Table of Contents
কতেকগুলো যুক্তিসঙ্গত তথ্যাবলী থেকেও পূর্বাপর যাবতীয় مَاكَانَ وَمَايَكوْن বিষয়ের জ্ঞানের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়। সে সমস্ত দলীল প্রমাণ নিম্নে দেয়া গেল।
(১) হুযুর সায়্যিদুল আলম সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়াসাল্লাম হলেন খোদার রাজত্বের উযীরে আযম তথা খলীফায়ে আযম। হযরত আদম
(আলাইহিস সালাম) কে আল্লাহর খলীফা মনোনীত করা হয়েছিল। তাহলে নিঃসন্দেহ হুযুর
আলাইহিস সালাম সেই রাজত্বের খলীফায়ে আযম এবং পৃথিবীতে বিশ্বনিয়ন্তার প্রতিনিধি।
রাজ্যে নিযুক্ত শাসকের দুটো গুণ থাকা আবশ্যক, এক, জ্ঞান, দুই, ইখতিয়ার বা কাজ করার স্বাধীনতা।
এ পার্থিব রাজত্বের শাসকগণ যতবড়
পদমর্যাদার অধিকার হন সে অনুপাতে তাদের জ্ঞান কর্মক্ষমতাও বেশী থাকে। কালেকটর বা
জিলা প্রশাসকের সম্পূর্ণ জিলা সম্পর্কে জ্ঞান ও সমগ্র জিলার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা
থাকা প্রয়োজন। ভাইসরয় বা গভর্নরের সমগ্র
দেশের জ্ঞান ও অধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা জরুরী। কেননা এ দুটি গুণ ব্যতীত তিনি
শাসন করতে পারেন না, রাজকীয় ফরমানও প্রজাদের মধ্যে জারী করতে পারবেন না।
অনুরূপ নবীগণের মধ্যে যার যতবড় পদমর্যাদা
রয়েছে তার সে অনুপাতে জ্ঞান ও ক্ষমতা রয়েছে। মহাপ্রভু আল্লাহ আদম (আলাইহিস সালাম)
এর খেলাফত প্রমাণ করেছেন তার জ্ঞানেরই ফলশ্রুতি রূপে। অর্থাৎ আদম (আলাইহিস সালাম)
কে এত ব্যাপক জ্ঞান দান করেছেন যা আল্লাহর প্রতিনিদিত্বের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ। আর
ফিরিশতাগণের দ্বারা সিজদা করানো তার বিশেষ ক্ষমতার প্রমাণবহ। ফিরিশতাগণও তার কাছে
মাথা নত করেছেন। অতএব নবী করীম (আলাইহিস সালাম) যেহেতু সমগ্র সৃষ্টি জগতের নবী এবং
আসমান যমীনের সমস্ত লোক তার উম্মত সেহেতু তাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)
অন্যান্য সমস্ত নবীগণের তুলনায় বেশী জ্ঞান ও ক্ষমতা দেয়ার প্রয়োজন ছিল। এ জন্যই
তার থেকে অনেকে মুজিযা প্রকাশ পেয়েছে।
যেমন তিনি আঙ্গুলের ইঙ্গিতেই চন্দ্রকে
দ্বিখণ্ডিত করেছেন। ডুবন্ত সূর্যকে ফিরিয়ে এনেছেন, মেঘকে নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে পানি
বর্ষণ করেছে, আবার সেই মেঘ খন্ডকে হুকুম করার সাথে সাথে বর্ষণ বন্ধ হয়ে
গেল। এগুলো হলো তার খোদা প্রদত্ত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।
(২) মৌলভী কাসেম নানাতুবী সাহেব তাহযিরুন
নাস কিতাবে লিখেছেন নবীগণ জ্ঞানের দিক দিয়ে উম্মত থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের
অধিকারী হয়ে থাকেন, আর বাহ্যিকভাবে আমলের দিক দিয়ে অনেক সময় উম্মত নবীকেও
অতিক্রম করে যায়, এতে বোঝা গেল যে আমলের ক্ষেত্রে উম্মত নবীকে অতিক্রম করতে
পারে কিন্তু জ্ঞানের দিক থেকে নবীর জ্ঞান অপেক্ষাকৃত বেশ হওয়া প্রয়োজন। হুযুর
আলাইহিস সালামের উম্মতের মধ্যে ফিরিশতাও অন্তর্ভুক্ত।
