography of Allama Kazi Nurul Islam Hashemi (RA).

আল্লামা কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী (রহ:) এর জীবনী - Biography of Allama Kazi Nurul Islam Hashemi (RA).
Join Telegram for More Books
Table of Contents

জন্ম পরিচয়:

আল্লামা কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী ১৯২৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর রবিবার রাতে তৎকালীন পাঁচলাইশ থানাধীন কুলগাঁও গ্রামের হাশেমি বংশের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শাহ সূফী কাজী আহসানুজ্জামান হাশেমী (রা:) হাশেমি বংশের সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন এবং তার মা ছিলেন চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদের প্রাক্তন ইমাম ও খতিব আল্লামা সাফিউর রহমান হোসেন এর কন্যা। জানা যায় তাঁর পূর্বসূরীরা হলেন ইমাম হোসেন (রা:) এর বংশধর। তার পিতার চার পুরুষ মদীনা থেকে বাগদাদে পাড়ি জমান এবং ইমাম হাসান (রা:) এর সাথে দেখা করেন।


মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীরের সময়ে তারা প্রধান বিচারপতি হিসাবে দিল্লিতে এসেছিলেন। নবাব আমলে তারা ইসলাম খানের অনুরোধে কাজীর দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং ইসলাম প্রচারের দৃষ্টিতে আরও দূরে চট্টগ্রামে চলে আসেন। এখানে তাঁর দাদা মাওলানা কাজী আবদুর রহিম হাশেমী পাঁচলাইশ থানার বাকলিয়ার বাসিন্দা এবং হযরত খাজা সালেহ লাহোরি (রহ:) এর খলিফা মাওলানা সৈয়দ আবদুন্নবী (রা:) এর কন্যা বিবি শরীফা খাতুনকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর বাবা এবং মা উভয়ই এদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।


শৈশব এবং শিক্ষা:

আল্লামা কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী (রা:) শৈশবকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী এবং প্রতিভাবান ছিলেন। তিনি ছয় বছর বয়সে পবিত্র কুরআন মুখস্থ (খতম) করেছিলেন। তিনি বাবার নির্দেশে নিজের বাড়িতে উর্দু, ফারসি, আরবি এবং বাংলা ভাষা শিখেছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর তিনি বিখ্যাত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পড়াশুনায় তিনি খুব নিয়মিত ছিলেন।



তিনি সেখানে সমস্ত পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেছেন। ১৯৪৫ সালে তিনি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জামাতে পঞ্চম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রশংসাপত্র এবং স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৪৯ সালে জামাতে উল্লাহ সমাপ্ত করেন। তিনি তাঁর শিক্ষক আল্লামা মুসা মুজাদ্দেদী (র:) এর অধীনে আরবি ভাষার জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।


উচ্চশিক্ষা অর্জন:

জামাতে পাস করার পর আল্লামা হাশেমী এক বছর ওয়াজিদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতায় নিজেকে নিযুক্ত করেন। এ সময় তিনি কামিল ডিগ্রি অর্জনের জন্য উপমহাদেশের ইসলামী অধ্যয়নের মূল কেন্দ্র কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা সেই সময়ে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়েছিল। এসময় আল্লামা হাশেমী ঢাকা আসেন এবং ১৯৫১ সালে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় টাইটেল ক্লাসের অধীনে হাদীস বিভাগে ভর্তি হন। তিনি কৃতিত্বের সাথে হাদীস সম্পন্ন করেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দু বিষয়ে সন্ধ্যায় ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানো হয়েছিল এবং তিনিও এই কোর্সটি সম্পন্ন করেছেন।


তিনি বিখ্যাত আলেম আল্লামা মুফতী সৈয়দ আমিমুল এহসান মুজাদ্দেদী (রা:), যিনি বিখ্যাত ইসলামী বিদ্বান এবং আরবি ও উর্দু ভাষার বহু বিখ্যাত বইয়ের লেখকের সান্নিধ্যে পরিচিত হন। তিনি তাঁর পরিচালনায় গবেষণায় নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন এবং তার চৌর্যত্ব প্রমাণ করেছিলেন। সম্মানিত মুফতি তাকে নাইলুল মুরাম বি-আসানীদ আউস শাইখ নুরুল ইসলাম নামে একটি বিশেষ সনদ প্রদান করেছেন। এছাড়া তিনি বিখ্যাত আরবী লেখক আল্লামা আবদুর রহমান কাশগাঁরি (রাঃ) এর অধীনে পড়াশোনা করেছেন।


