বহুমুখী ফিৎনার যুগে এক আদর্শ মুর্শিদ, অব্যর্থ দূরদর্শী ওলী-ই কামিল হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ | Biography of Allama Syed Muhammad Tayyab Shah (Ra.)

বহুমুখী ফিৎনার যুগে এক আদর্শ মুর্শিদ, অব্যর্থ দূরদর্শী ওলী-ই কামিল হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ | Biography of Allama Syed Muhammad Tayy
Join Telegram for More Books
Table of Contents


যুগ পরম্পরায় হিদায়তের পাশাপাশি ফিৎনা তথা গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতার অপতৎপরতাও যে চলে আসছে- তা একটি অনস্বীকার্য ব্যাপার। আল্লাহ্ তা‘আলার অশেষ মেহেরবাণীতে প্রতিটি যুগে তিনি গোমরাহীর মূলোৎপাটন করে তদস্থলে হিদায়তকে প্রতিষ্ঠার জন্য নবী ও রসূলগণের শুভাগমনের ধারা শেষ যমানার নবী আমাদের আক্বা ও মাওলা হুযূর-ই আক্রাম হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছেন। আল্লাহ্র সর্বশেষ নবী হুযূর-ই আক্রাম-এর মাধ্যমে নবী-রসূল তাশরীফ আনয়নের ধারা সমাপ্ত হলেও মানুষের হিদায়ত ও মাখলুকাতের উপকারের নিমিত্তে আউলিয়া-ই কেরামের সিলসিলা বা পরম্পরা জারী রেখেছেন। নবী-ই আক্রামের নায়েব বা প্রতিনিধি হিসেবে কামিল ওলীগণ ও হক্বক্বানী-রব্বানী ওলামা-ই কেরাম আপন আপন যুগের যাবতীয় পথভ্রষ্টতাকে চিহ্ণিত করে, মানুষকে সেগুলো থেকে বিরত রেখে হিদায়তের সঠিক রাস্তা বাতলিয়ে দেন এবং বিভিন্নভাবে মানুষকে এ হিদায়তের পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন। এমনই সত্যিকার অর্থে নায়েবে রসূল ও কামিল মুর্শিদ হিসেবে পীরে কামিল, রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীক্বত হযরতুল আল্লামা হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রাখার মতোই। তাঁর পবিত্র হাতে বায়‘আত হয়ে কিংবা তাঁর অমূল্য নসীহত অনুসারে আমল করে এবং তাঁর অসাধারণ অবদানগুলোকে মনেপ্রাণে সার্বিকভাবে উপকারী হিসেবে গ্রহণ করে অগণিত মানুষ আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রিয়ভাজন হয়েছেন ও হয়ে আসছেন। এ সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে হুযুর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহ্র আদর্শ জীবন এবং তাঁর অসাধারণ বেলায়ত ও যুগোপযোগী অবদানগুলো থেকে কিছুটা আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি-

বংশীয় মর্যাদা

হুযুর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ হুযুর-ই আক্রামের ৩৯ তম বংশধর। নবী-ই আক্রামের আদর্শ নবী-ই আক্রামের প্রকৃত বংশধরই বেশী প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করবেন-এটা স্বাভাবিক। হুযুর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহ ১৩৩৬ হিজরি/১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের উত্তম-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের হাজারা জিলার সিরিকোট, শেতালু শরীফে প্রসিদ্ধ ওলী হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি আলায়হির রাহমাহ্র পবিত্র ঔরশে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত সিরিকোটি আলায়হির রাহমাহ্ রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ৩৮তম বংশধর। তাঁরা বংশীয়ভাবে হোসাঈনী সৈয়্যদ। উল্লেখ্য, ইমাম হোসাঈন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বংশধরগণ ইসলাম প্রচারের নিমিত্তে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েন। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ গেসূ দরায ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাগদাদের আউস নগরী থেকে সুদূর আফগানিস্তান সফর করেন। তিনি ৪২১ হিজরীতে আফগানিস্তানের কোহে সোলায়মানীতে ইনতিকাল করেন এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর সুযোগ্য পুত্র ওলী-ই কামিল হযরত সাইয়্যেদ মাস‘ঊদ মাশওয়ানী আলায়হির রাহমাহর একজন বংশধর হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ গফূর শাহ্ ওরফে কাফূর শাহ্ পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তান থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানে আসেন এবং সিরিকোট শরীফে বসবাস করতে থাকেন। তাঁকে ইতিহাসে ‘ফাতেহে সিরিকোট’ (সিরিকোট বিজয়ী) বলে আখ্যা দেওয়া হয়। তাঁরই এক বুযুর্গ বংশধর সৈয়্যদ খানী যমান শাহ্, তাঁর সুযোগ্য সাহেবযাদা সৈয়্যদ সদর শাহ্ (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি)। হযরত সৈয়্যদ সদর শাহর সুযোগ্য সাহিবযাদা হলেন হযরত শাহানশাহে সিরিকোট সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ আলায়হির রাহমাহ্।