কুরআনেই বলা হয়েছেঃ لِيكوْنَ لِلْعلَمِيْنَ نَذِيْرًا (যাতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সমস্ত জগৎবাসীদের
জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী হন) তাহলে নিঃসন্দেহে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান
ফিরিশতাগনের তুলনায় বেশী হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় কোন গুণের দিক দিয়ে হুযুর আলাইহিস
সালাম উম্মত থেকে শ্রেষ্ঠ হবেন? লওহে মাহফুজের দায়িত্বে নিযুক্ত ফিরিশতাগণেরতো যা কিছু
হয়েছে ও হবে مَاكَانَ وَمَايَكُوْن সে সব কিছুর জ্ঞান রয়েছে। সুতরাং
হুযুর আলাইহিস সালামের আরও অধিক জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
(৩) কয়েক বছর উপযুক্ত শিক্ষকের সান্নিধ্যে
থাকলে মানুষ জ্ঞানী হয়ে যায়। হুযুর আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণের আগে কোটি কোটি বছর
আল্লাহর মহা দরবারে অবস্থান করেছেন। এমতাবস্থায় হুযুর পূর্ণ আলেম হবেন না কেন?
তাফসীরে রুহুল বয়ানে- لَقَدْ جَاءَكُمْالخ বলা হয়েছে যে একদা হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম হুযুরের সমীপে আরয
করলেন একটি নক্ষত্র সত্তর হাজার বছর পর পর উদিত হয়। আমি এটিকে বাহাত্তর হাজার বার
আলোক উদ্ভাসিত দেখেছি। তখন হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ ফরমানঃ আমিই ছিলাম সেই
নক্ষত্র। হিসেব করে দেখুন কত কোটি বছর মহান আল্লাহর দরবারে অবস্থান করেছিলেন তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
(৪) ছাত্র বা শিষ্যের জ্ঞানের মধ্যে
অপূর্ণতা থাকলে তা কেবল চারটি কারণেই হতে পারে-
এক, শাগরিদ অনুপযুক্ত ছিল;
উস্তাদ থেকে পূর্ণ ফয়েয লাভ করতে
পারেননি।
দুই, উস্তাদ কামিল ছিলেন না;
যার ফলে পরিপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারেননি।
তিন, উস্তাদ হয়ত কৃপণ ছিলেন,
পরিপূর্ণ জ্ঞান সেই শাগরিদকে দান করেননি
কিংবা তার থেকে বেশী প্রিয় অন্য শাগরিদ ছিল যাকেই সব কিছু শিখায়েছেন।
চার, যে কিতাবটি পড়ানো হয়েছিল,
সেটি পূর্ণাঙ্গ ছিল না। এ চারটি কারণ
ছাড়া অন্য কোন কারণ থাকতেই পারে না।
এখানে শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ আর ছাত্র
হলেন মাহবুব আলাইহিস সালাম এবং যা শিক্ষা দিয়েছেন তা হলো কুরআন ও স্বীয় বিশেয়
জ্ঞান সমূহ। এখন বলুন মহাপ্রভু আল্লাহ কি কামিল শিক্ষক নন?
বা রসুল আলাইহিস সালাম কি উপযুক্ত শাগরিদ
নন? বা
রসুল আলাইহিস সালামের চেয়ে ও বেশী প্রিয় আর কেউ আছেন অথবা কুরআন কি পূর্ণ কিতাব নয়?
যখন এগুলোর মধ্যে কোন কারণই বিদ্যমান নেই
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পরিপুর্ণ জ্ঞান প্রদানকারী, মাহবুব আলাইহিস সালামও পরিপূর্ণ
গ্রহণকারী এবং কুরআন হলো একটি পরিপূর্ণ কিতাব যেখানে উক্ত হয়েছেঃ اَلرَّحْمنُ عَلَّمَ الْقُرْانَ (দয়াময় আল্লাহ কুরআন শিখিয়েছেন) আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে
ওয়াসাল্লাম) হলেন আল্লাহর দরবারে বেশী মকবুল বান্দা তখন তার জ্ঞান কেন অপূর্ণ হবে?
