Table of Contents
অনুচ্ছেদ : বাংলা ২য় পত্র - নবম ও দশম শ্রেণি, এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা (৪র্থ পর্ব)
(toc)
বাক্য মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। কিন্তু সব সময় একটি বাক্যের মাধ্যমে মনের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। এজন্য প্রয়োজন একাধিক বাক্যের। মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত বাক্যের সমষ্টিই অনুচ্ছেদ। অনুচ্ছেদে কোনো বিষয়ের একটি দিকের আলোচনা করা হয় এবং একটি মাত্র ভাব প্রকাশ পায়। অনুচ্ছেদ রচনার ক্ষেত্রে কয়েকটি দিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। যেমন-
- একটি অনুচ্ছেদের মধ্যে একটি মাত্র ভাব প্রকাশ করতে হবে। অতিরিক্ত কোনো কথা লেখা যাবে না।
- সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো বাক্যের মাধ্যমে বিষয় ও ভাব প্রকাশ করতে হবে।
- অনুচ্ছেদটি খুব বেশি বড় করা যাবে না। লিখতে হবে একটি মাত্র প্যারায়। কোনোভাবেই একাধিক প্যারা করা যাবে না।
- একই কথার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- যে বিষয়ে অনুচ্ছেদটি রচনা করা হবে তার গুরুত্বপূর্ণ দিকটি সহজ-সরল ভাষায় সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে। অনুচ্ছেদের বক্তব্যে যেন স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রকাশ পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমাদের লোকশিল্প
দেশি জিনিস দিয়ে দেশের মানুষের হাতে তৈরি শিল্পসম্মত দ্রব্যকেই লোকশিল্প বলা হয়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাপন ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের সাথে লোকশিল্পের নিবিড় যোগাযোগ বিদ্যমান। নানা ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পে আমাদের দেশ সমৃদ্ধ। ঢাকাই মসলিন নিয়ে আজ অবধি আমরা গর্ববোধ করি। লুপ্তপ্রায় নকশিকাঁথা আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের স্মারক। আমাদের দেশের লোকশিল্প বিভিন্ন রূপে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে প্রাধান্য পেয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা, টাঙ্গাইল, সাহজাদপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এলাকার তাঁতশিল্প উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের জামদানি, খুলনার মাদুর, সিলেটের শীতল পাটি আমাদের সবার পরিচিত। বাংলাদেশের মৃৎশিল্পীদের তৈরি পোড়ামাটির কলস, হাঁড়ি, পাতিল, সানকি, ফুলদানি, পুতুলও আমাদের লোকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গ্রামের ঘরে ঘরে শিকা, হাতপাখা, বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র, কাপড়ের পুতুলও আমাদের দেশের মানুষের রুচির পরিচায়ক। লোকশিল্প যেমন আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে তেমনি বিদেশি মুদ্রা উপার্জনেও অবদান রাখে। এর ভেতর দিয়ে দেশের অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। তাই লোকশিল্পের সংরক্ষণ ও স¤প্রসারণের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশ দূষণ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর। জীবনযাপন তাই এখন অনেক আধুনিক, অনেক সহজ। কিন্তু তা করতে গিয়ে মানুষ পরিবেশ ধ্বংসের নেতিবাচক দিকে লক্ষ রাখছে না। মানুষসহ অন্যান্য জীবজন্তু পরিবেশও প্রকৃতির অংশ। প্রকৃতির দানেই মানুষ নানা আঙ্গিকে নিজের জীবনকে সাজিয়ে তুলেছে। অথচ অবিবেচক মানুষদের কারণেই পরিবেশ আজ ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ মূলত দুটি কারণে ঘটে। একটি হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণ আর অন্যটি মানবসৃষ্ট কারণ। বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণের পেছনে মানুষের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। জনসংখ্যার বিস্ফোরণের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ- বায়ু, পানি, মাটির ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ছে। বনজ সম্পদ ধ্বংসে রীতিমতো উৎসব চলছে বিশ্বজুড়ে। ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাতাসে ধুলোবালি, কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া, কীটনাশক ইত্যাদির উপস্থিতি বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। কলকারখানার বর্জ্য, কীটনাশক ইত্যাদি পানিকে করে তুলেছে বিষাক্ত। হাজারো রকমের উৎকট শব্দের কারণে শব্দদূষণ ঘটছে। নষ্ট হচ্ছে মনের শান্তি। ক্ষতিকর রাসায়নিক ও যত্রতত্র আবর্জনা ফেলায় দূষিত হচ্ছে মাটি। এভাবে দূষিত হতে থাকলে একসময় পরিবেশের ভারসাম্য সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে এই বিশ্ব জীবের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। বিশ্বের পরিবেশবাদীরা চেষ্টা করছেন এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে। নেওয়া হচ্ছে নানামুখী পদক্ষেপ। উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ-এ দুয়ের মাঝে সমন্বয় সাধনের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে জনসংখ্যার বৃদ্ধি রোধ ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা ব্যাপক ভিত্তিতে তৈরি না হলে পরিবেশ দূষণ কমানো সম্ভব হবে না। পরিবেশ দূষণ যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সবারই ভ‚মিকা রাখা উচিত। সকলের সচেতনতাই আমাদের পরিবেশকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে পারে।
