Table of Contents
সহজ পান্দ নামা (ফার্সি-বংলা)
সহজ পান্দ নামা বই (ফার্সি-বাংলা) শায়খ ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রহঃ) | Sohoj Pand Nama Book (Persian-Bengali Pdf) Shaykh Farid Uddin Attar (Rah.)
শায়খ ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রঃ)এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
জন্ম: অলীকূল শিরোমণি হযরত শায়খ ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রঃ) ৫১৩ হিজরী সনের শা'বান মাসে বর্তমান নিশাপুর জেলার গাদকন নামক স্থানে জন্ম লাভ করেন। তখন সুলতান সঞ্জর (রঃ) এর শাসন আমল ছিল। তাঁহার পূর্ণ নাম মুহাম্মদ ইনে আবু বকর ইবরাহীম ইন্নে ইস্হাক। উপাধী ফরীদউদ্দীন, কুনিয়াত (উপনাম) আবু হামেদ ও আবু তালেব।
শিক্ষা জীবন: শৈশবে তিনি স্বীয় পিতার আতরের ব্যবসায় সহায়তা করিতেন। এই সময় তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রসহ প্রাথমিক প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিক্ষা লাভ করেন।
কর্মজীবন: প্রয়োজনীয় শিক্ষা লাভের পর তিনি পরিপূর্ণরূপে আতরের ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। সাথে সাথে চিকিৎসা কার্য ও ব্যাপকভাবে আঞ্জাম দিতেন। এই কারণে ফরীদ উদ্দীন আত্তার নামে খ্যাতি লাভ করেন।
কর্মজীবনে পরিবর্তন ও বিশেষ ঘটনা-
ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রঃ) একদা স্বীয় দোকানে আতর বিক্রয় করিতেছিলেন, এমতাবস্থায় একজন ভিক্ষুক আসিয়া বলিল, شينا لله (আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে কিছু ভিক্ষা দিন) এই ভাবে কয়েকবার ভিক্ষা চাওয়া সত্বে তিনি তাহার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করিলেন না। শেষ পর্যায়ে ভিক্ষুক লোকটি বলিল কি- আশ্চর্য মানুষ আপনি! জানিনা কোন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। তিনি তাহার উত্তরে বলিলেন- তোমার যে অবস্থায় মৃত্যু হয় আমারও সেই অবস্থায় মৃত্যু হইবে।
ইহা শুনিয়া লোকটি বলিল ঠিকতো? তুমি কি আমার মত মরিতে পারিবে? এই বলিয়া স্বীয় পেয়ালাটি এক পার্শ্বে রাখিয়া দিল এবং মাটিতে শুইয়া পড়িল। সাথে সাথে একবার উচ্চস্বরে “আল্লাহ” বলিয়া পরম প্রভুর সান্নিধ্যে গমন করিল।
ভিক্ষুকের এই দৃশ্য তাঁহার অন্তরে রেখাপাত করিল। সাথে সাথে অবস্থার পরিবর্তন হইয়া গেল। তৎক্ষনাৎ দোকান আল্লাহর রাহে দান করিয়াছিলেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিত্যাগ করিয়া প্রভুর সন্ধানে কঠোর ত্যাগ ও সাধনার পথ গ্রহণ করিলেন। যাহার পরিণতিতে ফরীদ উদ্দীন কালক্রমে ফরীদুদ দাহ্র "যুগের অদ্বিতীয়" হইয়া গেলেন।
কোন কোন আলিমের মতে আল্লামা রুমী (রঃ) প্রথমতঃ তাঁহার মুরীদ ছিলেন। শায়খ (রঃ) অত্র কিতাবে হে বৎস! হে প্রিয়! ইত্যাদি দ্বারা তাঁহাকে বিশেষ ভাবে সম্বোধন করিয়াছেন। আল্লামা রুমী (রঃ) স্বীয় শায়খ সম্বন্ধে মন্তব্য করিয়াছেন-