(৫) আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক কথা কেন লাওহে
মাহফুজে লিখলেন? লিখার প্রয়োজন হয় স্মরন রাখার জন্য,
যাতে ভুলবার উপক্রম না হয় বা অন্যদেরকে জানানো
জন্য।
আল্লাহ তাআলা ভুলক্রুটি থেকে পূতঃপবিত্র।
কাজেই তিনি অন্যদের জন্য লিখেছেন। অন্যদের মধ্য হুজুর আলাইহিস সালাম হলেন সর্বাধিক
প্রিয়। সুতরাং সেই লেখাটা হুজুর (আলাইহিস সালামের) উদ্দেশ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
(৬) অদৃশ্য বিষয় সমূহের মধ্যে সর্বাধিক
অদৃশ্য হলো আল্লাহর সত্ত্বা। হযরত মুসা (আঃ) যখন আল্লাহকে স্ব-চক্ষে কামনা
করেছিলেন, তখন
বলা হয়েছিলঃ لَنْ تَرَانِىْ (তুমি আমাকে দেখতে পাবেনা) আর যখন
মাহবুব আলাইহিস সালাম মিরাজের সময় স্বীয় পবিত্র চর্মচক্ষু মুবারক দ্বারা আল্লাহকে
দেখলেন তখন সৃষ্টি জগৎ কি তাঁর দৃষ্টির আড়ালে গোপন থেকে যেতে পারে।
খোদাই যখন আপনার দৃষ্টি থেকে গোপন রইল না
তখন কিইবা আছে যা অদৃশ্য থাকতে পারে? আপনার প্রতি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লামের) কোটি কোটি দরুদ।
তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)
আল্লাহর দর্শন লাভের বর্ণনা আমার রচিত শানে হাবিবুর রহমানে দেখুন।
মিরকাত শরহে মিশকাতের الايمان بالقدر
অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদের শেষে উল্লেখিত আছেঃ
كَمَا اَنَّ
النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وْسَلَّمَ رَ اهُ فِى الدُّنْيَالِاِنْقِلَابِه
نُوْرًا
(হুযুর আলাইহিস সালাম ইহ জগতেই আল্লাহকে দেখেছিলেন,
কেননা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)
নিজেই নুরে পরিণত হয়েছিলেন।)
(৭) শয়তান হলো দুনিয়াবাসীদের পথভ্রষ্টকারী
আর নবী আলাইহিস সালাম হলেন সৎপথের দিশারী। শয়তান হলো মহামারীর মত আর নবী আলাইহিস
সালাম হলেন সর্বরোগের সর্ববিশেষজ্ঞ ডাক্তার সরূপ। আল্লাহ তাআলা
শয়তানকে পথভ্রষ্ট করার সহায়ক এত ব্যাপক ও
সুদূর প্রসার জ্ঞান দান করেছেন যে, পৃথিবীর কেউ তার দৃষ্টির অগোচরে থাকে না।
তার কাছে এ খবরও আছে যে কাকে পথভ্রষ্ট
করা যাবে, আর
কাকে করা যাবে না; এবং যে পথভ্রষ্ট হওয়ার আছে, তাকে কিভাবে পথভ্রষ্ট করতে হবে?