শাহানশাহে সিরিকোট নিজেও একজন বিজ্ঞ আলিম ও প্রসিদ্ধ ওলী ছিলেন। তাঁর বুযুর্গ মুর্শিদ হলেন উলূমে লাদুন্নিয়ার ধারক-বাহক হযরত আবদুর রহমান চৌহরভী আলায়হির রাহমাহ্। তিনি যাহেরী কোন ওস্তাদের নিকট লেখাপড়া না করলেও তাঁর ছিলো খোদা প্রদত্ত ইল্মে লাদুন্নী। তিনি বিশাল ত্রিশপারা সম্বলিত মাজমু‘আ-ই সালাওয়াতে রসূলসহ কতিপয় প্রামাণ্য ও হতবাককারী গ্রন্থপুস্তক রচনা করে যান।

সুতরাং তাঁদের একান্ত ও প্রিয়ভাজন হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহ্ হলেন তাঁদের সুযোগ্য উত্তরসূরী ও খলীফা।


শিক্ষাগত উচ্চ মর্যাদা

সুযোগ্য মুর্শিদ ও ওলী-ই কামিলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- প্রয়োজনীয় দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহর মধ্যেও এ বৈশিষ্ট্য যথার্থভাবে শোভা পায়। তিনি দ্বীনী শিক্ষায় যুগশ্রেষ্ঠ ছিলেন।

তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছেন আপন আব্বাজান যুগ শ্রেষ্ঠ আলিম-হাফেয হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি আলায়হির রাহমাহর নিকট থেকে। তিনি অতি অল্প বয়সে পবিত্র ক্বোরআনের সুদক্ষ হাফেয ও ক্বারী হয়েছেন। তাঁর মহান আব্বাজান হযরত শাহানশাহে সিরিকোট যখন দ্বীন ও মাযহাবের প্রচারের খাতিরে দেশের বাইরে সফরে ব্যস্ত হয়ে যান, তখন হুযূর কেবলা তৈয়্যব শাহ্ হযরত খাজা চৌহরভী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হরিপুর রহমানিয়া ইসলামিয়া মাদরাসা থেকে হাদীস, ফিক্বহ্ ও তাফসীরসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর সনদ লাভ করেন। প্রখর মেধার অধিকারী হুযূর ক্বেবলা পরবর্তীতে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ওস্তাদ আল্লামা সরদার আহমদ লায়েলপুরী আলায়হির রাহমাহ্র সান্নিধ্যে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যুৎপত্তি ও পান্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি ২৭ বছর বয়সে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে দ্বীনী শিক্ষার শেষবর্ষ সনদ লাভ করেন এবং যাহেরী শিক্ষা গ্রহণ পর্ব সমাপ্ত করেন।

এ মুহাদ্দিসে লায়েলপুরী আলায়হির রাহমাহর সাথে হুযূর-ই কেবলার রূহানী সম্পর্কও ছিলো। এ যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও বুযুর্গ তাঁর মাদরাসার হাদীস বিভাগের ছাত্রদের দস্তারবন্দি হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহর মাধ্যমে করাতেন।


