Table of Contents
কুরআনের আলোকে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এ পৃথিবীতে যত নেয়ামত রয়েছে বা এসেছে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম । আল্লাহর এ নেয়ামত ও আনুগ্রহকে কেন্দ্র করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও আনন্দ করার নির্দিশ স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নিজে দিয়েছেন ।
যেমন এরশাল হচ্ছেঃ-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَ بِرَحْمَتِهِ فَبِذَالِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَا خَىْرٌ مِمَّا ىَجْمَعُوْنَ
আর্থাৎ হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর দয়া ও রহমতকে কেন্দ্র করে তরা যেন আনন্দ করে এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও শ্রেষ্ট। সুরা ঈউনূছ,আয়াত ৫৮
উল্লেখ্য যে, নবীজীর শুভাগমনের চাইতে শ্রেষ্ট নেয়ামত এবং দয়া বিশ্ববাসীর জন্য আর কি হতে পারে ? যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে-
وما ارسلنك إلا رحمة للعالمين
হে রাসূল, নিশ্চই আমি আপনাকে জগতসমুহের রহমত করেই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)
দ্বিতীয় দলীলঃ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমানঃ-
قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اَللَّهُمَّ رَبَّنَا اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَاءِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا الِّاَوَّلِنَا وَاَخِرِنَا وَ اَيَةً مِنْكَ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ-
আর্থাৎ ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) দুয়া করলেন, হে আল্লাহ ! হে আমাদের প্রভু আমাদের প্রতি আকাশ হতে খাদ্য অবতীর্ন করুন যেন সেটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে ( বর্তমানে আছে) এবং যারা পরে, সকলের জন্য আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ হতে এক নিদর্শন হয়। আর আপনি আমাদেরকে রিযিক প্রদান করুন বস্তুত আপনিই সর্বোত্তম রিযিক প্রদানকারী। (সূরা মায়েদা আয়াত ১১৪)
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা পেলে তা যদি ঈসা (আঃ) এর ভাষায় সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আনন্দোৎসবের কারণ হয় তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত মহান নেয়ামতে আগমন দিবস কতই না মর্যাদাবান , গুরুত্ববহ, ও আনন্দের তা সহজেই আনুমেয়।
হাদিসের আলোকে ঈদে মিলদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পবিত্র হাদিসের মধ্যে ও ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতার প্রমান পাওয়া যায় । তম্নধ্য হতে কয়েকটি হাদীস হতে একটি হাদীস শরীফ হচ্ছে-
عن ابن عباس رضي الله عنه ،كان يحدث ذات يوم في بيته وقائع و لاد ته بقوم فيبشرون ويحمدون إذا جاء النبي صلي الله عليه و سلم و قال حلت لكم شفاعتي
͏ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদিন হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কিছু লোক নিয়ে নিজ গৃহে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মকালীন ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন এবং তাঁর প্রশংসাবলী আলোচনা করে দুরুদ ও সালাম পেশ করছিলেন। ইত্যবসরে প্রিয়নবী হাজির হয়ে এ আবস্তা দেখে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে গেল ।
( ইবনে দাহইয়ার আত-তানবীর )
সুতরাং প্রমানিত হল, মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন দ্বারা রাসূলে পাকের শাফায়াত নসীব হয় ।
͏ মিলাদ পালন করেছেন নবীজি নিজেই –
عَنْ اَبِى قَتَدَةَ الاَنْصاَرِى رَضِى الله عَنهُ اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سءل عَنْ صَوْمِ يَوْم الاِ ثْنَيْنِ قَلَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيْهِ بُعِثْتُ اَوْاُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْهِ-
অর্থাৎ হযরত আবু কাতাদা (রা:) হতে বর্নিত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলায়হি ওয়াসাল্লামার দরবারে আরজ করা হলো তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখেন কেন? উত্তরে নবীজি ইরশাদ করেন, এই দিনে আমি জম্মন গ্রহন করেছি, এই দিনেই আমি প্রেরিত হয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয় ।
(সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ: মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ: হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:)
͏ আরো মজার ব্যপার হল আবুলাহাব একজন কাফের হওয়ার পরও নবীজীর জন্মেরর দিন খুশি হয়ে সে তার সংবাদ দাতা দাসী সুয়াইবাকে আযাদ করে দেওয়ার কারনে পরকালে কঠিন আযাবের ভিতরে ও প্রতি সোমবার তার আযাব হালকা করে দেওয়া হয়।
(উল্লেখ্য যে আবু লাহাবের ঘটনা সম্পর্ক হাদিসটি আল্লামা ইবনে জাওযী, আল্লামা কুস্তালানী, আল্লামা জালালুদ্দিন মুয়ূতী সহ আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন। )
সাহাবায়ে কেরামের মতে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজর মক্কি হায়তমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রনীত কিতাব আন ইন মাতুল কুবরা আলাল আলম ফী মাওলিদি উলদে আদম”
এর মধ্যে কতিপয় হদিস শরীফ রিলক্ষিত হয়।
– সর্বশ্রেষ্ট সাহবী ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা:)বলেন-
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قِرا ةَ مَوْ لِدِ النَّبىُ مَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَنَرَفِيْقِى فىِ الجَنّةِ
অর্থাৎ ইমলাদুন্নবী উপলেক্ষে যে কমপক্ষে এক দিরহাম খরচ করবে সে বেহেশতের শধ্যে আমার বান্ধু হবে।
দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন –
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَخْيَا الاسْالاَمُ
যে মিলাদুন্নবীকে সম্মান করল সে যেন ইসলামকেই জিন্দা করল
তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান বিন আফফান (রাঃ) বলেন –
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قرأة مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ فَكَا نَّمَا ثَهِيد غَزُوَةِ بَدَر رَوحُنَيْنُ
যে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কমপক্ষে এক দিরহাম খরচ করবে সে যেন বদর এবং হুনাইনের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করল
চুতর্থ খলিফা হযরত আলি মুরতাদ্বার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
مَنْ عَظَّمَ مَوْ لِدِ النَّبِى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَكَانَ سَبَبَا لِقرا ته لا يَحْرُمُ مِنَ الدُّنْيَا اِلا َّبِالاِ يْمَانِ وَيَدْخُلُ الجَنَّهَ بِغَيْرِ حِسَاب
অর্থাৎ যে ব্যিক্ত মিলাদুন্নাবী সম্মান করবে তার বদৌলেত সে ঈমান ব্যতিরেকে দুনিয়া হতে বিদায় নেবেনা এবং কোন হিসাব নিকাশ ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করবে।
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
وَدَوتْ لَوْكَانَ لِى مِثل جَبَلٍ اُحٍد زَهْبًا فَا نْفَقُتُهُ عَلَ قِراَ ة مَوْلِدِالنّبِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ
অর্থাৎ আমার মন চায়, যদি আমার কাছে উহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ন থাকত, তাহলে সব গুলো মিলাদুন্নবী পালনে খরচ করতাম।
হযরত জুনাঈদ বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাহি বলেন-
مَنْ حَضَرَ مَوْلِدِالنَّبِى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمُ وَعَظّمَ قدره فَقَد فَازَ با لاِ يْما ن
অর্থাৎ যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী মাহফিলে উপস্থিত হয় এবং তার যথাযথ সম্মান করে তাহলে তার ঈমআন সফল হয়েছে।