শেরে খোদা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর জন্ম ও বংশ, লালন-পালন, ইসলাম গ্রহণ, হিজরত, ভ্রাতৃবন্ধন, খায়বার বিজয়ী, সত্যের মানদণ্ড, শাহাদাত বরণ এবং মাজার শরীফ - Biography of Sher-e-Khoda Hazrat Ali (RA)

শেরে খোদা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর জন্ম ও বংশ, লালন-পালন, ইসলাম গ্রহণ, হিজরত, ভ্রাতৃবন্ধন, খায়বার বিজয়ী, সত্যের মানদণ্ড, শাহাদাত বরণ এবং মাজার
Join Telegram for More Books
Table of Contents

 

মহানবীর সংস্পর্শে যাঁরা ধন্য হয়ে বিশ্ববিখ্যাত মনীষী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন তাঁদের অন্যতম হলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা শেরে খোদা, মুশকিল কোশা, খায়বর বিজয়ী, জ্ঞানের প্রবেশদ্বার, শ্রেষ্ঠ বিচারক, তীক্ষèবুদ্ধিমান, প্রখ্যাত আরবি সাহিত্যিক মাওলায়ে কায়েনাত হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। মুসলিম জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম হযরত আলী। তিনি রাসূলের জামাতা, হাসনাইনে করীমাইনের পিতা, ফাতিমার স্বামী ও ইসলামি জগতের অনন্য বীর। আরবি ভাষায় কাব্য রচনা ও সাহিত্যিকতায় ছিলেন অদ্বিতীয়। গুণাবলি, যোগ্যতা ও বিবিধ বৈশিষ্টের কারণে বিশ^বরেণ্য এক অতুলনীয় প্রতিভা।


জন্ম ও বংশ

আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হস্তী বাহিনী বছরের ত্রিশতম সালে ৬০০ খ্রিষ্টাব্দে ১৩ রজব, জুমার দিন কাবা ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম আলী বিন্ আবী তালিব। উপনাম আবুল হাসান, আবু তোরাব। তাঁর উপাধি হায়দার (বাঘ) ও কাররার (বারংবার আক্রমণকারী)। শেরে খোদা নামে সমধিক পরিচিত। তাঁর বংশধারা আলী ইব্ন আবু তালিব ইব্ন আব্দুল মোত্তালিব ইব্ন হাশিম ইব্ন আবদে মানাফ। তাঁর পিতার আসল নামও আবদে মানাফ এবং মাতার নাম ফাতিমা বিন্তে আসাদ ইব্ন হাশিম। আসাদ বিন্ হাশিম নানার নামানুসারে তাঁর মাতা আলীর নাম রাখেন আসাদুল্লাহ। মাতা ফাতিমা বিন্তে আসাদের প্রসববেদনা শুরু হলে স্বামী আবু তালিব তাঁকে কাবা ঘরে নিয়ে গেলেন। খানায়ে কাবায় ঢুকেই প্রসব করলেন এক সুন্দর-সুশ্রী সন্তান-যার নাম রাখা হলো আলী। জাহিলিয়া যুগের কোনো অপসংস্কৃতি তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। এমনকি মূর্তিপূজার ছড়াছড়ির সময়েও তিনি একবারও প্রতিমা পূজা করেননি বলেই তাঁর সম্পর্কে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু (كرم الله وجهه) বলা হয়।


লালন-পালন

হযরত আলীর পিতা হলেন রাসূলের চাচা আবু তালিব- যাঁর কোলে রাসূল সযতেœ লালিত হয়েছিলেন। তাঁর প্রতিদান দেওয়ার জন্য রাসূলে খোদা থাকতেন সর্বদা প্রস্তুত। একদা দূর্ভিক্ষের কারণে ওই সুযোগ লাভ করলেন। হঠাৎ বহু সন্তানের জনক আবু তালিবের ঘরে অভাব অনটন দেখা দিল। অবস্থা দেখে মহানবীর মন ব্যথিত হয়ে উঠল। অপর চাচা আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে বললেন- চাচা আবু তালিবের কষ্ট আপনিও দেখছেন। আসুন! আমরা দুজনে কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করি। আপনি একটি সন্তানকে লালনের দায়িত্ব নিলে আমি আরেক সন্তান আলীর দায়িত্ব নিই। আব্বাস সম্মতি দিলে রাসূল নিজ দায়িত্বে আলীকে সন্তানের মতো করে প্রতিপালন করতে গৃহে নিয়ে গেলেন।