বেলায়তের উচ্চাসন লাভ

বেলায়ত লাভের তিনটি উপায় সবিশেষ প্রসিদ্ধ: ১. মাদারযাদ ওলী, ২. কোন আল্লাহ-ওয়ালা বুযুর্গের কৃপাদৃষ্টি এবং ৩. রিয়াযত ও ইবাদত-বন্দেগী। আলহামদুলিল্লাহ্, হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহর মধ্যে এর প্রত্যেকটা সৌভাগ্যের ঝলক ছিলো। যেমন-

১. হুযূর ক্বেবলা তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহর জন্মের পূর্বেই হযরত খাজা চৌহরভী আলায়হির রাহমাহ তাঁর শুভ জন্মের সুসংবাদ দিয়েছেন। বর্ণিত আছে যে, হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহর শুভ জন্মের কিছুদিন পূর্বে হযরত চৌহরভী আলায়হির রাহমাহ্ তাঁর প্রধান খলীফা হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি আলায়হির রাহমাহর শাহাদাত আঙ্গুল ধরে নিজের পিঠ মুবারকে মেরুদন্ডের মাঝামাঝি স্থানে ঘষতে ঘষতে বললেন, ‘‘ইয়ে পাক চীয্ তোম লে লো।’’ (এ পবিত্র জিনিস তুমি নিয়ে নাও)। পাক উর্দু কিংবা ফার্সী শব্দ। আরবীতে এর প্রতিশব্দ হয় طَيّب (তৈয়্যব)। যেমন পবিত্র ক্বোরআনে আছে- وَالْبَلَدُ الطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُه بِاِذْنِ رَبِّه (পবিত্র শহরের উদ্ভিদ সেটার রবের অনুমতিক্রমে বের হয়। সূরা আ’রাফ: আয়াত-৫৮)

এটা ছিলো হুযূর ক্বেবলা তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহ্র শুভ জন্মের পূর্বাভাস। বাস্তবেও তাই হয়েছে- এরপর হুযূর ক্বেবলার শুভ জন্ম হয়, আর শাহানশাহে সিরিকোট তাঁর নাম রাখলেন- ‘সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’।

সুতরাং এটা যেমন হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহ্ ‘মাদারযাদ ওলী’ হবার প্রমাণ, তেমনি হুযূর ক্বেবলা শাহানশাহে সিরিকোটও বহুবার তাঁকে মাদারযাদওলী বলে সুসংবাদ দিয়েছেন।

২. শৈশব থেকেই হুযূর ক্বেবলা তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহ থেকে ওলী সুলভ কারামাতও প্রকাশ পেতে থাকে। যেমন- তাঁর জন্মের ছয়/সাত মাস পর বরকতের জন্য তাঁকে শিরণী খাওয়ানোর জন্য হযরত খাজা চৌহরভী সিরিকোট শরীফে তাশরীফ আনলেন। গরম শিরনী হাযির করা হলো। খাজা চৌহরভী বললেন, ‘‘তৈয়্যব তোম নেহীঁ খাতে তো হাম ভী নেহীঁ খায়েঙ্গে।’’ (তৈয়্যব, তুমি প্রথমে না খেলে আমরাও খাবো না)। এটা শুনতেই শিশু হুযূর ক্বেবলা ওই শিরনীর মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলেন এবং শিশুসুলভ ভঙ্গিতে শিরনী আহার করলেন। কিন্তু শিরনীর তাপ তাঁর হাতে ও মুখে লাগেনি। এটা দেখে হযরত খাজা চৌহরভী হেসে ফেললেন। আর হযরত শাহানশাহে সিরিকোট আশ্চর্যান্বিত ও খুশী হলেন।