তাঁর শিক্ষকমন্ডিলী:

আল্লামা কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী বহু বিখ্যাত আলেমগণের কাছ থেকে জ্ঞান (ইলম) অর্জন করেছিলেন। তিনি আল্লামা মুফতি সৈয়দ আমিমুল এহসান মুজাদ্দেদী (রা:) এর অধীনে ইলমে হাদীস ও বোখারী শরীফ অংশ ২ অধ্যয়ন করেছেন। তিনি আল্লামা আবদুর রহমান কাশগারীর সাথে তাফসীরে কাশফ, আল্লামা হুযাতুল মুহাম্মদ শফি ফিরিঙ্গি মহল্লী (রা:) এর সাথে তাফসীরে বাইজাবি, আল্লামা আবদুস সাত্তার বিহারী (রা:), আবু দাউদ অংশ ২, আল্লামা আবদুস সাত্তার বিহারী (রা:), মুসলিম শরীফ অংশ ১ এবং তিরমিযির প্রথম অংশ মাওলানা মমতাজউদ্দিন (রাঃ) এর কাছে শিক্ষা অর্জন করেন।


তিনি সহিহ বোখারি অংশ ১ এর দুই তৃতীয়াংশ, নাসায়েই প্রথম অংশ এবং আল্লামা নাজির উদ্দিন কাটকি (রাঃ) এর সাথে সোরহে নুখবাতুল ফিকরে শিক্ষা লাভ করেন। বোখারির শেষ এক তৃতীয়াংশ আল্লামা জাফর আহমেদ ওসমানী (রা:) এর কাছে করা হয়েছিল। আল্লামা মাওলানা আজিজুর রহমান (রা:) শিক্ষা দিয়েছিলেন সল্লুমুল উলুম ও হেদায়া। আল্লামা মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ খানের সাথে তাফসীরে জালালাইন শরীফ ও মাসনবী শরীফ। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের নেতৃত্বে মুসলিম অংশ ২, নাসায়ী এবং তিরমিযী অংশ ২, আবু দাউদ অংশ ১, ইবনে মাজাহ, ইতকান ইত্যাদি সমাপ্ত করেন। তাঁর উর্দু শিক্ষক ছিলেন ডা: ইন্দালিব শাদানী।


পেশাদার জীবন এবং বক্তৃতা:

ঢাকা থেকে ফিরে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিখ্যাত ইসলাম শিক্ষাদান কেন্দ্র চট্টগ্রাম ওয়াজিদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি মাদ্রাসায় গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম হিসাবে জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি পটিয়ার শাহচাঁদ আউলিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় হাদীস পড়াতেন, ষোলোশহরে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসায়, হাটহাজারীতে ওদুদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায়ও শিক্ষকতা করেন।


তিনি ১৯৬৪ সালে তার নিজের জমিতে একটি ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র এবং একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এবং পরিচালক উভয়ই হিসাবে কাজ করেছিলেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলাম শিক্ষার উপর ইসলামী বক্তৃতা দেন এবং আধ্যাত্মিক সাধক (পীর) এর দায়িত্ব পালন করেন। ভক্তরা তাঁর বক্তৃতাগুলিতে খুব আকৃষ্ট হন এবং ধর্মীয় অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে পেরে সন্তুষ্ট হন। বিদ্বান এবং সাধারণ মানুষ উভয়ই তাঁর বক্তৃতাগুলিকে একইভাবে দরকারী বলে মনে করেন। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাত-টালি বাজার শাহী জামে মসজিদের অবৈতনিক খতিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।



উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থীগণ:

একজন শিক্ষক হিসাবে আল্লামা কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী (রা:) অনেক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করেছেন তার সঠিক চিত্রটি গণনা করা খুব কঠিন। বর্তমানে বেশিরভাগ বিখ্যাত বিদ্বান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং পীর একসময় তাঁর শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন-


(১) শেরে মিল্লাত আল্লামা ওবায়েদুল হক নাঈমী (রা:) শায়খুল হাদিস, জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম ।