ইসলাম গ্রহণ

সর্বাগ্রে কে ইসলাম গ্রহণ করেছেন এ সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সর্বাগ্রে দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারীর মধ্যে চারজনের নাম আসে। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী কে সে বিষয়ে সমাধান কল্পে আমাদের ইমাম-ই আযমসহ ওলামায়ে কিরাম বলেন- মহিলাগণের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী রাসূলের প্রথমা স্ত্রী খাদীজাতুল কোবরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা। প্রাপ্ত বয়ষ্কদের মধ্যে প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। আর বালকদের মধ্যে হযরত আলী ও গোলামদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী রাসূলের পালকপুত্র হযরত যায়দ ইব্ন হারিছা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা। ইসলাম গ্রহণ কালে হযরত আলীর বয়স মতান্তরে ৮, ৯, ১০ বছর।

একদা বালক আলী দেখলেন খাদীজা ও রাসূল দুজনে নামাজ আদায় করছেন। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন- এটা কি? রাসূল উত্তর দিলেন- এটা দ্বীন যার প্রচারের জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি। রাসূল মুখে বালক আলীকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। এ সম্পর্কে আনাস বিন্ মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-

بعث النبي صلي الله عليه وسلم يوم الاثنين واسلم علي يوم الثلاثاء-

রাসূল সোমবার প্রেরিত হয়েছেন (নবুয়াত প্রকাশ করেছেন) আর আলী মঙ্গলবার ইসলাম গ্রহণ করেছেন।


হিজরত

আল্লাহর প্রত্যাদেশ পেয়ে রাসূল মাকবুল মদিনায় হিজরতের মনস্থ করে হযরত আলীকে বললেন- আলী! আমি মদিনায় হিজরত করব। তুমি আমার বিছানায় সবুজ রংয়ের চাদরটি পরে শুয়ে থাক। তোমার কিছু হবে না। সকালে যার যা আমানত মানুষের কাছে ফেরত দিয়ে তুমিও মদিনায় পৌঁছে যাবে। মহানবীর ভরসায় তিনি এ ভেবে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লেন যে, রাসূল অভয় দান করেছেন। কয়েকশত যুবক উম্মুক্ত তরবারী হাতে মারমুখী হয়ে পরদিন ভোরে ঘরে ঢুকে পড়ে। তাঁর দৃঢ় বিশ^াস ছিল রাসূল ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন- আমি মদিনায় পৌঁছে যাব। তাই দৃঢ় বিশ^াস করি আমার কিছুই হবে না। পরে তিনি মদিনার পানে রওয়ানা হলেন। রাত্রে পায়ে হেঁটে চলতেন আর দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকতেন। মদিনায় পৌঁছে গেলে দয়ালু নবী বললেন-

ادعوا لي عليا قيل : يا رسول الله لايقدر ان يمشي فاتاه النبي صلي الله عليه وسلم فلما راه اعتنقه و بكي رحمة لما بقدميه من الورم وكانتا تقطران دما- ففتل النبي في يديه ومسح بهما رجليه ودعا له بالعافية فلم يشتكهما حتي استشهد-

আমার নিকট আলীকে ডেকে নিয়ে আস। বলা হলো তিনি হাঁটতে পারছেন না। দয়ালু নবী তাঁর নিকট এসে তাঁকে দেখে গলাগলি করলেন। তাঁর পা ফোলা ও রক্ত ঝরছে দেখে কেঁদে দিলেন। মহানবী স্বীয় হাতে থুথু নিয়ে তাঁর পায়ে মালিশ করে দিয়ে সুস্থতার জন্য দো’য়া করলেন। এতে শাহাদতের পূর্ব পর্যন্ত আর কোনো ব্যথা-বেদনা হয়নি।


ভ্রাতৃবন্ধন

শেরে খোদা আলী রাসূলের চাচাতো ভাই। মদিনায় রাসূল পাক নিঃস্ব মুহাজিরদের সাথে আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ করে দিলেন। সে নিয়মে একজন আনসার ও একজন মুহাজির ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। সকল মুহাজির মুসলমানদের ভ্রাতৃবন্ধন সম্পন্ন হলো; কিন্তু হযরত আলী একাকী বাকী রইলেন। তিনি রাসূলের খেদমতে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বললেন- হায়! রাসূলুল্লাহ আমাকে কারো সাথে ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ করেননি। রাসূল করীম তাঁর মনের ব্যথা বুঝতে পেরে বললেন- انت اخي في الدنيا والاخرة-

