রোযার নিয়্যত, দোয়া, নামাজ ও বিভিন্ন মাসআলা - Ramazan Niyat, Dua, Namaz and Masail

রোযার নিয়্যত, দোয়া, নামাজ ও বিভিন্ন মাসআলা, Ramazan Niyat, Dua, Namaz and Masail
Admin
Join Telegram for More Books
Table of Contents
রোযার নিয়্যত, দোয়া, নামাজ ও বিভিন্ন মাসআলা - Ramazan Niyat, Dua, Namaz and Masail

রোযা: নিয়্যত, দোয়া, নামায ও বিভিন্ন মাসআলা

মাহে রমজান

শাবান মাসের পর আসে মাহে রমযান। পবিত্র রমযান এক মাসের রোযা রাখা প্রত্যেক বালেগ-আক্কেল মুসলমানের উপর ফরয। কেউ শরীয়ত সম্মত কারণে রোযা রাখতে অপারগ হলে প্রত্যেক রোযার জন্য 'ফিদিয়া' দিতে হয়। রোযা পালনের জন্য নিয়্যত করতে হয়। সারাদিন রোযা পালনের পর সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করতে হয়। সুতরাং রোযা ও ইফতারের নিয়্যত নিম্নে প্রদত্ত হলঃ

রোযার নিয়্যত:

نَوَيْتُ أَنْ أَصُومَ غَدًا مِّنْ شَهْرٍ رَمَضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضًا لَّكَ يَا الله فَتَقَبَّلُ مِنِّي إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ -

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ আসূ-মা গাদাম্ মিন শাহরি রামাদ্বা-নাল মুবারাক; ফারদ্বাল্ লাকা ইয়া-আল্লা-হ, ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী- ইন্নাকা আনতাস সামী 'উল 'আলী-ম।
অর্থঃ আমি আগামীকাল পবিত্র রমযান মাসের ফরয রোযা রাখার নিয়্যত করলাম। হে আল্লাহ! তুমি এটা আমার নিকট থেকে কবুল কর; নিশ্চয় তুমি শ্রোতা, জ্ঞাতা। আর যদি পরদিন দ্বি-প্রহরের পূর্বে নিয়্যত করা হয়, তবে 'আসুমা' শব্দের পরে 'গদাম' শব্দটি না বলে 'আল্ ইয়াওমা' বলবেন। এ শব্দের অর্থ 'আজ'।

ইফতারের নিয়্যত:

اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّحِمِينَ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা লাকা সুমতু ওয়া'আলায়কা তাওয়াক্কালতু ওয়া'আলা-রিয্ক্বিকা আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া-আর হামার রা-হিমী-ন।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমারই (সন্তুষ্টির) জন্য আমি রোযা রেখেছি তোমার উপরই ভরসা করেছি এবং তোমারই রিয্ক্বির উপর ইফতার করছি, তোমার দয়া সহকারে, হে সর্বাধিক দয়ালু।

তারাবীহ:
পবিত্র রমযানের প্রত্যেক রাতে এশা ও বিতরের নামাযের মধ্যভাগে দু'দু' রাকআত করে বিশ রাকআত তারাবীহর নামায পড়ার বিধান রয়েছে।

তারাবীহর নামাযের নিয়্যত:

نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ التَّرَاوِيحَ - سُنَّةُ رَسُولِ اللَّهِ َتعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ -

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা'আ-লা রাকা'আতাই সোয়ালা-তিত তারা-ভী-হ। সুন্নাতু রসূ-লিল্লা-হি তা'আ-লা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কা'বাতিশ্ শারী-ফাতি আল্লা-হু আকবার। অর্থঃ আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ক্বেবলামুখী হয়ে দু' রাক'আত তারাবীহর সুন্নাত নামায সম্পন্ন করছি। আল্লাহু আকবার।

প্রতি দুই রাক'আত নামাযের পর দরূদ শরীফ:

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا وَنَبِيِّنَا وَشَفِيعِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَالِهِ وَأَصْحَابِهِ وَبَارِكْ وَسَلِّمُ -