যানজট
যানজট বলতে বোঝায় যানবাহনের জট। রাস্তায় যানবাহন যখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পেরে অস্বাভাবিক জটের সৃষ্টি করে তখন তাকেই আমরা যানজট বলে থাকি। যানজট জনবহুল এই বাংলাদেশের এক বিরাট সমস্যা। এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় শহরগুলোতে, বিশেষত রাজধানী ঢাকাতে। যানজটের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার শহরাঞ্চলের প্রতিটি মানুষ। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে শহরগুলো প্রতিনিয়ত মানুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। জনগণের প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে যানবাহনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা তৈরি করছে যানজট। এছাড়া রাস্তার স্বল্পতা, অপ্রশস্ততা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ট্রাফিক আইন অমান্য করাই হচ্ছে যানজটের অন্যতম কারণ। যানজটের ফলে নষ্ট হয় অসংখ্য কর্মঘণ্টা। প্রয়োজনীয় কাজগুলো যথাসময়ে করা সম্ভব হয় না। প্রায়ই ঘটে মারাত্মক সব দুর্ঘটনা। এভাবে যানজটের কারণে ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যানজট সমস্যা দূর করার জন্য অত্যন্ত কঠোরভাবে ট্রাফিক আইন পালন করাই হতে পারে এক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ। নগর উন্নয়নের জন্য পরিচালিত কর্মকাণ্ডগুলোও হওয়া উচিত সুপরিকল্পিত। শহরগুলোর যানজট সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কোনো বিকল্প নেই।
কম্পিউটার
বিবর্তনের সোপান বেয়ে আসে সভ্যতা। এর ফলে সৃষ্টি হয় নানা বিস্ময়কর জিনিস। বর্তমানে আমরা কম্পিউটারের যুগে উত্তীর্ণ হয়েছি। কম্পিউটার যুগ বলতে বোঝায় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যুগ। আর কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র, যা মানুষের মস্তিষ্কের বিকল্প। কম্পিউটার ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল কাজ অনুগত ভৃত্যের মতো হুকুম তামিল করতে সদা প্রস্তুত। কম্পিউটারের মাধ্যমে জীবনযাত্রার সকল পর্যায়ের অত্যন্ত জটিল কাজ খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব। কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি কম্পিউটার এমন হিসাবÑনিকাশ করতে পারে যা একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গণিতজ্ঞের কয়েক বছর সময় প্রয়োজন হবে। দ্রুততম কম্পিউটারগুলো লক্ষ লক্ষ সমস্যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সমাধান করতে পারে। কোনো ধরনের ত্রুটি ছাড়াই এটি একই সময়ে অনেকগুলো কার্যক্রম চালাতে পারে। আজকাল কম্পিউটার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ব্যবসা চালাতে পারে, শিক্ষা প্রদান করতে পারে, বিমান চালাতে পারে, এমনকি সংগীত সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের উচিত দেশের উন্নয়নের জন্য কম্পিউটার প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। তাহলেই আমরা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক জাতি গড়তে পারব।
ইন্টারনেট
আধুনিক যোগাযোগের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নাম ইন্টারনেট। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো ব্যবহার করে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো ইন্টারনেট। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে বহুল আলোচিত ও সবচেয়ে গতিশীল যোগাযোগ ব্যবস্থা এটি। ইন্টারনেটকে বলা হয় নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটের অবদানের ফলে এক যুগ আগে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যা ছিল অসম্ভব বা অকল্পনীয়, বর্তমানে তা চোখের পলকে সাধিত হচ্ছে। তথ্য আদান-প্রদান থেকে শুরু করে বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষের সাথে আড্ডা, সম্মেলন, শিক্ষা, বিপণন, অফিস ব্যবস্থাপনা, বিনোদন ইত্যাদি ইন্টারনেটের সাহায্যে করা যাচ্ছে। মাল্টিমিডিয়ার বিকাশের সাথে সাথে প্রতিদিন এর সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হচ্ছে। এক দেশের মানুষ ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্য দেশের চিকিৎসকের নিকট থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এক দেশে বসে অন্য দেশে জিনিসপত্র কেনাকাটা সম্ভব হচ্ছে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে ঘরে বসেই কোনো শিক্ষার্থী বিশ্বের বড় বড় লাইব্রেরির শ্রেষ্ঠ বইগুলো পড়তে পারছে। অল্প খরচে পৃথিবীর এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে। মানুষ তার জীবনকে অনেক আনন্দের সাথে উপভোগ করতে সক্ষম হচ্ছে ইন্টারনেটের কল্যাণেই। বাংলাদেশও এই প্রযুক্তিতে পিছিয়ে নেই। ইন্টারনেটের প্রতি মানুষের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ব্যবহারে শিক্ষা, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে আসছে আধুনিকতা। মোটকথা, ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও যোগাযোগে সেতুবন্ধ সৃষ্টি করেছে।