আলী! তুমি দুনিয়া-আখেরাতে আমার ভাই। একথা শুনে মাওলা আলী যারপর নাই আনন্দিত হলেন।


খায়বার বিজয়ী

ইহুদীরা খন্দকের যুদ্ধে পরাজিত হবার পর মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে বদ্ধ পরিকর। বনু গাতফানের চার সহ¯্র সুপ্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের সহযোগিতাক্রমে মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তা শুনে রাসূল পাক সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর নেতৃত্বে খায়বারের উদ্দেশ্যে এক সৈন্যদল প্রেরণ করেন। ৭ম হিজরিতে সৈন্যদল রাতের অন্ধকারে খায়বারে পৌঁছে যায়। রাত্রিকালে আক্রমণ না করে পরদিন ভোরে রাসূলে করীম ফজরের নামায মক্কায় পড়ে ইহুদীদের সাথে একটি সন্ধি করার চেষ্টা করার করলেন। মুসলিম সেনানায়ক মাহমুদ ইব্ন মাসলামার নেতৃত্বে ছয়দিন শত্রুকে অবরুদ্ধ করে রাখার পরও জয়-পরাজয় নিধারিত হলো না। অবশেষে নবী করীম বললেন- আগামীকাল এমন এক ব্যক্তির হাতে ঝান্ডা দেব যিনি খায়বার বিজয় করবেন। সে সৌভাগ্যের অধিকারী কে? এ কথা ভেবে সকলে পবিত্র মুখপানে তাকিয়ে আছেন। রাসূল পাক হযরত আলীকে ডেকে পাঠালেন। তিনি দরবারে মোস্তফায় হাজির হয়ে চোখে অসুস্থতার কথা জানালে দয়াল নবী অসুস্থ চোখে এক ফোঁটা থুথু শরীফ লাগিয়ে দিয়ে দোয়া করলেন-

اللهم اذهب عنه الحر والبرد فما وجدت حرا ولابردا بعد يومئذ.

হে আল্লাহ! তার থেকে ঠান্ডা-গরম দূর করে দাও। হযরত আলী বললেন- সে দিন থেকে আমি ঠান্ডা-গরম অনুভব করতাম না। হযরত আবু লায়লা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাঁর সফর সঙ্গী থাকতেন। তিনি বলেন, হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু শীতের সময় গরমের পোশাক আর গরমের সময় শীতের পোশাক পরতেন।

হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ২০ দিন দুর্গ অবরুদ্ধ রাখার পর বীরত্বের সাথে আক্রমণ করত ফটক উপড়িয়ে ফেলেন। তুমুল যুদ্ধে কয়েকটি ঢাল ভেঙ্গে যাওয়ার পর আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সে কপাটখানা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। এ যুদ্ধে মুসলিমগণ সম্পূর্ণরূপে বিজয় লাভ করেন হযরত আলীর নেতৃত্বে। তাই তাকে খায়বার বিজয়ী বলা হয়।


হযরত আলী সত্যের মানদণ্ড

হযরত আলীকে মুহাববত করা-না করা নিয়ে কতেক মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। মহানবী আগাম বার্তা দিয়েছেন-

لا يحب عليا منافق و لا يبغضه مؤمن—

মুনাফিক আলীকে ভালোবাসে না এবং মুমিন আলীকে ঘৃনা করে না। একদল অতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে আলীকে নবুয়তের মর্যাদায় আসীন করেছে এবং হযরত আবু বকর ও ওমর ফারুককে গালি দিয়ে থাকে, তারাই শিয়া। তাদের ভ্রান্ত বিশ^াস হলো- নবুয়ত আলীর প্রাপ্য ছিল। হযরত জীব্রাইল আলায়হিস্ সালাম ভুল করে নবী করীমের নিকট ওহী নাযিল করেন। তাদের অনেকের ধারণা হযরত আলী ও তাঁর সন্তানদের মাঝে আল্লাহ অবতরণ করেন। তাঁর ওফাত হয়নি। প্রত্যেক ইমামের আত্মার সাথে আল্লাহ মিশে আছেন। হযরত আলী উপাস্য। নাউযু বিল্লাহ্!

পক্ষান্তরে হযরত আলীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করত ‘ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ’ স্লোগান দিয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠে একদল যাদের নাম খারিজী। তাদের ভ্রান্ত আকীদা হলো- খিলাফত কোনো আরবীয় বংশের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। খলিফা নির্বাচিত হবেন স্বাধীন ও ন্যায়ের সাথে নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে। আদল-ইনসাফের উপর অধিষ্ঠিত না থাকলে তাকে পদচ্যুত করা এমন কি হত্যা করা ও বৈধ। তারা হযরত আলী ও আহলে বায়তের ঈমানের ব্যাপারে তীব্র সমালোচনা করে থাকে। তারা সকল গুনাহগারকে কাফির বলে ঘোষনা করে থাকে।