৩. হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্র বয়স যখন দু’ বছর, তখন তাঁর আম্মাজান তাঁকে নিয়ে হযরত খাজা চৌহরভী আলায়হির রাহমাহর দরবারে গেলেন। হুযূর ক্বেবলা শিশু সুলভ আচরণে মহীয়সী আম্মাজানের দুধ পান করতে চাইলেন। এটা দেখে হযরত খাজা চৌহরভী বললেন, ‘‘তৈয়্যব তোম বড়ে হো গায়ে, দুধ মত পিও।’’ (তৈয়্যব, তুমি এখন বড় হয়েছো, আর মায়ের দুধ পান করোনা!) এটা শুনামাত্রই তিনি শান্ত হয়ে গেলেন। এরপর থেকে তিনি আর কখনো মায়ের দুধ পান করেননি। তাঁর আম্মাজান, পরীক্ষাস্বরূপ, দুধ পান করাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বাজী নে মানা’ কিয়া, দুধ নেহীঁ পিয়োঙ্গা’’ (দাদাজী নিষেধ করেছেন। দুধ আর পান করবোনা)।

৪. হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্র বয়স যখন ৫/৬ বছর, তখন তিনি একদিন পিতা হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (আলায়হির রাহমাহ)কে বললেন, ‘কেয়া নামায মে আপ আল্লাহকো দেখতে হ্যায়? মুঝে ভী দেখনা হ্যায়। (নামাযে আপনি কি আল্লাহকে দেখেন, আমিও আল্লাহর দর্শন চাই।) এমন ছোট্ট শিশুর মুখে মা’রিফাতের এমন উঁচু পর্যায়ের কথা শুনে শাহানশাহে সিরিকোট আল্লাহর দরবারে তাঁর এ বাসনা পূরণ হবার জন্য দো‘আ করলেন।

৫. হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহর বয়স যখন ৭/৮ বছর, তখন শাহানশাহে সিরিকোট তাঁকে নিয়ে খাজা গরীব নাওয়ায (রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি)র দরবার শরীফ (আজমীর শরীফ)-এ গিয়েছিলেন। হুযূর ক্বেবলা তৈয়্যব শাহ্ মাযার শরীফের চত্বরে মনের খেয়ালে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন, হঠাৎ এক নূরানী চেহারার বুযুর্গ এসে তাঁকে খুব আদর ¯েœহ করে পাশে বসালেন এবং তাঁর জন্য বিশেষ দো‘আ করলেন। তখন শাহানশাহে সিরিকোট মু‘আল্লিমের ঘরে অবস্থান করছিলেন। পরে ঘটনাটা আব্বা হুযূরকে বললে তিনি বলেন, ‘‘বেটা ওয়হ্ তো খাজা থে।’’ (প্রিয় বৎস আমার! তিনি তো খাজা গরীব-নাওয়ায ছিলেন)

৬. হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্র প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলার খাস রহমত, রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বিশেষ কৃপাদৃষ্টি আর মহান ওলী হযরত খাজা চৌহরভী এবং হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি আলায়হিমার রাহমাহর যে খাস নজর ছিলো তা তো মধ্যাহ্ণ সূর্যের চেয়েও বেশী উজ্জ্বল। এতদ্সত্ত্বেও তিনি (হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্) অসাধারণ ইবাদত বন্দেগী এবং কঠোর-রিয়াযতের মাধ্যমে বেলায়তের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।


৭. আপন পিতা ও যুগশ্রেষ্ঠ ওলী হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটির খিলাফত লাভ

বিগত ১৯৫৮ ইংরেজিতে, ৪২ বছর বয়সে, হযরত শাহানশাহে সিরিকোট বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান) অবস্থানকালে হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহকে ‘খিলাফত’ দান করেন। এরই মাধ্যমে হুযূর ক্বেবলা আপন পিতা মহোদয় আলায়হির রাহমাহর সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে যাবতীয় দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন।

