আমাদের সাইটের নতুন আপডেট পেতে এ্যাপ্স ইন্সটল করে রাখুন Install Now!

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কৌশল (Memory Enhancement Techniques) - অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কৌশল (Memory Enhancement Techniques) - অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
Join Telegram for More Books

 স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কৌশল

- অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
লেখক, পরিচালক ও অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা

(toc)

স্মরণশক্তি বৃদ্ধিসংক্রান্ত এই প্রবন্ধে শেখার পদ্ধতি, কিছু প্রয়োজনীয় উপদেশ, কৌশল এবং কিছু আধুনিক ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা জানি মানুষের ভেতরে শেখার সপৃহা এবং শক্তি বৃদ্ধি না পেলে তার ভেতর আলোকিত মানসিক উৎকর্ষতার উন্মোচন সম্ভব নয়।

বেশ কয়েকটি ধাপে বিস্তৃতভাবে বোঝানো হয়েছে আসলে মেধা, মনন, স্মৃতি এবং এগুলোর সাথে শেখার পদ্ধতির সমন্বয় একজন প্রকৃষ্ট মানুষের মানবিকতা এবং ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্তি ত্বরান্বিত ও দৃঢ় করে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এখন ব্যাপকভাবে মনোবিজ্ঞানীরা কাজ করছো মানুষের মনের যে অংশটুকু অবচেতন থাকে তাতে পূর্ণ চেতনা ফিরিয়ে এনে তাকে আরো বেশি জ্ঞান গ্রহণ উপযোগী করে তোলার ব্যাপারে। বিভিন্ন প্রকার সাইকোঅ্যানালাইসিস বা মনোসমীক্ষণ এ ব্যাপারে খুব প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে।

আমার দীর্ঘ জীবনের মনোবিজ্ঞান চর্চার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, মানুষের স্মরণ এবং মেধার বৃদ্ধিতে খুব জটিল কোনো কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। কেবল ইচ্ছা এবং কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ এ ব্যাপারে রপ্ত করা উচিত। এতে করে পূর্ণ মাত্রায় সুষম ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা যেতে পারে সহজেই। পৃথিবী যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে করে বুদ্ধিমত্তা, মেধা, প্রজ্ঞা এবং স্মরণশক্তির তীক্ষ্নতা না থাকলে জীবনে সাফল্য আশা করা একেবারেই বৃথা।

স্মৃতিশক্তি কী

মনোবিজ্ঞানে বহু বছর যাবৎ এ বিষয়ে তর্ক চলছে যে, আসলে স্মৃতিশক্তি কী? সহজভাবে এর উত্তর না দিয়ে প্রথমে একটু ঘুরিয়ে এর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা যাক। ধরা যাক শনিবারের মধ্য দুপুরে কোনো এক ব্যক্তি একটি কাব্য রচনা করল। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে উক্ত ব্যক্তি শনিবারে সে যে কবিতাটি লিখেছিল তার প্রথম দুই পঙক্তি পুনরায় লিখতে চাইল।

কিন্তু সমস্যা দেখা দিল তখনই যখন সে তা মনে করতে পারছিল না। এক্ষেত্রে সে বারবার তা মনে করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো অর্থাৎ তার স্মরণশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সে ভুলে গেছে সে গত শনিবার কী লিখেছিল। এটা হচ্ছে মানুষের জীবনের একটা খুব সাধারণ সত্য যে, মানুষ ভুলে যায়।

আমেরিকান একজন মনোবিজ্ঞানী এ ব্যাপারটিকে 'থিংগামায়' বলে থাক। ভুলে যাওয়া, মনে করা, আবার ভুলে যাওয়া, আবার মনে করা মানুষের মানসিক জীবনের এক ধরনের বৈচিত্র্য। মানসিক ভাবমূর্তির প্রকৃত স্ফুরণ কেবল সজাগ মানসিকতাকেই বোঝায় না। মাঝেমধ্যে মানুষ ভুলে যাবে এটাও স্বাভাবিক। আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছু ভাবি, অনেক কিছু করে থাকি, অনেক সাধারণ কিংবা অসাধারণ দেনা- পাওনার সাথে সম্পৃক্ত হই।