(২) আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, সিপাতলী আলিয়া মাদ্রাসা।

(৩) আল্লামা মুফতি ইনামুল হক, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, ওয়াজিদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা।

(৪) আল্লামা মুহাম্মদ নুরুল মুনাওয়ার, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, গহিরা আলিয়া মাদ্রাসা।

(৫) আল্লামা মুফতি আহমেদ নাজির, মুহাদ্দিস, আহসানুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা।

(৬) আল্লামা আবদুস সাত্তার আনোয়ারী, অধ্যক্ষ, ওয়াজিদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা।

(৭) আল্লামা মুহাম্মদ আবদুর রব চিশতী, পীর, বদরপুর দরবার শরীফ, ঢাকা।

(৮) আল্লামা জাফর আহমেদ সিদ্দিকী (রা:), প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, বুড়িশোর জিয়াউল উলুম মাদ্রাসা।

(৯) আল্লামা মুফতি কাজী মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম হাশেমী (রা:)।

(১০) আল্লামা বজলুর রহিম হাশেমী (রা:)

(১১) আল্লামা খায়রুল বাশার হক্কানি, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, আশেকানে আউলিয়া মাদ্রাসা।

(১২) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিউর রহমান আল্-ক্বাদেরী, অধ্যক্ষ, জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা।

(১৩) মাওলানা সালাহ উদ্দিন ইমামি, প্রিন্সিপাল, মীরসারাই লতিফিয়া আলিয়া মাদ্রাসা।

(১৪) মুহাম্মদ মারজাম হোসেন চৌধুরী, সহ-অধ্যক্ষ, সিপাতলী গাউসিয়া মইনিয়া মাদরাসা।

(১৫) মাওলানা মুহাম্মদ খায়রুল্লাহ, সহ-অধ্যক্ষ, পটিয়া শাহচাঁদ আউলিয়া আলিয়া মাদ্রাসা।


(১৬) আল্লামা মইনউদ্দিন আহমেদ (রা:) প্রাক্তন অধ্যক্ষ, নানুপুর গাউসিয়া মাদ্রাসা।

(১৭) মাওলানা শামসুল আলম হেলালী (রা:)

(১৮) মাওলানা সৈয়দ আবুল বাহার, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, কতিরহাট মাদ্রাসা।

(১৯) মরহুম মুফতি মাওলানা আবুল মহসেন, প্রাক্তন মুহাদ্দেস, গহিরা আলিয়া মাদ্রাসা।

(২০) মাওলানা মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান আলী শাহ, গদ্দিনাশীন পীর, ইউনিয়া বেতাগী দরবার শরীফ, রাঙ্গা।

(২১) মাওলানা মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ, গদ্দিনাশীন পীর, মির্জাখিল দরবার শরীফ, সাতকানিয়া।

(২২) মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ আবদুস সালাম, প্রিন্সিপাল, কালাপুল ওহিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা।

(২৩) মাওলানা শামসুল আলম চৌধুরী, অধ্যক্ষ, আলমশাহ পাড়া আলিয়া মাদ্রাসা।

(২৪) মাওলানা মুহাম্মদ সফিকুল আনোয়ার, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, মির্জাপুর মোমেনিয়া মাদ্রাসা।

(২৫) মাওলানা মুহাম্মদ হারিসুর রহমান, প্রিন্সিপাল, কুমিল্লা নাঙ্গোলকোট সিনিয়র মাদ্রাসা।

(২৬) মাওলানা হাফেজ আবদুল হায়াত, প্রিন্সিপাল, নাঙ্গোলমোরার সিনিয়র মাদ্রাসা।

(২৭) মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ হোসেন, অধ্যক্ষ, হাটহাজারী ওদুদিয়া মাদ্রাসা।

(২৮) মাওলানা আবুল বাশার (প্রধান) আনোয়ারা সুন্নাপাড়া মেমোরিয়াল মারিরুল ইসলাম সিনিয়র মাদ্রাসা।

(২৯) মাওলানা আবদুর রশিদ, অধ্যক্ষ, পটিয়া সিরমাই সিনিয়র মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।


প্রকাশনা:

যদিও তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকতা, বক্তৃতা এবং ফতুয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যস্ত জীবনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে তিনি এত ব্যস্ততার মধ্যেও বহু বই লিখেছেন। তাঁর কয়েকটি বই হ’ল: (১) নসিহাতুত তালিবিন (২) যাদুল মুসলিমিন (৩) আকাঈদ-ই-বাতিল (৪) সত্যের আহবান (৫) আদদুররুদ দালায়িল বেকেরাহতিল জামাতি ফিন নওয়াফিল (৬) আল আরবাইন ফি মুহিম্মাতিদ দ্বীনি (৭) মিরাজুল মুমিনিন (৮) মুসালমানদের সম্বল পরহেজগারদের দিশারী (৯) ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেনো? (১০) নুরে মোস্তফা (১১) আল্লামা এহসানুজ্জামান হাশেমী (র:) এর জীবনী গ্রন্থ (১২) শাজরাতুজ জাহাব (১৩) দোয়ার ভান্ডার (১৪) তাজকেরাতুল কেরাম (১৫) ওয়াজিফায়ে হাশেমীয়া।



সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক জীবন:

আল্লামা কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী (রা:) সুন্নি আর্দশের উপর ভিত্তি করে একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে এমন একটি সংস্থা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সেনা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতকে শক্তিশালী করতে তিনি সারা জীবন কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, আহলে সুন্নাত সম্মেলনের প্রধান উপদেষ্টা, জাতীয় ঈদে মীলাদুন্নবী পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ইসলামের প্রচার ও বিকাশের জন্য সমানভাবে সক্রিয় ছিলেন।


সমাজ সংস্কারক:

সমাজ সংস্কারক হিসাবে তিনি অনেক কিছু করেছেন। তিনি সর্বদা ইসলামের শিক্ষা এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রচার করতেন। বিশেষত, তিনি দেশের এই অঞ্চলের যুবকদের বিপথগামী হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে এবং তাদেরকে সত্য ও ন্যায়বিচারের পথে চালিত করতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি সারা বছর বক্তৃতা দেন, হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলোকিত জীবন ও অসংখ্য কর্মকাণ্ডকে সমুন্নত রাখতে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাতে সেমিনার আয়োজন করেন।


ফলস্বরূপ এটি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যে দেশের এই অংশের মানুষ দ্বীনিয়াত সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখে এবং তাদের বিশ্বাস (ইমাম) এর প্রতি মজবুত থাকে। এটি উল্লেখ করার মতো বিষয়, তিনি স্থানীয় জনগণের সাথে বত-টালি বাজারের আশে পাশে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড উৎসাহিত করেছিলেন। পরিবর্তে, তার তত্ত্বাবধানে দশম মহররমে কারবালার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য একটি প্রধান মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।


তিনি মাজার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং খন্দাকিয়া অঞ্চলের জামাদার পাড়া এবং বদমতলীতে দুটি ভুয়া মাজারকে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন।

তিনি সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি আনতে আঞ্জুমান মুহিব্বান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাউছিয়া জিলানী কমিটি গঠন করেন। এই ক্রিয়াকলাপের সাথে জড়িত যুবকরা অসামাজিক কাজ থেকে দূরে থাকে এবং তারা সত্যের পথে আকৃষ্ট হয়।



সফর:

আল্লামা কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী নিজের দেশে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি সুন্নাত প্রতিষ্ঠার জন্য বহু দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি হজ্ব আটবার এবং ওমরাহ একবার করেছেন। ১৯৮৯ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সৌদি আরব ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি তার বক্তৃতার মাধ্যমে আমিরাতের ওহাবী বংশকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন।


তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি সুন্নি মণ্ডলীতে খোলামেলা বক্তৃতা দিয়েছেন। এর আগে কেউ এই অঞ্চলে বক্তৃতা দেওয়ার সাহস পায়নি। এরপরে তিনি আরব আমিরাত সফরে এসে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশী এবং পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের দ্বারা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সেখানে সুন্নি সম্প্রদায়ের আমন্ত্রণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্য পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সেমিনারে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, এবং কয়েকটি সংবাদপত্র তাঁর সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন অমুসলিম তাঁর বক্তৃতায় বিশ্বাসী হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।