৮. এ মহান ওলীযাদা তাঁর উপর অর্পিত সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের সাথে সাথে তাঁর নির্ভুল দুরদর্শিতার বাস্তবায়ন স্বরূপ অগণিত ঈর্ষণীয় অবদান রেখে যান। এ সব অবদানের ফলে একদিকে দ্বীন ও মাযহাব অবর্ণনীয়ভাবে উপকৃত হয়, অন্যদিকে সর্বস্তরের সৃষ্টিও উপকৃত এবং ধন্য হয়েছে। যেমন- তাঁর বরকতময় হাতে সর্বজন স্বীকৃত হক্ব তরীক্বাহ্ সিলসিলাহ-ই আলিয়া ক্বাদেরিয়া সিরিকোটিয়ার প্রভূত উন্নতি ও প্রসার লাভ করে। অন্যদিকে ইসলামের সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা‘আতের সঠিক নমুনা ‘মসলকে আ’লা হযরত’-এর প্রতিষ্ঠা ও আশাতীত উন্নতি হয়।


হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহ তাঁর পিতা মহোদয় শাহানশাহে সিরিকোটের প্রতিষ্ঠিত ‘আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’-এর কেন্দ্র ও শাখাগুলোকে সমৃদ্ধতর করে তোলেন। শাহানশাহে সিরিকোটের নিজ বরকতময় হাতে প্রতিষ্ঠিত ‘জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা’কে ‘কিশতী-ই নূহ্’ (হযরত নূহ্ আলায়হিস্ সালাম-এর নৌযান) এবং ‘জান্নাত-নিশান’ (বেহেশত সদৃশ)-এর মর্যাদা দান করেন। বিশ্বের বৃহত্তর সুন্নী ঐক্যের প্রতীক ঐতিহাসিক ‘জশনে জুলূসে ঈদে মীলাদুন্নবী’ (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রবর্তন করেন। উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম আধ্যাত্মিক সংগঠন ‘গাউসিয়া কমিটি’ প্রতিষ্ঠা করেন। আহলে সুন্নাতের মুখপত্র ও বাতিল ফির্ক্বার মৃত্যু বলে খ্যাত ‘মাসিক তরজুমান-ই আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা‘আত’ প্রতিষ্ঠা ও নিয়মিতভাবে প্রকাশের সুব্যবস্থা করেন। বিশ্বে দুরূদ শরীফের বিরলও বিশাল গ্রন্থ ‘মজমু‘আ-ই সালাওয়াত-ই রসূলে’র নতুন সংস্করণ প্রকাশ করান, পাকিস্তানের দক্ষ আলিম দ্বারা সেটার উর্দু অনুবাদের সূচনা করে যান, সেটা সরল বাংলায় অনুবাদ করারও সঠিক দিক নির্দেশনা দেন ও দো‘আ করে যান। ফলশ্রুতিতে সেটার বঙ্গানুবাদ এখন সমাপ্তির পথে এবং এ পর্যন্ত পনের পারার উচ্চারণসহ বঙ্গানুবাদ অতি সুন্দর অবয়বে প্রকাশিত হয়েছে। বাকী অনূদিত পারাগুলোর প্রকাশনাও অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া, ‘আওরাদ-ই কাদেরিয়া-ই রহমানিয়া’ সহ বহু উপকারী ও বরকতমন্ডিত কিতাবের প্রকাশনার সূচনা করে যান। উল্লেখ্য, আমাদের বর্তমান হুযূর ক্বেবলা ও হযরত পীরে বাঙ্গাল সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ হুযূরের বরকতমন্ডিত নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত ‘আনজুমান রিসার্চ সেন্টার’ এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটা অতি জরুরী গ্রন্থ-পুস্তক প্রণয়ন, অনুবাদ ও প্রকাশনার ব্যবস্থা করেছে। আর এ অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস আল্লাহ্ পাকের মেহেরবাণীতে অব্যাহত রয়েছে। এসব একান্ত জরুরী প্রকাশনার মধ্যে ‘গাউসিয়া তারবিয়াতী নেসাব’, ‘হুযূর ক্বেবলার নূরানী তাক্বরীর’, ‘ওযীফা-ই গাউসিয়া’ এবং ‘শানে রিসালত’ ইত্যাদি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।