এগুলো হচ্ছে জীবনযাপনের বাস্তব চিত্র। কিন্তু কোনো কোনো সময় এমন কিছু বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হয়, যা ভুলে গেলে একান্ত ক্ষতি হতে পারে। আমাদের চিন্তাশক্তির মতো স্মৃতিশক্তিকেও তাই বারে বারে পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। কোনো মানুষ আছেন দৃঢ় স্মৃতিশক্তির অধিকারী। মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমসের ধারণা, "মানুষের স্নায়ুকোষে রিডোনিউক্লেরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মানুষের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ এক সেকেন্ডে ১০ বিলিয়ন স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে পারে। খুব সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের স্মৃতিভ্রষ্টতা দুই প্রকারের হয়ে থাকে যেমন-

স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘস্থায়ী। স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিহীনতার জন্য সাধারণভাবে দায়ী করা হয় মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহের হঠাৎ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে। আর অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিহীনতার জন্য মস্তিষ্কের ভারসাম্যহীনতা সংক্রান্ত সমস্যা এবং রাসায়নিক উপাদানের আনুপাতিক অনুপস্থিতি দায়ী। পাশ্চাত্য মনস্তত্ত্ববিদ ডা. ম্যাকনোয়েল বিশ্বাস করো মস্তিষ্ক তরঙ্গের হঠাৎ বিচ্যুতি অনেক সময় মানুষের বুদ্ধিহীনতার জন্য দায়ী হতে পারে। এই ব্যাপারে তার বিস্তারিত গবেষণাকর্ম আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব সাইকোলজিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

মনোবিজ্ঞান কী ব্যাখ্যা দেয়?

মনোবিজ্ঞানের মতে, স্মৃতি বলতে আসলে কিছু নেই। প্রথমেই এই ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে এখনো মনোবিজ্ঞান বহু তর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই মানসিক রোগের ডাক্তাররা এমন ধরনের রোগীর শরণাপন্ন হন যারা বলে থাক- "আমি যা পড়ি তা ভুলে যাই' অথবা 'আমি আজ দুপুরে কী খেয়েছি তা মনে করতে পারছি না'-এ ব্যাপারগুলো কি স্মৃতিভ্রষ্টতা? না আসলে তা নয়। স্মৃতিশক্তি হলো মানসিক জ্ঞানের হঠাৎ কমতি।

ব্যক্তি হয়তো নিজেই বোঝে না তার মানসিক চিন্তাধারা থেকে কখনো কোনো নাম, ঠিকানা বা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের গতি বা বর্তমান সময়ের কার্যাবলির কোনো কোনো ব্যাখ্যা বাদ পড়ে যায়। যেটিকে আমরা সাধারণত স্মৃতিহীনতা বা স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা বলি। মনস্তাত্ত্বিক রোব্যাকের মতে, “অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির কল্পনা, পর্যবেক্ষণ, বিচার করার ক্ষমতা বা তার দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি এমন কোনো আচরণের প্রকাশ ঘটায়, যার কোনো অর্থ থাকে না। এ জাতীয় মানসিক মূল্যবোধকে মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় 'আপাত স্মৃতিভ্রষ্টতা' বলে অর্থাৎ কেবল কোনো কিছু ভুলে যাওয়াই স্মৃতিহীনতা নয়- ডা. রোব্যাক তাই ব্যাখ্যা করেছো।

বিভিন্ন প্রকার স্মৃতিশক্তি

ব্যাখ্যা এবং বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতায় স্মৃতিশক্তির কিছুটা প্রকারভেদও সম্ভব হয়েছে। যেমন দুই প্রকার স্মৃতিশক্তিকে মনোবিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পেরেছে। একটি হলো অভ্যাসগত স্মৃতিশক্তি এবং অপরটি হলো খাঁটি স্মৃতিশক্তি। সাধারণভাবে স্মৃতিশক্তিসংক্রান্ত আলোচনায় কিন্তু ঘাঁটি স্মৃতিশক্তির বিষয়টিই পূর্ণ মাত্রায় প্রকাশিত হয়েছে। 'গত গ্রীষ্মের ছুটি আমি কীভাবে কাটিয়েছি'-এই যে ভুলে যাওয়া, এটা হলো ঘাঁটি স্মৃতিশক্তিহীনতা।

আবার তাৎক্ষণিকভাবেই যদি এই বিষয়ে স্মরণশক্তি ফিরে আসে তবে সেটা হবে "চকিত পুনঃসংযোগ'। এই বিষয়টিকে আয়ত্ত করতে অর্থাৎ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কিছু মনে করতে কিছু অনুশীলন বা প্র্যাকটিস জরুরি। স্কুলের ছেলেমেয়েরা হরহামেশাই পড়া ভুলে যায়, গৃহিণীরা অভ্যন্ত দৈনন্দিন কর্মকান্ডেও ভুল করে ফেলে এমনকি যে কেউ যে কোনো সময় প্রয়োজনীয় কোনো বিষয় হঠাৎ করে ভুলে যেতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে স্মৃতিশক্তিকে আবার চাঙ্গা করতে নিচের ছকটির দিকে লক্ষ করো-