هفت شهر عشق را عطار دید * ما هنوز اندر خم یک کوچه ایم
অর্থাৎ : ইল্কের সপ্ত নগরী (সমগ্র জগত) কে আত্তার (রঃ) অবলোকন করিয়াছেন। আমরা এখনো পর্যন্ত মা'রেফতের এক গলির প্যাচের মধ্যে পড়িয়া
আছি।"
শায়খ আত্তারের পরে তিনি শায়খ মুহাম্মদ বাগদাদী ও আল্লামা শামছে তাবরীযি (রঃ) এর হস্তে বয়আ'ত গ্রহণ করেন। যাহার ফলশ্রুতিতে মা'রেফাত জগতের বাদশাহে পরিণত হইয়াছেন।
আল্লামা রুমী (রঃ) বলেন-হযরত মনছুর হুসাইন ইবনে হাল্লায (রঃ) এর রূহ তাহার ইন্তিকালের দেড়শত বৎসর পরে হযরত ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রঃ) এর রূহের উপর তাজাল্লী করিয়াছিলেন এবং রূহানীভাবে তাহাকে প্রতিপালন করিয়া মা'রিফাতের শীর্ষ শিখরে আরোহণ করাইয়ছিলেন।
আল্লামা আবদুর রহমান জামী (শরহে জামী এর মুসান্নিফ রঃ) লিখিয়াছেন- যে, ফরীদ উদ্দীন আত্তার [রঃ) কে শায়খ মজদুদ্দীন খাওয়ারেযমীর [রঃ] মুরীদ ছিলেন। যিনি শায়খ নাজমুদ্দীন কুবরা [রঃ] এর বিশিষ্ট খলীফা ছিলেন। কারো কারো মতে প্রথমে তিনি কুতুবে আলম শায়খ হায়দর [রঃ] এর নিকট বয়আত ছিলেন। সে সময় হায়দর নামা কিতাবটি রচনা করেন। হযরত ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রঃ) এর পান্দ নাম কাব্যের মধ্যে যেই পরিমাণ মা'রিফাতের তত্ত্বও তথ্য রহিয়াছে তাহা অন্য কোন সুফী সাধকের রচনার মধ্যে নাই।
ওফাত : শায়খ আল্লামা ফরীদ উদ্দীন আত্তার (রঃ) বর্বর তাতারীদের হাতে ৬২৯ হিজরী সনে শাহাদতের অমিয় সূধা পান করেন। ওফাত কালে তাঁহার বয়স হইয়াছিল ১১৬ বৎসর। বর্ণিত আছে উক্ত ঘাতক পরবর্তীতে অনুতপ্ত হইয়া ইসলাম গ্রহণ করে এবং তাহার কবরের শিয়রে জীবন কাটায়।
রচনাবলী: শায়খ (রঃ) স্বীয় রেয়াযত মুজাহাদা ও সাধনার দ্বারা শরী'আত ও মা'রেফাতের যে কূলহীন জ্ঞান লাভ করিয়াছিলেন তাহা ১১৩টি কিতাবে পরবর্তী প্রজন্মের পাথেয় রূপে রাখিয়া গিয়াছেন।
তাঁহার রচনাবলীর মধ্যে নিম্নোক্ত গুলি বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য। যথা-
১। পান্দ নামা
৩। এলাহী নামা
২। তাষকেরাতুল আউলিয়া
৪। হুলিয়া নামা
৫। আসরার নামা
৬। মছীবত নামা
৭। জাওয়াহিরুজ্জাত
৮। অছিয়ত নামা
৯। বুলবুল নামা
১০। হায়দর নামা
১১। শতর নামা
১২। মুখতার নামা
১৩। শাহনামা
১৪। মান্তিকুততাইর প্রভৃতি।
উপসংহার: বস্তুতঃ শায়খ আত্তার [রঃ] ইল্মে মা'রেফতের যে আসনে আসীন ছিলেন তা উপলব্ধি করা সর্ব সাধারণের জন্যে দুষ্কর। এ মর্মে শুধু এত টুকুই বলাই যথেষ্ঠ যে, আল্লামা রুমী [রঃ] এর মত ব্যক্তিত্ব ও নিজেকে তাহার শাগিরূদ আখ্যায়িত করিয়াছেন। বর্ণিত আছে শেষ জীবনে তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত ছাড়িয়া শিয়া মাজহাব (ইছনা আশারিয়া) অবলম্বন করিয়াছিলেন। এ সময় তিনি "মাজহারুল আজাইব” কিতাবটি রচনা করেন। তবে মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম এ উক্তিকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন وهذا هو الحق