‘জামেয়া’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হুযূর ক্বেবলা শাহানশাহে সিরিকোট আলায়হির রাহমাহ দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মাদরাসা’ প্রতিষ্ঠার সূচনা করে গেছেন। হুযূর ক্বেবলা তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহ্ ওই অতি জরুরী প্রয়াসকে অব্যাহত রাখেন। রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ‘জামেয়া ক্বাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া’, চন্দ্রঘোনায় তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া এবং হালিশহর তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ইত্যাদি তাঁরই চির অম্লাণ অবদান। উল্লেখ্য, ‘আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’ এখন সারা দেশে শতাধিক দ্বীনী মাদরাসার পরিচালনা কিংবা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। হুযূর ক্বেবলার বেলায়তী দৃষ্টিতে এ কথাও সুস্পষ্টভাবে উদ্ভাসিত হয়েছিলো যে, এদেশে একদিন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রণীত ও প্রবর্তিত নেসাব (পাঠ্য তালিকা) এ দেশে দক্ষ সুন্নী আলিম তৈরীর জন্য যথেষ্ট হবে না। তাই ‘দরসে নিযামী’ পাঠ্যক্রম চালু করার বিকল্প পথ থাকবেনা। সুতরাং তিনি কালুরঘাট এলাকায় প্রথমে একটি মসজিদের নিজ বরকতময় হাতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং সেটার পাশেই একটি ‘দরসে নিযামী’ পাঠ্যক্রমের মাদরাসা প্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশনা দিয়ে যান। আলহামদুলিল্লাহ্ গত তিন বছর পূর্বে সেখানে একটি সুন্দর মাদরাসা ভবনে ‘দরসে নিযামী’ চালু করা হয়েছে।


শরীয়তের পাশাপাশি তরীক্বত চর্চার জন্য খানক্বাহ্ প্রতিষ্ঠা

নামায ও তিলাওয়াত-ই ক্বোরআন ইত্যাদির সাথে সাথে তরীক্বতের আওরাদ, সবক্ব-আসবাক্ব, রূহানী উন্নতির জন্য বিভিন্ন রিয়াযত (সাধনা) ইত্যাদির জন্য উপযুক্ত স্থান হচ্ছে মসজিদ ও খানক্বাহ্। তাই শাহানশাহে সিরিকোট বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ এবং খানক্বাহ্ও প্রতিষ্ঠা করেন।

সিরিকোট শরীফে শাহানশাহে সিরিকোটের মাযার শরীফের পাশে মার্বেল ও লাল পাথর দিয়ে একটি মনোরম ও বিশাল আকারের জামে মসজিদ নির্মাণ করান। বার্মার রেঙ্গুনের তেঙ্গানজে এলাকায় সেগুণ কাঠের দ্বিতল বিশিষ্ট ‘খানক্বাহ্-ই কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া’ প্রতিষ্ঠা করান। বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বলুয়ারদিঘী পাড়স্থ ‘খানক্বাহ-ই ক্বাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া’ প্রতিষ্ঠিত হয়। হুযূর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহর নির্দেশে জামেয়া সংলগ্ন সুবিশাল ‘আলমগীর খানক্বাহ্’ শরীফ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তাছাড়া, হুযূর ক্বেবলার নাম সংযুক্ত করে অনেক জায়গায় মসজিদ, মাদরাসা ও খানক্বাহ্ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও হচ্ছে।