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সল্লি আ'লা- সাইয়্যিদিনা- ওয়া নাবিয়্যিনা- ওয়া শাফী-'ইনা- ওয়া মাওলা-না- মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু আলায়হি ওয়া আ-লিহী ওয়া আসহা-বিহী ওয়া বারিক্ ওয়া সাল্লিম।

هَذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّي يَا كَرِيمَ الْمَعْرُوفِ وَيَا قَدِيمَ الْإِحْسَانِ ثَبِّتُ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ -

উচ্চারণ: হা-যা- মিন্ ফাদ্বলি রব্বী- ইয়া- কারী-মাল্ মা'রূ-ফ, ওয়া ইয়া- ক্বাদী-মাল ইহসা-ন, ওয়া সাব্বিত কল্লী- 'আলা- দী-নিকা, বিরহমাতিকা ইয়া- আরহামার রা-হিমীন।

প্রতি চার রাক'আত তারাবীহ নামাযের পর দো'আ:

سُبُحْنَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبُحْنَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ - سُبُحْنَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوتُ أَبَدًا اَبَدًا - سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّنَا وَرَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ -

উচ্চারণ: সুবহা-না যিল মুললিক ওয়াল মালাকৃতি, সুবহা-না যিল্ 'ইয্যাতি ওয়াল্ 'আয্যাতি ওয়াল্ হায়বাতি ওয়াল্ কুদরাতি ওয়াল্ কিবরিয়া-ই ওয়াল্ জাবারূ-তি, সুবহা-নাল মালিকিল হাইয়্যিল লাখী- লা-ইয়ানা-মু ওয়ালা- ইয়ামূ-তু আবাদান্ আবাদা-। সুব্বু-হুন কুদ্দু-সুন রাব্বুনা-ওয়া রাব্বুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূ-হ।

তারাবীহ নামাযের প্রতি চার রাক'আত পর মুনাজাত:

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَلُكَ الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ، يَا خَالِقَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ، بِرَحْمَتِكَ يَا عَزِيزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيمُ يَا سَتَارُ يَا رَحِيمُ يَا جَبَّارُ يَا خَالِقُ يَا بَارُ - اللَّهُمَّ أَجِرْنَا وَخَلَّصْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيرُ، يَا مُجِيرُ، يَا مُجِيرُ، بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ -

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসআলুকাল্ জান্নাতা ওয়া না'ঊ-যুবিকা মিনান্ না-র, ইয়া খা-লিকাল জান্নাতি ওয়ান্ না-র; বিরাহমাতিকা ইয়া- আযী-যু ইয়া গাফ্ফা-রু ইয়া কারী-মু ইয়া সাত্তা-রু ইয়া রাহী-মু ইয়া জাব্বা-রু ইয়া খা-লিকু ইয়া বা-র। আল্লা-হুম্মা আজিরনা ওয়া খাল্লিসনা- মিনান্ না-র। ইয়া- মুজী-রু ইয়া মুজী-রু ইয়া মুজী-র, বিরাহমাতিকা ইয়া-আর হামার রা-হিমী-ন।

কি কি কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে বা রোযা ভঙ্গ করতে পারে

১. মহিলাদের গর্ভাবস্থায়,
২. স্তন্য দান,
৩. সফর,
৪. অসুস্থতা,
৫. বার্ধক্য,
৬. জীবন নাশের আশংঙ্কা,
৭. মস্তিস্ক বিকৃতি
৮. জিহাদ

এসব কারণে রমযানের রোযা না রাখার অনুমতি আছে এবং এসব কারণ দূরীভূত হওয়ার পর বাদ পড়া রোযাসমূহের প্রতিটি রোযার বদলে একটি করে ক্বাযা আদায় করতে হবে।