তিনি হযরত আলী (রাঃ), হযরত গাউছ পাক আবদুল কাদের জিলানী (রা:) মাজার, কমপক্ষে ২৫জন নবী (আ:) এবং ইরাকের অনেক আউলিয়া কেরামগণের মাজার শরীফ জিয়ারত করেছেন। তিনি হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (রা:) মাজার এবং ভারতে আরও অনেক মাজার ও ইসলামী স্থান পরিদর্শন করেছিলেন।


খেলাফত বা এজাজাত প্রাপ্ত:

তিনি তাঁর পিতা হযরত মাওলানা কাজী মোহাম্মদ আহসানুজ্জামান হাশেমী (রা:) এর কাছ থেকে খেলাফত অর্জন করেছিলেন (যিনি হজরত মাওলানা আবদুন নবী (রা:) এবং হযরত মাওলানা শাহ সালেহ লাহুরী (রা:) এর নিকট হতে খেলাফত প্রাপ্ত হন। তিনি হযরত শাহ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর পীর মুর্শিদও ছিলেন।


এছাড়াও, ফুরফুরা দরবার শরীফের পীর হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী আল্লামা হাশেমী (রা:) এর পিতাকে খেলাফত ও এজাজাত দান করেছিলেন। পরবর্তীতে, ফুরফুরা দরবার শরীফের পীরের বড় ছেলে আল্লামা হাশেমী (রা:) এর বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং খেলাফত দান করেন। এটি বলা হয়েছে যে, ইমাম-ই-আহলে সুন্নাত এবং গাজী-ই-দ্বীন-মিল্লাত হযরত আল্লামা শাহ সাইয়্যিদ আজিজুল হক আল কাদেরী শেরে-ই-বাংলা (রা:) আল্লামা হাশেমী (রা:) কেও ইজাযাত দান করেছিলেন। আরও বলা হয় যে, হযরত শেরে-ই-বাংলা (রা:) হযরত আল্লামা সাইয়্যেদ আবদুল হামিদ বাগদাদী আফিদি আজহারী (রা:) এর কাছ থেকে খেলাফত ও এজাজাত লাভ করেছিলেন।



আল্লামা কাজী নুরুল ইসলাম হাশেমী (রা:) যখন ১৯৯৫ সালে হজ পালনের জন্য সৌদি আরব সফর করেন, তখন তিনি প্রখ্যাত পীর হযরত আল্লামা সাইয়্যেদ মোহাম্মদ ইবনে সাইয়্যেদ আলভী মালেকী (রা:) কর্তৃক কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া, মুজাদ্দেদিয়া তরীকায় খেলাফত ও এজাজাত প্রদান করেছিলেন। এছাড়াও হযরত আল্লামা হাশেমী (রা:) হযরত মাওলানা পীর জামেন নেজামি সৈয়দ বোখারী (রা:) এর কাছ থেকে বায়াত খেলাফত ও এজাজাত লাভ করেছেন, যারা আল্লামা হাশেমীকে সিরাজুল ওলামার উপাধিও দিয়েছিলেন।


সর্বশেষে হযরত আল্লামা হাশেমীকে খেলাফত ও এজাজাত দান করেছিলেন আল্লামা শাহ শফিউর রহমান হাশেমী (রা:), সাইয়্যেদুল ওলামা ওয়াল মুহাদ্দেসিন হযরত আল্লামা মুফতি সৈয়দ মোঃ আমিমুল এহসান মুজাদ্দেদী (রা:) এবং প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা সৈয়দ আবেদ শাহ মুজাদ্দেদী (রা:), হযরত মাওলানা ইয়াহিয়া মুজাদ্দেদী (রা:) সহ আরব বিশ্বের অন্যান্য সাধুগণ আল্লামা হাশেমী (রা:) কে খেলাফত ও এজাজাত দান করেছিলেন।


ওফাত ও দাফন শরীফ:

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, ওস্তাজুল ওলামা, ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী (রা:) মঙ্গলবার (২ জুন, ২০২০) ভোর ৫টার দিকে মহান আল্লাহর ডাকে সারা দিয়ে এই পৃথিবী হতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নামাজে জানাযা শেষে চট্টগ্রাম হাশেমীয়া দরবার শরীফে এই মহান গুণী ব্যাক্তিকে দাফন করা হয়।


WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now