ক   ঙ   চ
ব   ঙ   ত
খ   অ   ন
এটি একবার পড়। বই বন্ধ করো এবং তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক ছকটির মতো লিখতে চেষ্টা করো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাবে প্রথম পাঁচটি বর্ণ এবং খ প্রায় সবাই লিখতে

পারবে। খুব কম লোক সাতটি এবং আরো কম সংখ্যক ব্যক্তি ৯টি বর্ণই পুরোপুরি লিখতে পারবে। এর কারণ হচ্ছে তাৎক্ষণিক স্মৃতি অধিকাংশ ব্যক্তি ধরে রাখতে পারে না বরং পুরনো স্মৃতি সহজে ধরে রাখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি দৃঢ় থাকে অথচ দৈনন্দিন কর্মকান্ডে তার কিছুটা ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। একে যুক্তিগত স্মৃতিশক্তিহীনতা বলে ।

স্মরণ করার উপায়

স্মরণ করার উপায় বা কোনো কিছু মনে করার উপায় সহজ নয় বরং কিছুটা জটিল কর্ম। বিভিন্ন প্রকার গবেষণায় বিভিন্নভাবে স্মরণ করার উপায় সম্পর্কে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তবে প্রথমত এবং প্রধানত তিনটি উপায়ে একজন ব্যক্তি কিছু স্মরণ করতে চাও । যেমন, এক-একজনের সাথে কথা বলে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। দুই-চিন্তা এবং মনকে একত্রে কাজে লাগিয়ে হারানো বিষয়ে মনে করতে থাকা এবং তিন-পুনঃপুনঃ চিন্তার দ্বারা হারানো ব্যাপারে মনোযোগ ফিরিয়ে আনা এবং তাকে স্মরণশক্তিতে ফিরিয়ে আনা। এ ব্যাপারটিকে ইংরেজিতে রিটেনশন বলে। তিনটি ব্যাপারকে আমরা যৌগিক মনে করি, মৌলিক নয়। বাস্তবে এই বিষয়গুলোই আসলে মৌলিক এবং হারানো কোনো কিছু স্মরণ করার প্রকৃষ্ট উপায় ।

স্মরণশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা

স্মরণশক্তির সাথে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক কী? আদৌ কোনো সম্পর্ক এদের মাঝে আছে কি? যদি কারো বুদ্ধিমত্তা খুব বেশি থাকে তবে কি তার স্মৃতিশক্তিও অধিক প্রখর? অথবা যদি কারো স্মৃতিশক্তি দুর্বল থাকে তবে কি তার বুদ্ধিমত্তাও নিচু মাত্রার? আসলে বুদ্ধিমত্তা হলো একটি কম্পিউটারের ইউনিটের মতো, যা তিনটি স্তরকে পরিচালনা করে। এই তিনটি বুদ্ধিমত্তাচালিত স্তর হলো- শেখা, পুনঃপুনঃ চিন্তা এবং অভিব্যক্তি। কাজেই স্মরণশক্তির সাথে বুদ্ধিমত্তার ওতপ্রোত কোনো মিল নেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো অশিক্ষিত কিংবা বুদ্ধিমত্তাহীন কোনো বালকের স্মরণশক্তি তীক্ষণ হয়ে থাকে। আবার চৌকস বুদ্ধিমত্তা থাকা সত্ত্বেও কোনো বালকের স্মরণশক্তির দুর্বলতা লক্ষণীয় হতে পারে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পার আঠারো শতকের অশিক্ষিত ইংরেজ গণিত শাস্ত্রবিদ জেডিয়া বাক্সটন (১৭০৫-১৭৭১) যার মৌলিক বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পড়াশোনা ছিল না অথচ তিনি গণিত শাস্ত্রের দুর্দান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। অর্থাৎ বাক্সটনের বুদ্ধিমত্তা প্রখর ছিল। কিন্তু লন্ডনের রয়েল সোসাইটি কর্তৃক প্রদত্ত এক সমমাননা অনুষ্ঠানে বাক্সটনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলতে পারনি প্রথম কোন অঙ্কের ফর্মুলাকে তিনি বিশেষণ করেছিলেন এবং এখানে বাক্সটন তার স্মরণশক্তির দুর্বলতার পরিচয় দেন।