শাহানশাহে সিরিকোট ও তাঁর উত্তরসূরী হুযূর ক্বেবলাগণ ইলমে দ্বীন ও ওলামা-ই দ্বীনকে খুব ভালবাসতেন। হুযূর ক্বেবলার প্রসিদ্ধ বাণী ‘কাম করো, দ্বীনকো বাচাও, ইসলামকো বাচাও, সাচ্চা আলিম তৈয়্যার করো’ (কাজ করো দ্বীন-ই ইসলামকে বাঁচাও, সাচ্ছা আলিম তৈয়ার করো) যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেছেন এবং তা বাস্তবায়ন করতে তাকিদ দিতেন। এ কারণে, জামেয়া প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দেশ-বিদেশের সুদক্ষ সুন্নী ওলামা, অধ্যক্ষ, মুহাদ্দিস, মুফাসসিরের খবর নিয়ে জামেয়ায় তাঁদেরকে খিদমত করার সুযোগ করে দেন। তাঁদের মধ্যে হযরতুল আল্লামা ওক্বার উদ্দীন রেযভী, হযরতুল আল্লামা নসরুল্লাহ্ খান আফগানী যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান থেকে এদেশে তাশরীফ এনে জামেয়ার শীর্ষপদে অধিষ্ঠিত হয়ে খিদমত আনজাম দেন। বাকী রইলো এদেশের বরেণ্য ওলামা-ই কেরামের কথা। বেশী দেরীর কথা নয়, অনেকের জানা বিষয় বলে সবার কথা পুনরায় উল্লেখ না করে শুধু ইমামে আহলে সুন্নাত, উস্তাযুল আসাতিযাহ্ হযরতুল আল্লামা কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী, মুহাক্বক্বিকে যামান হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ আবিদ শাহ্ মুজাদ্দেদী আলায়হিমার রাহমাহ্, মুহাদ্দিসকুল শিরমণি হযরতুল আল্লামা আবুল ফসীহ্ মুহাম্মদ ফোরকান আলায়হির রাহমাহ্ প্রমুখের কথা এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি। একসময় ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা হাশেমী আলায়হির রাহমাহ প্রত্যহ নিয়মিতভাবে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ একটানা পূর্ণ বোখারী শরীফের দরস দিয়েছিলেন। তাছাড়া, জামেয়ার ও আনজুমানের অতীত ও বর্তমান ইতিহাসে দেশের সুদক্ষ অধ্যক্ষ, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির ও আসাতিযাহ্-ই কেরামের নিয়োগ প্রদানকে প্রাধান্য দেয়ার কথা সর্বজন বিদিত। এ কারণে আজ দেশ-বিদেশে, অগণিত সাচ্ছা, দক্ষ সুন্নী ওলামা-ই কেরাম ইলম, দ্বীন ও আক্বাইদের বিশুদ্ধ খিদমত আনজাম দিচ্ছেন। সুন্নী অঙ্গনে লেখনী, ওয়াজ-বক্তৃতা, সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।


হুযূর ক্বেবলা শাহানশাহে সিরিকোটের তো অন্যতম অবদান ও বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি মুসলিম সমাজকে মসজিদ, মাদরাসা ও খানক্বাহমুখী করার সুন্দর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। সবাইকে জামেয়ার খিদমতকে প্রথম নম্বরে রাখার তাগিদ দিয়েছেন, বড় কোন মকসূদ পূরণ ও বিপদাপদ থেকে রক্ষার জন্য জামেয়ার জন্য মান্নত করার নির্দেশ দিয়েছেন। হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হ্ িরাহমাহ তো ‘জামেয়া’কে হযরত নূহ্ আলায়হিস্ সালাম-এর কিস্তির মতো এবং জান্নাত সদৃশ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বর্তমান হুযূর কেবলা হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ মুদ্দাযিল্লুহুল আলী জামেয়াকে যিন্দা বুযুর্গের মতো সম্বোধন করে সালাম দেন। কারো দ্বারা জামেয়ার কোনরূপ ক্ষতি হয়েছে মর্মে সংবাদ পেলে অশ্রু শরীফ বিসর্জন দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। এসব কারণে জাতি আজ তাঁদের নামে মসজিদ, মাদরাসা ও খানক্বাহ্ প্রতিষ্ঠা করে এবং তাঁদের এ সব আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সচেষ্ট হয়েছে।


হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ আলায়হির রাহমাহ তো যতবারই বাংলাদেশে তাশরীফ এনেছেন, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া (চট্টগ্রাম), জামেয়া কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া (ঢাকা) এবং আনজুমানের অধীনে পরিচালিত অনেক মাদরাসা স্বয়ং পরিদর্শন করতেন। আর ওইগুলো সুষ্টুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিতেন। বিশেষতঃ সুন্নী মতাদর্শের সুবিজ্ঞ ও বাতিলের মোকাবেলায় বিজয়ী ওলামা তৈরী হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে বিশেষ নজর দিতেন। প্রত্যেক ক্লাসে নিজে গিয়ে পাঠদান ও পাঠগ্রহণের অবস্থা দেখতেন এবং প্রয়োজনীয় নসীহত করতেন। ছাত্রদের মধ্যে আক্বীদা বিষয়ক তর্ক-মুনাযারার ব্যবস্থা করে সুন্নিয়াতের পক্ষের ছাত্রদের জ্ঞানগত ও তর্কগত নিপূণতা পরীক্ষা করতেন।


হুযূর ক্বেবলা শাহানশাহে সিরিকোট আলায়হির রাহমাহ্ এবং তাঁর বরকতমন্ডিত উত্তরসূরীদের এদেশে শুভাগমনের একমাত্র উদ্দেশ্য যে, ইসলামের সঠিক খিদমত আনজাম দেওয়া একথা আজ সর্বজন সুবিদিত। তাই তরীক্বতের প্রসার, মুরীদানের আত্মিক ও পার্থিব আচার-আচরণগত উন্নতি সাধনের ব্যাপারে হুযূর ক্বেবলাগণ সদা সচেতন ছিলেন ও আছেন। তাই আনজুমান, জামেয়া, গাউসিয়া কমিটি ইত্যাদিকে হুযূর ক্বেবলাগণের এদেশে শুভাগমন এবং এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মূল আদর্শ সম্পর্কে তাঁরা সব সময় সতর্ক করতেন ও করে থাকেন। তাঁদের শিক্ষা ও দীক্ষায় এ সত্যটি প্রস্ফুটিত হয় যে, মানুষের উভয় জাহানের সাফল্য লাভের একমাত্র উপায় হচ্ছে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে সন্তুষ্ট রাখা এবং আল্লাহ্ ও রসূলের প্রকৃত ইশক্ব ও মুহাব্বৎ মানুষকে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের একান্ত সান্নিধ্যে পৌঁছায়। আর এ মহান শিক্ষা ও দীক্ষা দিয়ে আসছেন ও যাচ্ছেন সত্যিকার অর্থের পীর-দরবেশ, ওলী-বুযুর্গ এবং হক্বক্বানী-রব্বানী সুন্নী ওলামা-ই কেরাম। আলহামদুলিল্লাহ্ শুধু উপমহাদেশ নয় বরং বিশ্বের সুন্নী মুসলমানদের জন্য যখন যা বেশী প্রয়োজন তার সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণে শাহানশাহে সিরিকোট ও তাঁর উত্তরসূরীদের আন্তরিকতা, সঠিক দিক নির্দেশনা এবং দো‘আ সবিশেষ লক্ষণীয়। পীরে বাঙ্গাল হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ দামাত বরকাতুহুমুল আলিয়ার দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য ও পদক্ষেপগুলোতেও এ সব বিষয় সুস্পষ্ট হয়েছে। ‘তারবিয়াতী নেসাব’সহ শরীয়ত ও তরীক্বতের নির্ভরযোগ্য লেখনী ও শিক্ষার আলোকে তৃণমূল পর্যায়ে দ্বীন ও মাযহাবের বাণী ও শিক্ষা পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য ‘দাওয়াত-ই খায়র’ কর্মসূচি বর্তমান হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্র সদয় অনুমোদন ও পীরে বাঙ্গাল সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মুদ্দাযিল্লুহুল আলী)-এর প্রবর্তন।

পরিশেষে, আসুন, উভয় জাহানের কামিয়াবী ও সার্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য শাহানশাহে সিরিকোট এর তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ এবং তাঁর সুযোগ্য উত্তরসুরীদের নূরানী কাফেলায় নিজেকে শামিল করি নিই। আল্লাহ্ তাওফীক্ব দিন। আমিন।

আপনার পছন্দের আর দেখুন
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

Post a Comment

Assalamu Alaikum Wa Rahmatullah
Greetings!
Provide your feedback.