Table of Contents
মীযানুল আখবার বই - আলিম শ্রেণির একাডেমিক বই
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী আলিম ক্লাসের জন্য লিখিত।কানযুল আসরার আরবি-বাংলা মীযানুল আখবার
মূল: আল্লামা মুফতী আ'মীমুল ইহসান আল-মুজাদ্দেদী আল-বরকতী (রহ:)
সাইয়েদ মুফতী আমীমুল ইহসান (র)-এর জীবনী
পরিচয়: তাঁর নাম মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান। তিনি মুফতী হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি মুজাদ্দেদী তরীকাভুক্ত সাইয়েদ আবু মুহাম্মদ আলী শাহ সাহেবের মুরীদ ও জামাতা ছিলেন বলে নিজ নামের সাথে মুজাদ্দেদী ও বারাকাতী এ দু'লকব (উপাধি) যোগ করতেন।
জন্ম: সাইয়েদ মুফতী আমীমুল ইহসান ২২শে মুহাররম ১৩২৯ হিজরী/২৪শে জানুয়ারি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বিহার প্রদেশের মুখের জেলার অন্তর্গত পাচান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বংশনতা: তাঁর বংশ পরস্পরা হযরত ইমাম হুসাইন (রা) পর্যন্ত পৌঁছে। এ জন্য তিনি হুসাইনী সাইয়েদ বলে সুপরিচিত ছিলেন।
প্রাথমিক জীবন: মুফতী সাহেবের শ্রদ্ধেয় পিতা মৌলভী হাকীম সাইয়েদ আবুল আজীম মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান কলকাতার জানুয়াটুলী মহল্লায় বসতি স্থাপন করেন এবং সেখানে তিনি একটি মসজিদ, একটি দাওয়াখানা ও একটি হালকায়ে যিকির স্থাপন করেন। সেখানেই মুফতী আমীমুল ইহসান শিশুকাল অতিবাহিত করেন। তিনি পাঁচ বছর বয়সেই পবিত্র কুরআন খতম করেন। বাল্যকাল হতেই তাঁর মধ্যে জ্ঞানার্জনের দুর্বার গৃহা অনুভূত হয়।
জ্ঞানার্জন : এ মহান সাধক প্রাথমিক জীবনে স্বীয় চাচা আব্দুদ দাইয়ান -এর নিকট ফার্সী ও উর্দু ভাষা শিক্ষা করেন। অতঃপর কয়েকজন প্রসিদ্ধ আলেমের নিকট কুরআন, হাদীস, ফিক্স, আরবি, কালাম, মান্টিক এবং তাসাউফের শিক্ষা লাভ করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যুর পর মাত্র ১৩ বছর বয়সে তদস্থলে মসজিদ, দাওয়াখানা ও হালকায়ে বিকির পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা হতে তিনি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ফায়িন, ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কামিল (হাদীস) পরীক্ষায় পাস করেন। উভয় পরীক্ষা প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে বিরল কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
অতঃপর তিনি অবসর সময়ে বিশেষ ব্যবস্থায় শাহছুল ওলামা মাওলানা ইয়াহইয়ার নিকট ইলমুল হায়াত এবং শামছুল ওলামা মাওনারা সুলতান আহমদ কানপুরীর নিকট মা'কুলাত শিক্ষা গ্রহণ করেন। আধ্যাত্মিক সাধনা ক্ষেত্রে এ মহান তাপস বিশেষ সাফল্যের সাথে নকশেবন্দী ও মুজাদ্দেদী তরীকার অনুসরণ করতেন।
কর্মজীবন : মুফতী আমীমুল ইহসান ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কুলুটোলাস্থ "বাধোদা" মসজিদের মাদ্রাসার প্রধান মুদাররিস পদে নিযুক্ত হন। পরবর্তী বছর তিনি মসজিদের দারুল ইফতা বা ফতোয়া বিভাগের 'মুফতী' পদে নিযুক্ত হন। তদানীন্তন বাংলার প্রাদেশিক সরকার তাঁকে 'কার্জী'র পদে নিয়োগ করেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত হন এবং কার্জীর পদ ইস্তফা দেন।
বাংলাদেশে আগমন: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাগের পর যখন ঢাকায় মাদ্রাসা-ই-আলিয়া স্থানান্তরিত হয়, তখন অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে তিনিও ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা শহরের কুলুটোলার মসজিদ সংলগ্ন বাড়িতে বসতি স্থাপন করেন। তিনি মসজিদটির সংস্কার সাধন করে তদসঙ্গে একটি মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেন।
১১৪৬ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান সরকার তাঁকে ধর্মীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত করেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার হেত, মাওলানা পদে প্রমোশন লাভ করেন এবং ১৯৬৯-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উক্ত পদে বহাল থাকেন।
শেষ জীবন: জীবনের শেষ ভাগে তিনি ঢাকা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ হতে মৃত্যু পর্যন্ত এ দায়িত্বে বহাল ছিলেন।
রচনাবলী: তিনি প্রায় একশ' গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থাবলী দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল-
১. কাওয়ায়েদুল ফিক্হ
২. জীবানুন আধবার।
৩. ফিক্হসুনান ওয়ান আহার।
৪. ইতিহাফুল আশরাফ।
৫. ফাতওয়ায়ে বারাকাতীয়া।
৬. আদাবুল মুফতী।
৭. মানাহেজুস্ সোয়াদা।
৮. তারিখু ইলমিল ফিক্হ
৯. তারিখু ইলমিল হাদীস।
১০. আততানবীর ফি উসুলিত তাফসীর।
১১. সীরাতে হাবীবে ইলাহ।
১২. হাদীয়াতুল মুহাল্লীন।
পরলোকগমন: পাকভারত উপমহাদেশের খ্যাতনামা আলেম জগদ্বিখ্যাত জ্ঞান-তাপস সাইয়েদ মুফতী আমীমুল ইহসান (র) ঢাকা শহত্রের কুলুটোলাস্থ নিজগৃহে ১০ই শাওয়াল, ১৩৯৪ হিজরী মোতাবেক ২৭শে অক্টোবর, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন। মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বের কক্ষে তাঁকে দাফন করা হয়।