ভালো স্মৃতিশক্তির সুবিধা

কোনো স্মৃতিশক্তি ভালো বলতে আমরা বুঝি যে, সে ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে তার স্মরণশক্তির প্রকাশ ঘটাতে পারে। অর্থাৎ তার ফটোগ্রাফিক স্মরণশক্তি ভালো। রাশিয়ান একজন মনোবিজ্ঞানী লুরিয়া এ ব্যাপারে দীর্ঘ গবেষণা শেষে সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছো।
লুরিয়ার মতে, ফটোগ্রাফিক মেমোরি হলো মানুষের ধ্যানস্থ বা আত্মস্থ কোনো
বিষয়ের বা চিন্তার তৎক্ষণাৎ বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের স্মৃতিশক্তিকে অর্থপূর্ণ চিন্তার দ্বারা আরো তীক্ষ্ন করে তোলা যায়।

আর কোনো পাঠক যদি এই জাতীয় অনুশীলন করো তবে আশা করা যায় দীর্ঘ সময় তার স্মৃতি যে কোনো পাঠ ধরে রাখতে পারবে। ভালো স্মৃতিশক্তি যে কোনো কাজে সাহায্য করতে পারে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে, চাকরির ক্ষেত্রে, শিক্ষকতার ক্ষেত্রে ভালো স্মরণশক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে একঘেয়েমি কাটিয়ে ওঠার জন্যও স্মৃতিশক্তি খুব ভালো কাজ করতে পারে। কাজেই প্রথমত স্মরণশক্তির ওপর জোর দিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা। সে জন্য একান্ত জরুরি। কেননা স্মৃতিশক্তি, মেধার বিকাশ ঘটে মানসিকভাবে। সুস্থ চিন্তা-ভাবনা, অর্থপূর্ণ কথোপকথন এবং সুস্থ দৈনন্দিন জীবন-যাপনে স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটতে পারে সহজেই।

আমরা কেন ভুলে যাই

অনেক ক্ষেত্রে আমাদের মানসিক চিত্র যা ধরে রাখতে চায়, মস্তিষ্কের তরঙ্গ তা অনেক সময় হারিয়ে ফেলে এবং আমাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। আমরা কেন ভুলে যাই এই ধারণাটি হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার আরো একটি কারণ হলো ঠিক যে সময়ে মস্তিষ্ক কোনো বিষয় নিয়ে ভাবতে চায় তখন মানসিক শক্তি সে বিষয়ে তার আন্তরিকতা প্রকাশ করে। একে 'ডিসকানেকটিভ থিংকিং' বলে। মৌলিক তিনটি কারণে মানুষ কোনো কিছু ভুলে যেতে পারে। কারণ তিনটি হলো-

১. দুর্বল চিন্তাধারা
২. অব্যবহার 
৩. হস্তক্ষেপ করা
এছাড়া আরো একটি ব্যাপার অবশ্য সব ক্ষেত্রে এটি মুখ্য নয়, তা হলো মানসিক চাপ। এটিও একটি কারণ কোনো কিছু ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে। আমরা এই কারণগুলোর কিছুটা ব্যাখ্যা খুঁজব।
দুর্বল চিন্তাধারা

মানুষের চিন্তাশক্তির দুর্বলতা কোনো কিছু ভুলে যাওয়ার জন্য দায়ী। মানসিক চিন্তা- ভাবনা করার ব্যাপারে সতর্কতা এই বিষয়ে আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। মানুষের মন হরহামেশাই নানা বিষয়ে ভাবতে থাকে। কখনো কখনো পূর্বে তাবিত কোনো বিষয়ে হঠাৎ করে আবার ভারতে চাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। এটি তাৎক্ষণিকভাবে মস্তিষ্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে কোনো কিছু হঠাৎ মনে করা সহজতর হয়ে ওঠে না।

এই বিষয়টি দুর্বল চিন্তাধারার সাথে সম্পৃক্ত। ডা. হেনরি নাইট মিলার তার 'প্র্যাকটিক্যাল সাইকোলজি' গ্রন্থে লিখেছেন, মানুষের মনে কখনো দ্বিমুখী ভাবধারা এক সাথে প্রকাশ পায় না। যেমন-কেউ কখনো এক সাথে একই মনে ভাবে না 'আমি সফল কিংবা 'আমি 'ব্যর্থ'।