শীতের সকাল
শীতের সকাল অন্যসব ঋতু থেকে আলাদা। কুয়াশার চাদরে মোড়া শীতের সকাল হাড় শীতল করা ঠাণ্ডা নিয়ে দেখা দেয়। এ সময় এক ফালি রোদ সকলের কাছে বহুল প্রতীক্ষিত হয়ে ওঠে। শীতের সকালে মানুষের মাঝে এক অজানা অলসতা ভর করে। লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকাতেই যেন তখন স্বর্গীয় সুখ অনুভ‚ত হয়। কুয়াশার অন্ধকারে সূর্যদেবতার দেখা পাওয়া ভার। তাই সকালের উপস্থিতি টের পাওয়াও কষ্টকর। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা শীতকেও দূরে সরিয়ে দেয়। তাই আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই হয় সকলকে। নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। শীতের সকালে প্রকৃতি ও প্রাণীর মধ্যে এক ভিন্ন আমেজ লক্ষ করা যায়। মানুষ, জীবজন্তু, পাখ-পাখালি শীতের বেলায় সূর্যের প্রত্যাশায় প্রহর গুনতে থাকে। শীতের সকালের প্রকৃত আনন্দ গ্রামীণ জীবনেই খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলার গ্রামগুলোতে শীতের সকাল বেশ মনোরম হয়। গ্রামের মাঠে মাঠে শীতের প্রভাব বেশ চোখে পড়ে। শীতের কুয়াশা ভেদ করে নিজ নিজ গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে বের হয় গ্রামের কর্মঠ মানুষেরা। সূর্যের দেখা পাওয়া মাত্রই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রোদ পোহাতে শুরু করে। গ্রামের মানুষেরা খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীতকালে উষ্ণতা খুঁজে ফিরে। শীতের সকালে গ্রামের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত হলো পিঠা-পুলি খাওয়ার মুহূর্ত। গাছে গাছে খেজুরের রসের হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। এ রস দিয়ে নানা রকম পিঠা বানানো হয়। গ্রামীণ জীবনের আবেদন ইট-কাঠ-পাথরের শহুরে জীবনে পাওয়া যায় না। শহরে দেখা যায় বারান্দায় বসে রোদ পোহানোর দৃশ্য কিংবা গরম চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে খবরের কাগজ পড়ার দৃশ্য। লেপ জড়ানো কর্মব্যস্ত মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের পরেও আরও একটু ঘুমিয়ে নিতে চায়। কিন্তু জীবিকার টানে তকে আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতেই হয়। সর্বোপরি সকলের কাছেই শীতের সকাল হয়ে ওঠে বৈচিত্র্যময়।
বিশ্বায়ন
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। বিশ্বায়ন মূলত পারস্পরিক ক্রিয়া ও আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী একটি পদ্ধতি। বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের মাঝে এটি সমন্বয় সাধন ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। পরিবেশ, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পদ্ধতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি এবং মানবিক ও সামাজিক অগ্রগতি; সবকিছুর ওপরই এর সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়। জাতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সাথে একীভ‚তকরণের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ‘বিশ্বায়ন’ শব্দটির অধিকতর ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেকে এ প্রক্রিয়াকে নতুন হিসেবে উল্লেখ করে একে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে বহু পূর্ব থেকেই এ প্রক্রিয়াটি বিশ্ব জুড়ে চলমান রয়েছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারার মধ্যেই এর উৎস নিহিত ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্ভবের ফলে এর ক্ষেত্র অধিকতর প্রসারিত হয়। গত পঞ্চাশ বছরে এ প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি গতি লাভ করেছে। বিশ্বায়নের ফলে বৈশ্বিক ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ সকলক্ষেত্রে অভ‚তপূর্ব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এক দেশের পণ্য অন্য দেশে বসে সহজেই আমরা পেয়ে যাচ্ছি। প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থার কারণে পণ্যের দামও থাকছে হাতের নাগালে। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে জ্ঞানার্জনের পথ হয়েছে প্রশস্ত। দারিদ্র্য, অজ্ঞানতা ও অপশাসন দূর করে বিশ্বকে একটি শান্তিপূর্ণ আবাসস্থল করার ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন একটি বড় সুযোগ। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের সব জাতি একযোগে এ সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তবে ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি বিশ্বায়নের কিছু নেতিবাচক দিকও আমাদের চোখে পড়ে। তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা দেশগুলো বিশ্বায়নকে নিজেদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে হাতে গোনা কিছু পুঁজিপতিরা লাভবান হচ্ছে। গরিব হচ্ছে আরও গরিব। তবে বিশ্বায়নের ভালো দিকগুলোর উপযোগিতা অনস্বীকার্য। আমাদের উচিত এই ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতি মনোযোগী হয়ে অর্থনৈতিকভাবে এবং মেধা ও মননে সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করা