হযরত আলী, সাহাবা কিরাম ও আহলে বায়তের প্রতি যথাযত ভালোবাসা প্রদর্শন করা এবং শত্রুতা পোষণ না করা, তিরষ্কার না করা- এ আকীদায় বিশ^াসীদের নাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। ইদানিং যারা রাসূলের কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে গালমন্দ করে তারাও শিয়া। জঙ্গে জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধের জন্য আলীকে দোষারূপ করা যাবে না। ইমাম আযম রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি-এর অভিমত- হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাতে তিনি সত্যপন্থী ছিলেন। সুতরাং সাব্যস্ত হলো- হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সত্যের মাপকাটি বা মানদণ্ড।


শাহাদাত বরণ

খারেজীরা নাহরাওয়ানে শেরে খোদা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর হাতে শোচনীয়ভাবে পরিজিত হয় এবং আট-দশ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে। মাত্র নয়জন খারেজী পালিয়ে জীবন বাচাঁয়। সে নয়জন হতে তিনজন মক্কায় গিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করল তারা মুসলমানদের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী হযরত আমিরে মুয়াবিয়া, আমর ইবনুল আস ও হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে হত্যা করবে। সে খারেজীত্রয়ের নাম (ক) আমর ইব্ন বুকাইর তামিমী, (খ) বরক ইব্ন আবদুল্লাহ তামিমী ও (গ) আবদুর রহমান ইব্ন মুলজাম আল-মুরাদী। তারা এ ভয়ানক ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে ১৭ রমজানকে টার্গেট করল। সে মতে উক্ত তারিখে জুমার দিন আব্দুর রহমান বিন্ মুলজামের প্রতিজ্ঞা পূরণার্থে মাওলা আলীর দিকে ছুটে গেল। ফজরের নামাজের জন্য মুয়াজ্জিন (ইব্ন নাব্বাহ) আজান শেষে একাধিকবার ডাকাডাকির পর মাওলা আলী মসজিদের দিকে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে তরবারি চমকিয়ে উঠল। শাবীরের আঘাত লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও খারেজী নেতা আবদুর রহমান বিন্ মুলজামের আঘাতে তরবারী হযরত আলীর ললাট ভেদ করে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে গেল। ১৯ রমজান বিষাক্ত তরবারীর আঘাতে আহত হওয়ায় সন্ধ্যার দিকে ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে পড়লেন। তিনি নিজ পুত্রগণকে অন্তিম উপদেশ দিয়ে ২১ রমজান মতান্তরে ৫৭,৬৩ বছর বয়সে ৪০ হিজরিতে শাহাদাত বরণ করেন। নবীর ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তব প্রতিফলন ঘটল। রাসূল ইরশাদ করেন-

لاتموت حتي تضرب ضربة علي هذه فتخضب هذه واؤمأ الي لحيته وهامته-

আলী! তুমি দাড়ি ও মাথা রক্তাক্ত হয়ে মারা যাবে। হযরত আলীকে মহানবী স্বপ্নে তাঁর শাহাদাতের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। হযরত আলী স্বীয় সন্তান ইমাম হাসানকে বললেন- আমি রাত্রে রাসূল কে স্বপ্নে দেখলাম। আমি রাসুলের খেদমতে করলেন- আপনার উম্মত আমার সাথে ভালো আচরণ করছে না।


রাসূল পাক বললেন- জালিমদের জন্য দোয়া করে বলো- হে আল্লাহ! আমাকে উত্তম লোকের নিকট পৌঁছিয়ে দাও। তাদের নিকট একজন মন্দ লোক নিয়োগ করে দাও। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তে গেলে নির্মম শাহাদাতের স্বীকার হন।

তাঁর ওফাতের পর ইমাম হাসান, হোসাইন ও আব্দুল্লাহ বিন্ জাফর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম গোসল দান করে তিন কাপড়ে কাফন পরায়ে রাতের শেষভাগে দাফন করেন। জানাযায় ইমামতি করেন হযরত ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু।


মাজার শরীফ

হযরত যুবাইর বিন বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু শরীক বিন্ আব্দুল্লাহ্র সূত্রে আবু রাওক হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে দাফন করা হয়। বিশুদ্ধ মতে-তাঁকে কূফার নাজাফে দাফন করা হয়। এখনো সেখানে তাঁর পবিত্র মাজার শরীফ শোভা পাচ্ছে।

আপনার পছন্দের আর দেখুন
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

Post a Comment

Assalamu Alaikum Wa Rahmatullah
Greetings!
Provide your feedback.