এ প্রসঙ্গে একটি কেস স্টাডি ব্যাখ্যার প্রয়োজন- 'আমি কোনো নাম মনে রাখতে পারি না, স্থান কিংবা বইয়ের নামও মনে রাখতে পারি না এবং এই সমস্যা আমার চাকরির ক্ষেত্রে আরো জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। স্বাভাবিকভাবে তার চিকিৎসা করা হলো ছোটখাটো ডিপ্রেশন মুড কাটানোর ওষুধের মাধ্যমে।
আসলে তার চিন্তাশক্তির দুর্বলতার জন্য এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। সে কী ভাবতে চাচ্ছে সেদিকে সে মনোযোগী নয়। এর ফলে স্থান, কাল, পাত্র সে সহজে ভুলে যায়। এ জন্য কোনো কিছু যেন সহজে ভুলে না যায় তার জন্য যখন কোনো কিছু মনে রাখতে চাইবেন, তখন সে ব্যাপারের প্রতি পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ নিবন্ধ করতে হবে। এতে করে সফলতা আসতে পারে।

অব্যবহার

বহু ক্ষেত্রে অধিকতর জ্ঞান অর্জন ভালো সব স্মৃতিশক্তির কিছুটা বিলুপ্তি ঘটাতে পারে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মানুষের মস্তিষ্কের সব তরঙ্গই একসাথে কোনো কিছু মনে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু যখন অনেক জ্ঞানের চাপ মস্তিষ্কের তরঙ্গে প্রবাহিত হতে থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষ কিছু কিছু ব্যাপার ভুলে যেতেই পারে। নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এ আর গিলিল্যান্ড এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম যুক্তি দাঁড় করান যে, মানুষের অর্থবহ চিন্তার প্রাবল্য মস্তিষ্ক উর্বর করে তুলতে থাকলে, স্মৃতিহীনতা কাজ করতে পারে দ্রুত। একে তিনি 'দ্রুত স্মৃতিশক্তির অকর্মণ্যতা' বলেন। অতিরিক্ত পাঠ্যাভ্যাসজনিত স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া সমস্যা কমাতে জ্ঞানার্জনের একঘেয়েমি কাটানো উচিত। বিশেষ করে বিনোদনমূলক কার্যক্রম, টিভি দেখা, খবরের কাগজ পড়া, খেলাধুলায় মনোনিবেশ করা উচিত।

হস্তক্ষেপ

কোনো কিছু পড়ার পরে সে ব্যাপারটি ভুলে যাওয়ার জন্য হস্তক্ষেপ দায়ী। হস্তক্ষেপ এ ক্ষেত্রে চিন্তাশক্তির মাঝে একাগ্রতা জন্মাতে বাধা দেয়। অনেক মনোবিজ্ঞানীর ধারণা, এর কারণ মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্যহীনতা। কিন্তু বর্তমানে সুচারু গবেষণার ফলে জানা গেছে, মানসিক চিন্তাশক্তি ধরে রাখার পর্যায়ক্রমিক অনুপাত এ জন্য দায়ী।
ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের অধ্যাপক এ. সি এটকিন বলেন, মানুষের স্মরণশক্তির একটি ডিজিটাল রূপ আছে। এটি হলো মানুষ পর্যায়ক্রমে বা একাধারে ১২টি ডিজিটের বেশি মনে রাখতে পারে না এবং প্রায় প্রতিটি মানুষ কোনো কিছু কেনার পর একাধিকার টাকার হিসাব করে। এগুলো খুব সহজ ধরনের সাইকোলজি, কিন্তু স্মরণশক্তির ক্ষেত্র এর প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

মানসিক চাপ এবং স্মরণশক্তি

আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা দেখতে পাব মানসিক চাপ কীভাবে স্মরণশক্তির ওপর প্রভাব ফেলে। প্রথমত মানসিক চপের সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। মানসিক চাপ সাধারণত অবচেতন মনের ওপর খুব দ্রুত ক্রিয়া করতে পারে। আমরা যখন কোনো বিষয় নিয়ে নিখুঁতভাবে চিন্তা করতে থাকি, তখন মনের চাপ অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ডা. এলসির মতে, মানসিক চাপ অপ্রত্যাশিতভাবে অবচেতন মনের ওপর প্রভাব ফেলে এবং তাতে করে আমাদের স্মরণশক্তি কমে যেতে পারে। মনোবিশে- যকদের ধারণা, প্রাচীন যুগের মানুষের জীবনযাত্রার সীমাবদ্ধতা থাকায় তাদের মানসিক চাপ কম ছিল এবং সে কারণে তাদের স্মরণশক্তি ছিল ভীষণ তীক্ষ্ণ। নানা ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার চাপ বা কাজ কিছু সময়ের জন্য স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এজন্য মানসিক চাপের সাথে স্মরণশক্তির দুর্বলতার একটি মিল রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে আমাদের ভুলে যাওয়ার মৌলিক কারণগুলো এরকম দাঁড়ায়-