মাসআলাঃ গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মহিলা রোযা রাখলে নিজের জীবনের বা গর্ভের শিশুর অথবা দুগ্ধপায়ী শিশুর জীবন নাশের আশঙ্কা হয়, তাহলে রোযা না রাখার অনুমতি আছে বা রোযা ভঙ্গ করতে পারে। স্তন্যদাত্রী শিশুর মা ও ধাত্রী একই বিধানের আওতাভুক্ত। তদ্রূপ অসুস্থতার দরূন রোযা না রাখার অনুমতি আছে তখনই, যখন রোগ বৃদ্ধির বা বিলম্বে আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সুস্থ ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হওয়ার নিছক খেয়াল অথবা বাহানা করে রোযা ছেড়ে দেয়ার অনুমতি নেই। দৃঢ় ধারণা ও পূর্ণ বিশ্বাসের তিনটি ধরন বা লক্ষণ আছেঃ এক. রোগ বৃদ্ধির বা জীবন নাশের বাহ্যিক লক্ষণ পাওয়া গেলে, দুই. নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং তিন. এমন অভিজ্ঞ ও পারদর্শী মুসলিম ডাক্তারের পরামর্শ; যে ফাসেক্ব নয়। উক্ত বিষয়সমূহের কোন একটি পাওয়া না গেলে বরং নিছক খেয়াল ও কল্পনার ভিত্তিতে বা ফাসিক্ব ডাক্তারের পরামর্শক্রমে রমযানের রোযা ভঙ্গ করলে ক্বাযা ও কাফফারা উভয়টা আবশ্যক হবে। [রদ্দুল মুহতার ইত্যাদি]

উল্লেখ্য যে, কোন অনভিজ্ঞ চিকিৎসক সামান্য সর্দির মত রোগের কারণেও রোযা ভঙ্গের নির্দেশ ও পরামর্শ দিলে তার পরামর্শক্রমে রোযা ভঙ্গ করা যাবে না।

মাসআলাঃ যে সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে, তা দ্বারা শর’ঈ সফর বুঝানো হয়েছে। সাধারণ বা মা’মুলী ৮/১০ মাইলের সফরের কারণে রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি নেই। শর’ঈ সফর বলতে তিন মঞ্জিল বা ৫৭/৬১ মাইল বা আরো অধিক পথ পায়ে হেঁটে বা যে কোন বাহনে চড়ে কিংবা যান্ত্রিক উপায়ে অতিক্রম করা এবং ১৫ (পনর) দিনের ভিতরে স্বীয় অবস্থানে ফিরে আসার কিংবা অন্যত্র সফর করার নিয়্যত করা। তবে মুসাফিরের যদি সফরের সময়ে কোন ক্ষতি না হয় তবে সফরে রমযানের রোযা রাখা উত্তম ও অনেক সাওয়াবদায়ক। অবশ্য কোন মুসাফির যদি শর’ঈ অর্ধদিবসের বা সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার আগে রমযান মাসে নিজ গৃহে বা স্বীয় অবস্থানে ফিরে আসে, কিন্তু তখনো সে কিছু আহার করে নি, তাহলে ওই দিনের রোযার নিয়্যত করে রোযা পূর্ণ করা তার উপর ওয়াজিব। [কানুনে শরীয়ত ইত্যাদি]

মাসআলাঃ অধিক ক্ষুধা ও তৃঞ্চার দরুণ যদি প্রাণহানির বা মস্তিস্ক বিকৃতির নিশ্চিত আশঙ্কা হয় অথবা সর্প দংশনের ফলে প্রাণহানির দৃঢ় আশঙ্কা হয় তবে রোযা ভেঙ্গে ফেলবে। পরে ক্বাযা করবে। [রদ্দুল মুহতার বাহারে শরীয়ত ইত্যাদি]

মাসআলাঃ অতিশয় বৃদ্ধ লোক, যে বয়স বৃদ্ধির কারণে এমন দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, রোযা রাখতে পারছে না, ভবিষ্যতেও রাখার আশা করতে পারে না, তবে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে। অবশ্য সে রমযানের প্রতিটি রোযার পরিবর্তে ফিদিয়া স্বরূপ একজনের ফিতরা বরাবর দুই সের তিন ছটাক আধা তোলা=দুই কেজি পঞ্চাশ গ্রাম গম বা আটা অথবা সমপরিমাণ মূল্য একজন মিসকীনকে প্রদান করবে। হ্যাঁ, রোযার ফিদিয়া আদায় করার পর যদি পরবর্তীতে রোযা রাখার শক্তি এসে যায়, তবে রমযানের প্রতিটি রোযার বদলে একটি করে রোযার ক্বাযা করবে। তখন ফিদিয়া নফল সাদক্বাহ্ হিসেবে গণ্য হবে। [হিদায়া ও আলমগিরী ইত্যাদি]