(ক) দুর্বল চিন্তাশক্তির জন্য কোনো কিছুর প্রতি সঠিক মনোযোগের অভাবে আমরা ভুলে যাই।
(খ) আমরা বারবার আমাদের স্মৃতিশক্তিকে পরিছন্ন রাখতে চেষ্টা করি না।
(গ) আমাদের স্মরণশক্তি নানা কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে আমরা কোনো কিছু ভুলে যাই।
(ঘ) আমাদের আত্মমানসিক ঘনত্বও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের স্মরণশক্তির ক্ষীণতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
(ঙ) আমাদের দৈনন্দিন মানসিক চাপ বিভিন্ন সময়ে আমাদের স্মৃতিশক্তিকে আঘাত করতে পারে। এছাড়া আরো কয়েকটি বিষয় আমাদের স্মৃতিশক্তি নষ্ট করতে পারে।

এর মধ্যে উলেখযোগ্য কারণগুলো হলো-মানসিক আঘাত বা মেন্টাল শক এবং শক থেরাপি। আর অপরটি হলো ওষুধের প্রতিক্রিয়া।
এছাড়া একেবারে নতুন একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, ধূমপান মানুষের স্মরণশক্তি কমিয়ে দিতে পারে। কিছু পরিমাণে উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবৃত হলো।

শক

মানসিক আঘাত বা মেন্টাল শক অনেক সময় স্থায়ীভাবে স্মরণশক্তি হ্রাসের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। লন্ডন ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিনের অধ্যাপক বার্নার্ড, ডি-এর মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানসিক আঘাত (কোনো দুর্ঘটনা, মৃত্যু, ডিভোর্স ইত্যাদি) ব্যক্তির মনোজগতে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো এর ফলে ব্যক্তির চিন্তাশক্তি এবং স্মরণশক্তির ওপরও অনেক চাপ পড়ে এবং এতে করে এই উভয় প্রকার শক্তির দুর্বলতা আসতে পারে। আবার শক থেরাপি বিভিন্ন প্রকার মানসিক রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয়তার ফলেও স্মরণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে ইসিটি বা ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপির ফলে স্মরণশক্তি হ্রাস পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

ওষুধ

বহু মাত্রার বহুবিধ ওষুধের দীর্ঘ ব্যবহার স্বাভাবিকভাবে মানুষের স্মরণশক্তি কমিয়ে দিতে পারে। ভুলে যাওয়া সমস্যা এবং অন্যমনস্ক সমস্যার জন্য ওষুধ নানা সমস্যার জন্য দায়ী হয়। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ ব্যবহারের ফলে 'ইলুশন' বা ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, যা মানুষের স্মরণশক্তি বিনষ্ট করতে পারে। সিগমন্ড ফ্রয়েড এ প্রসঙ্গে উলেখ করো- দীর্ঘস্থায়ী ওষুধের ব্যবহার মনোবৈকল্য এবং স্মৃতিবৈকল্য সূচনা করে। সে জন্যই তিনি সাইকোঅ্যানালাইসিসের দ্বারা ব্যাপকভাবে মানসিক রোগীদের মনোপ্রবৃত্তি ব্যাখ্যা-বিশে- ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করো। অনেক ক্ষেত্রে যাদের ওষুধের ব্যবহার ক্রনিক হয়ে দাঁড়ায় তাদের অধিকাংশের স্মৃতিশক্তি অপেক্ষাকৃত কম থাকে।

 ধূমপান

আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি গবেষণা করে প্রমাণ করতে পেরেছে, ধূমপান মানুষের স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট করে। এটি ক্রমাগত মানুষের মনোযোগের ধারার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ফলে স্মৃতি বিনষ্ট হয় খুব দ্রুত। ধারণা করা হয়, ধূমপান ছেড়ে দিলে অনেক ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তির পুনর্গঠন হতে পারে। কীভাবে মনে রাখবে পূর্বেই আলোচনা করেছি মানুষ কীভাবে এবং কেন ভুলে যায়। মোটামুটি চারটি কারণে মনে রাখার ক্ষমতা মানুষের কমে যেতে পারে যেমন-

- দুর্বল চিন্তাশক্তি
-পুনর্বার চিন্তা করার অসমর্থতা
- চিন্তাশক্তির মধ্যে হঠাৎ বিচ্যুতি মানসিক চাপ ইত্যাদি
আমরা এখন কীভাবে মনে রাখা যায় বা স্মরণশক্তি কীভাবে বাড়ানো বা বজায় রাখা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করব।
তাতে করে চারটি ব্যাপার আসে যে চারটি ব্যাপারে আমাদের সতর্কতা থাকলে কোনো কিছু ভুলে যাওয়া বা স্মরণশক্তি কমে যাওয়া সমস্যা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব। প্রয়োজনীয় সেই চারটি বিষয়-
-মনোযোগ বাড়ানো
- বারবার ভুলে যাওয়া বিষয়টিকে মনে করতে চেষ্টা করা।
-যথা সম্ভব চিন্তাশক্তির ভেতর যেন বিরতি বা ছেদ না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা 
- মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা এবং মানসিক চাপের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা 

চিন্তাশক্তি

আমরা পূর্বে চিন্তাশক্তির ব্যাপারে আলোচনা করেছি। দুর্বল চিন্তাশক্তি আমাদের স্মৃতি কমিয়ে ফেলতে পারে, এ ব্যাপারেও আমরা জানতে পেরেছি। গভীর চিন্তার প্রয়োগ দ্বারা কোনো কিছু মনে করা যায় সহজেই।
তুমি যদি কোনো কিছুর প্রতি মনোযোগী হন, তাহলে সেই ব্যাপারটি দীর্ঘ সময় তুমি মনে রাখতে পারবে। মনোযোগের বিষয়ে চারটি মূল ভিত্তির ব্যাপারে আমাদের ধারণা থাকা উচিত। এগুলো হলো-
-অভ্যাস (Habit)
- আগ্রহ (interest)
- রিলাক্সেশন (relaxation)
- আবেগ (emotion )

ইংরেজিতে এই চারটি শব্দকে একত্রে মিলিয়ে বলা হয় 'Hire'. অনেক মনোবিজ্ঞানী এই চারটি বিষয়বস্তু মানুষের মনোজগতের চিন্তাশক্তির ব্যাপকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করো। আন্তঃমানসিক দ্বন্দ্ব অধিক হারে আমাদের মানসিক শক্তি কমাতে পারে। আমাদের অনেকেরই এই ধরনের আন্তঃমানসিক দ্বন্দ্বের সমস্যা রয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রয়েডের বিভিন্ন অনুসারী ক্রমান্বয়ে মানসিক দ্বন্দ্ব সম্বন্ধে বিস্তারিত গবেষণা করো।

অবশ্য আরো আগে এমিল জাপলিন এই ব্যাপারে বেশ কিছুদিন গবেষণা করেছিলেন। স্মরণশক্তির সাথে আরো যে একটি বিষয় খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত তা হলো আবেগ এবং আবেগজনিত আগ্রহের প্রভাব। কোনো কাজ, কথাবার্তা এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সাথে গভীরভাবে আবেগ এবং আগ্রহ জড়িত না থাকলে আমাদের স্মৃতি প্রখর হতে পারে না। মোটামুটিভাবে মনোযোগের শক্তি বেড়ে গেলেই ধরে নেয়া অসংগত হবে না যে স্মৃতিশক্তিও সেই সাথে বেড়ে যায় ।