৯. দুই ঈদের দিন ও ক্বোরবানীর ঈদের পরের তিন দিন অর্থাৎ শাওয়াল মাসের ১ তারিখ ও জিলহজ্বের ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ, বৎসরে মোট ৫ (পাঁচ) দিন যে কোন রোযা রাখা হারাম। উক্ত দিনসমূহে কেউ নফল রোযা পালন করলে অবশ্যই ভঙ্গ করে ফেলবে। পরে উক্ত রোযার ক্বাযা আদায় করতে হবে না অবশ্য যদি কেউ উক্ত নিষিদ্ধ দিনসমূহে রোযা রাখার মান্নত করে, তবে উক্ত দিনসমূহের পরে মান্নতের রোযা পূর্ণ করবে। [বাহারে শরীয়ত ও কিতাবুল আশবাহ ইত্যাদি]
১০. মেহমান ও মাতা-পিতার সন্তুষ্টির জন্য নফল রোযা ভঙ্গ করতে পারে, তবে তা পরে ক্বাযা করবে। অবশ্য মেহমানের কারণে নফল রোযা ভঙ্গ করতে পারে দ্বি-প্রহরের পূর্বে, তার পরে নয়। মা-বাবার কারণে আসরের পূর্ব পর্যন্ত নফল রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে। উল্লেখ্য যে, মা-বাবা বা মেহমানের কারণে মাহে রমযানের ফরয রোযা ও ক্বাযা রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি নেই। [আলমগীরী ও কানূনে শরীয়ত ইত্যাদি]
১১. কোন মুসলমানের দাওয়াতে অংশ গ্রহণের জন্য দ্বি-প্রহরের পূর্বে নফল রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে, তবে উক্ত নফল রোযার ক্বাযা করবে। অবশ্য দাওয়াতে অংশ গ্রহণের জন্য রমযানের ফরয ও ক্বাযা রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি নেই। [কানূনে শরীয়ত]
১২. স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল ও মান্নতের রোযা রাখলে স্বামীর নির্দেশে স্ত্রী নফল ও মান্নতের রোযা ভঙ্গ করতে পারে। তবে পরে স্বামীর অনুমতি নিয়ে ক্বাযা করবে। অবশ্য রমযানের ফরয রোযা ও ক্বাযা রোযা স্বামীর আদেশে ভঙ্গ করবে না। [কিতাবুল আশবাহ ইত্যাদি]
১৩. হুঁশ ঐ জ্ঞানের মধ্যে যদি সত্যই ত্রুটি ও ব্যতিক্রম দেখা যায়, তবে রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে; কিন্তু পরবর্তীতে ক্বাযা করবে। [বাহারে শরীয়ত]
১৪. রোযা ভঙ্গ করার জন্য যদি স্বামী বা অন্য কেউ বাধ্য করে, এমনকি ভঙ্গ না করলে প্রাণহানি বা অঙ্গহানির ভয় হয়, তবে যে কোন রোযা এমনকি রমযানের রোযা পর্যন্ত ভঙ্গ করার অনুমতি আছে। পরে অবশ্যই ক্বাযা করবে। [দুররে মোখতার ইত্যাদি]
১৫. যদি কোন ব্যক্তি শপথ করে বলে যে, যদি তুমি রোযা ভঙ্গ না করো, তবে আমার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে, তবে রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে। অবশ্য পরে ক্বাযা করবে।

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়টা ওয়াজিব হয়:

১. রমযান মাসের ফরয রোযা নিয়্যত করে রাখার পর বিনা প্রয়োজনে ইচ্ছা করে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে।
[তবে রমযান ব্যতীত অন্য মাসে মান্নতের রোযা বা নফল রোযা অথবা রমযানের ক্বাযা রোযা রাখা আরম্ভ করার পর ইচ্ছা করে ভঙ্গ করলে একটার পরিবর্তে শুধু একটা পরে ক্বাযা করবে, কাফফারা ওয়াজিব হবে না। তদ্রূপ কোন মুসাফির বা রোগী অথবা নাবালেগ কিংবা মজনূন (পাগল) রমযানের রোযা আরম্ভ করার পর এবং রোগী সুস্থ হওয়ার পর রমযানের একটি রোযার পরিবর্তে শুধু একটি রোযা ক্বাযা করবে, আর নাবালেগ রমযানের রোযা ভঙ্গ করলে ক্বাযাও ওয়াজিব হবে না। যেহেতু সে শরীয়তের হুকুম-আহকামের আওতার বাইরে।]
২. রমযানের রোযা নিয়্যত করে রাখার পর রোযা অবস্থায় ইচ্ছা করে সামনে বা পিছনের রাস্তায় সঙ্গম করলে বা করালে।
৩. সিংঙ্গা দেওয়ার দরুণ কিংবা সুরমা দেওয়ার দরূঢ অথবা চতুস্পদ জন্তুর সাথে যৌন সঙ্গম করার দরূণ বা স্ত্রী কিংবা অন্য রমনীকে স্পর্শ অথবা চুমু দেওয়ার দরূণ রোযা ভঙ্গ হয়েছে ধারণা করে ইচ্ছাকৃত রোযা অবস্থায় পানাহার করলে।
উপরোক্ত কারণে রমযানের একটি রোযার বদলে অন্য সময়ে একটি ক্বাযা রোযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে। [জওহারাহ ও বাহারে শরীয়ত ৫ম খন্ড]

কাফফারার বিবরণ:
ক. একজন গোলাম বা বাঁদী আযাদ করা।
খ. ণৎ সম্ভবপর না হলে লাগাতার (মাঝখানে ভঙ্গ করা ছাড়া) রমযানের একটি রোযার বদলে অন্য সময়ে ষাটটি (৬০) রোযা রাখা।
গ. তাও সম্ভবপর না হলে ৬০ (ষাট) জন মিসকীন ও অভাবীকে পেট ভরে খানা দেওয়া বা সমপরিমাণ খানার মূল্য পরিশোধ করা।
কাফফারার ষাট রোযা যেন একাধারে হয়, কোন কারণে মাঝখানে বাদ দিলে পুণরায় ষাট রোযা নূতন করে একাধারে আদায় করতে হবে। অবশ্য কোন মহিলার কাফফারার একাধারে ষাট রোযা আদায় করাবস্থায় যদি মাসিক হায়েয বা ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়, তবে হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর কাফফারার বাকী রোযা আদায় করবে। [রদ্দুল মুহতার, বাহারে শরীয়ত ইত্যাদি]

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং শুধু ক্বাযা ওয়াজিব হয়:

নিম্নলিখিত কারণসমূহে যদি কোন রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে শুধু ক্বাযা অর্থাৎ (একটি রোযার পরিবর্তে একটি রোযা আদায় করা) ওয়াজিব হয়ঃ
১. কোন রোযাদার রোযা অবস্থায় ইচ্ছা করে কোন অখাদ্য বস্তু যেমন মাটি, ঘাস, তুলা, কাগজ, কাঠ ও পাথর ইত্যাদি ভক্ষণ করলে।
২. কুল্লি করার সময় হঠাৎ পানি পেটের ভিতরে প্রবেশ করলে।
৩. জবরদস্তি বা জানের ভয়ে অথবা অঙ্গহানির হুকমি দেওয়ায় বাধ্য হয়ে পানাহার করলে।
৪. বাধ্য হয়ে স্ত্রী সহবাস বা যৌন সঙ্গম করলে।
৫. নিদ্রাবস্থায় রোযাদারকে কেউ কোন খাদ্যবস্তু আহার করালে। (তবে শর্ত হল যে জাগ্রত হওয়ার পর রোযাদার এ ব্যাপারে ওয়াকিফহাল বা অবহিত হতে হবে।)
৬. বৃষ্টির পানি অথবা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঘাম বা অশ্রু মুখে পড়ার পর তা গিলে ফেললে।
৭. কানে তরল পদার্থ অথবা তৈল প্রবেশ করালে।
৮. পেট ও মাথার ক্ষতস্থানে তরল ঔষধ লাগানোর ফলে তা পেটে বা মস্তিস্কে পৌঁছলে।
৯. অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি আসলে অথবা তা পুনভৎহ গিলে ফেললে।
১০. রাত মনে করে ভোরে অথবা সুবহে সাদেঔোর সময় সাহরী (পানাহার) অথবা স্ত্রী সহবাস করলে, পরে জানতে পারল যে সাহরী কিংবা স্ত্রী সহবাসের সময় সুবহে সাদিক্ব ছিলো।
১১. সন্ধ্যা মনে করে সূর্য অস্তমিত না হতেই ইফতার করলে।
১২. ভুলক্রমে আহার করায় রোযা নষ্ট হয়েছে মনে করে পুনরায় আহার করলে।
১৩. নিদ্রাবস্থায় সঙ্গম করলে।
১৪. বেহুশ অবস্থায় কেহ রোযাদারের সাথে সঙ্গম করলে।
১৫. নিয়্যত ও সাহরী ছাড়া রমযান মাসে দিনের বেলায় সুবহে সাদিক্ব হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস না করলেও পরবর্তীতে এক দিনের একটি রোযা ক্বাযা করতে হবে।
১৬. রোযাদার দাঁত হতে জিহ্বা বা হাত দ্বারা চনা পরিমাণ কোন বস্তু বের করে খেয়ে ফেললে, অনুরূপ দাঁত হতে রক্ত বাহির হয়ে যদি গলার ভিতরে চলে যায় এবং রক্তের স্বাদ ভিতরে অনুভূত হয়। অনুভূত না হলে ক্বাযা ওয়াজিব হবে না।
১৭. অল্প বমি মুখে আসার পর তা ইচ্ছা করে গিলে ফেললে।
১৮. যৌন উত্তেজনার সাথে স্ত্রী বা কোন রমনীকে চুমা দেওয়ার পর অথবা শরীর স্পর্শ করার পর বীর্যপাত হলে।
১৯. নাকে তরল ঔষধ প্রবেশ করালে ও ইচ্ছা করে নশ টানলে।
২০. রমযান মাসে সকালে রোযার নিয়্যত না করে দ্বি-প্রহরের পর রোযার নিয়্যত করে পানাহার করলে।
২১. ছোট নাবালেগা মেয়ের সাথে (যে সঙ্গমের উপযোগী নয়) বা মৃত লাশ ও পশুর সাথে সঙ্গম করলে, যদি বীর্যপাত হয়।
২২. হস্ত মৈথুন করে অথবা স্ত্রীর রান বা পেটে হাত দিয়ে স্বেচ্ছায় বীর্য বের করলে অবশ্য হস্ত মৈথুনের ফলে বীর্য বের না হলে ক্বাযা ওয়াজিব হবে না। [দুররুল মুখতার ইত্যাদি]
২৩. সুস্থাবস্থায় নিয়্যত সহকারে রোযা শুরু করার পর পাগল হয়ে গেলে, পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরে আসলে উক্ত দিনের রোযার ক্বাযা করবে।
২৪. নিয়্যত সহকারে রোযা শুরু করার পর রোযাবস্থায় মহিলাদের মাসিক ঋতু (হায়েয) ও প্রসবকালীন রক্ত (নিফাস্) জারী হলে।
২৫. রমযান মাসে সুবহে সাদিক্বের পূর্বে স্ত্রী সহবাসে নিয়োজিত হলো, সুবহে সাদিক্ব হওয়ার সাথে সাথে পৃথক হয়ে রমযানের রোযা শুরু করে দিলে, উক্ত দিনের রোযার ক্বাযা করা ভাল। কাফফারা নয়।
২৬. রোযাবস্থায় ভুলবশতঃ স্ত্রী সঙ্গমে নিয়োজিত হলে, স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে পৃথক হয়ে গেল, তাহলে ক্ষতি নেই, কিন্তু স্মরণ হওয়ার পরও যদি সহবাস অবস্থায় থেকে যায়, তাহলে উক্ত দিনের ক্বাযা ওয়াজিব শগ্ধন; কাফফারা নয়।
২৭. হুক্কা, তামাক, সিগারেট পান করার দভঞ্ছণ রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা অপরিহার্য হয়। [আলমগীরী, রদ্দুল মুহতার ও বাহরে শরীয়ত ইত্যাদি]

মাসআলাঃ মুসাফির সফর থেকে রমযান মাসের দিনের বেলায় স্বদেশে ফিরে আসলে, মহিলারা হায়য-নেফাস থেকে রমযানের দিনের বেলায় পবিত্র হলে, মজনূনের (পাগল) জ্ঞান ফিরে আসলে, রোগী রমযানের দিনের বেলায় রোগ হতে মুক্ত হলে, কেউ বাধ্য করে রোযা ভাঙ্গালে, পানি হঠাৎ করে গলার ভিতরে চলে গেলে ভোর (সুবহে সাদেক্ব) হওয়ার পর রাত আছে মনে করে সাহরী গ্রহণ করলে, ইফতারের সময় না হওয়া সত্ত্বেও সূর্য অস্ত গিয়েছে মনে করে ইফতার করলে, এমতাবস্থায় দিনের বাকী অংশ রোযার মত অতিবাহিত করা ওয়াজিব, পরে ক্বাযাও ওয়াজিব। অবশ্য নাবালেগ অথবা কাফির যদি রমযানের যে কোন দিনে বালেগ অথবা মুসলমান হয় তবে পরবর্তীতে উক্ত দিনের ক্বাযা রোযা তাদের উপর ওয়াজিব নয়। কিন্তু উক্ত দিনের বাকি সময়টুকু রোযাদারের মত অতিবাহিত করা অপরিহার্য। [দুররুল মোখতার ও কানূনে শরীয়ত]

মাসআলাঃ মৃত ব্যক্তির যিম্মায় যদি রোযার ক্বাযা থাকে এবং তিনি সম্পদও রেখে যান আর রোযার ফিদিয়া আদায় করার জন্য ওলি-ওয়াংরলানকে ওসীয়ত করে যান তবে অবশ্যই যেন তার পক্ষ হতে প্রতি রোযার বিনিময়ে গরীব-মিসকীনকে ফিদিয়া আদায় করা হয়. রোযার ফিদিয়া হল অর্ধ সা বা দুই সের তিন ছটাক আধা তোলা= ২ কেজি ৫০ গ্রাম গম বা আটা অথবা সমপরিমাণ মূল্য প্রতিটি রোযার বিনিময়ে প্রদান করবে। হ্যাঁ, যদি তিনি ওসীয়ৎ নাও করে যান, কিন্তু সম্পদ রেখে যান তবে ওলী-ওয়ারীশান মৃত ব্যক্তির ক্বাযা নামায ও ক্বাযা রোযার ফিদিয়া আদায় করা খুবই উপকারী ও উত্তম। [বাহারে শরীয়ত: ৫ম খন্ড]

মাসআলাঃ শিশুর বয়স দশ বছর হওয়ার পর যদি রমযান শরীফের রোযা রাখার শক্তিমান হয়, তবে যেন তাকে রোযা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়, না রাখলে যেন বাধ্য করা হয়। অবশ্য দশ/এগার বৎসরের অপ্রাপ্ত বয়সের শিশু রমযান শরীফের রোযা রাখার পর ভঙ্গ করলে ক্বাযা আদায়ের নির্দেশ দেওয়া যাবে না। কিন্তু নামাযের বেলায় পুনরায় পড়ার নির্দেশ প্রদান করবে। [রদ্দুল মুহ্তার ইত্যাদি]
আপনরা পছন্দের আরো দেখুন

আপনার প্রশ্ন-পরামর্শ কিংবা অনুরোধ জানাতে...