 পুনঃপুনঃ মনে করার চেষ্টা

এই বিষয়টি খুব ভালো কাজ দেয় যে কেউ কখনো কোনো বিষয় ভুলে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে যদি পুনঃপুনঃ মনে করার চেষ্টা করে, তবে এতে সাফল্য আসে। এই বিষয়টি হলো রিপিটেশন। আমি কেন সেই বিষয়টি খেয়াল করতে পারব না, এই কথাটি জোর দিয়ে চিন্তা করলেই স্মৃতিশক্তি কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠবে। পুনঃপুনঃ চেষ্টা করার ক্ষেত্রে কয়েকটি জরুরি বিষয় মনে রাখা উচিত-
- বিষয়টির ব্যাপারে বোধগম্যতা
-বারবার পড়া
- আবৃত্তির মতো পড়তে থাকা
-পুরো বিষয়টা কী ছিল তা ভাবতে থাকা
চিন্তাশক্তির মধ্যে বিরতি
এটি হচ্ছে স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার তৃতীয় কারণ। বাস্তবে এটি সমস্যাকে তীক্ষণ করে তোলে। কোনো কিছু মনে করার সময় অহেতুকভাবে তাতে যদি অন্য কোনো চিন্তার উপস্থিতি ঘটে তবে স্মরণশক্তি দ্রুত হ্রাস পায়। বিভিন্নভাবে এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমাধানগুলো হলো-
নিশ্চিত হও তুমি কোন বিষয়টি মনে করতে চাইছেন।
- যখন এই বিষয়টি ভাববেন তখন অন্য কোনো ব্যাপারে চিন্তা করবে না।
- সময় লাগলেও একই ব্যাপারে বারবার চিন্তা করতে থাক।
- ডাইরিতে এই বিষয়ে কিছু লেখা আছে কিনা খেয়াল করো। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যারা গণিত ভালোমতো মনে রাখতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। মনোবিজ্ঞানী ওয়েবার ডি স্যামুয়েলের মতে, মানুষ সহজে গণিতের সূত্র ভুলে যায়, কেননা অনেক ক্ষেত্রে একে নির্জীব এবং প্রাণহীন মনে করা হয়। অথচ গণিতের সূত্র মনে রাখাই সবচেয়ে সহজ। গণিতের সূত্র মনে রাখার শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হলো পুনঃ স্থাপন পদ্ধতি। এই পদ্ধতির দ্বারা গণিতের প্রথম থেকে শেষ এবং শেষ থেকে শুরু পর্যন্ত মনে রাখা সম্ভব হয়।

 মানসিক চাপ মোকাবিলা

মানসিক চাপ মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে স্মরণশক্তি বাড়ানো ততটা সহজ হয় না। তবে এই প্রসঙ্গে ঘুমজনিত সমস্যার ব্যাপারে ছোটখাটো আলোচনা করা উচিত। ঘুম মস্তিষেক নিউরনগুলোকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে রাখে।
এতে করে মস্তিষ্কের উর্বরতা বাড়ে। অনেক সময় নানা প্রকার হ্যালুসিনেশন এবং ডিলিউশনের জন্য অনিদ্রা এবং এর ক্রনিক উপসর্গগুলোকে অভিযুক্ত করা হয়। স্মরণশক্তিকে চাঙ্গা করতে সতর্ক থাকা উচিত হবে ঘুমের ব্যাপারে। ফ্রয়েডের মতে, ঘুমের স্বল্পতা বহুমাত্রিক ডিপ্রেশন সৃষ্টি করতে পারে, আবার ঘুমের স্বল্পতার জন্য মানসিক চাপ বাড়তে পারে, যা স্মরণশক্তিহীনতার জন্য দায়ী। এ ডিকশনারি অব প্যাস্টোরাল সাইকোলজি' গ্রন্থেও বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে মানসিক চাপের ব্যাপারে।

এই গ্রন্থটির বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ আছে, মানসিক চাপ পর্যায়ক্রমে মানুষের মস্তিষ্কের যৌগিক কোষগুলোয় চাপ ফেলতে থাকার ফলে মানুষের মেধা ও স্মরণশক্তি কমে যায়। মোটামুটিভাবে এ ব্যাপারটি আমরা এই পর্যায়ে বুঝতে পেরেছি যে, কেবল স্মরণশক্তি বাড়ানো বা কোনো কিছু ভুলে না যাওয়ার জন্য একাগ্রতা এবং হারানো বিষয়টি বারবার মনের ভেতর খুঁজতে থাকা উচিত। চারটি প্রধান বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখলেই মানুষের স্মরণশক্তিসংক্রান্ত সমস্যা দূর হতে পারে যেমন-

- কোনো কিছুর প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়া যে বিষয়টি তুমি ভাবতে চাও ।
- পরিপূর্ণভাবে বিষয়টি মনে না পড়া পর্যন্ত ভাবতে থাক ।
- চিন্তাধারাগুলোকে একত্রিত করা এবং তা থেকে হারিয়ে যাওয়া বিষয়টি বাছাই করা। এতে করে আমাদের ভুলে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যার আশানুরূপ সমাধান আসতে পারে। তবে মনে রাখা উচিত যে বিষয়টি তুমি মনে করতে চাচ্ছেন, তাতে যেন তোমার পূর্ণ আগ্রহ থাকে। নইলে তা মনে করা কষ্টসাধ্য হতে পারে।
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.