অনুরূপভাবে সে প্রত্যেক ধর্মের প্রতিটি
মাসআলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, যার ফলে সে প্রতিটি সৎকাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে ও প্রতিটি
নীতি বিগর্হিত কাজ করানোর মদদ যোগায়। সে আল্লাহর কাছে দম্ভোক্তি করে বলেছিলঃ
لَاُغْوِ
يَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ اِلَّاعِبَادِكَ مِنْهُمُ الْمُخْلِصِيْنَ
(আমি তোমার বিশুদ্ধ চিত্ত বিশিষ্ট নেককার বান্দাগণ ছাড়া বাকী
সবাইকে পথভ্রষ্ট করেই ছাড়বো।) পথভ্রষ্টকারীকে যখন এতটুকু জ্ঞান দান করা হলো,
তখন সর্ববিশেষজ্ঞ ডাক্তার সদৃশ্য হুযুর
আলাইহিস সালামের সঠিক পথের দিশা প্রদানের জন্য এর চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞান থাকা
একান্ত প্রয়োজন, যাতে তিনি প্রত্যেক ব্যাক্তির রোগ নির্ণয় ও আরোগ্য লাভের
যোগ্যতার পরিমাপ করে চিকিৎসা করতে পারেন।
অন্যথায় সঠিক পথ নির্ধারণের কাজ পরিপূর্ণ
হবে না। এবং মহাপ্রভু আল্লাহর সম্পর্কে এ আপত্তি উত্থাপন করা হবে যে,
তিনি পথভ্রষ্টকারীকে শক্তিশালী করেছেন আর
পথ প্রদর্শনকারীকে দুর্বল রেখেছেন। সেজন্য পথভ্রষ্টতা পরিপূর্ণতা লাভ করল আর
হেদায়েত অপরিপূর্ণ রয়ে গেল।
(৮) মহান প্রভু হুযুর আলাইহিস সালামকে নবী
বলে সম্বোধন করেছেন। যেমন يَااَيُّهَاالنَّبِىُّ নবী শব্দের অর্থ হলো খবর দাতা।
যদি খবর বলতে শুধু দ্বীনের খবরই লক্ষ্যার্থ হয় তাহলে বলতে হয় প্রত্যেক মৌলভীই নবী;
আর যদি পার্থিব ঘটনাবলীর খবর ধরে নেওয়া
হয়, তাহলে
প্রত্যেকটি সংবাদপত্র, রেডিও, টি ভি ও তারবার্তা প্রেরণকারী সবাই নবী রূপে পরিগণিত হবে।
সুতরাং বোঝা গেল যে নবী শব্দের মধ্যে
অদৃশ্য বিষয়াদীর খবরাখবরই গুরুত্বপুর্ণ। অর্থাৎ নবী হলেন ফিরিশতাগণ ও আরশ সম্পর্কে
খবরদাতা যেখানে তারবার্তা ও সংবাদপত্র সমূহ কোন কাজেই আসবে না। সেখানে একমাত্র
নবীর জ্ঞানই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে বোঝা গেল যে ইলমে গায়ব নবী শব্দের
অন্তর্ভুক্ত বা অঙ্গীভূত।
এ পর্যন্ত হুযুর আলাইহিস সালামের ইলমে
গায়ব সম্পর্কে আলোচনা করা হল। এখন এও জানা দরকার যে হুযুর আলাইহিস সালামের মাধ্যমে
আওলিয়া কিরামও ইলমে গায়ব লাভ করে থাকেন। তবে তাদের জ্ঞান নবী (সাল্লাল্লাহু আলেইহে
ওয়াসাল্লাম) এর মাধ্যমেই অর্জিত হয় ও উহা নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর
জ্ঞান সমুদ্রের এক ফোঁটার সমতুল্য।
মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ মিরকাতে
শাইখ আবু আবদুল্লাহ; সিরাজী কর্তৃক সংকলিত কিতাবে আকায়িদ এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা
হয়েছেঃ-
اَلْعَبْدُ
يَنْقُلُ فِى الْاَحْوَالِ حَتَّى يُصِيْرَ اِلَى نَعْتِ الرُّوْحَانِيَّةِ
(বান্দার আধ্যাত্মির পরিবর্তন হতে থাকে শেষ পর্যন্ত যখন
রুহানীয়তের গুণ প্রাপ্ত হয় তখনিই গায়ব সম্পর্কে অবগত হয়।)
মেরকাতের আর এক জায়গায় উক্ত কিতাবে
আকায়িদ গ্রন্থের বরাত দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছেঃ-
يَطَّلِعُ
الْعَبْدُ عَلَى حَقَائِقِ الْاَشْيَاءِ وَيَتَجَلَّى لَهُ الْغَيْبُ وَغَيْبُ
الْغَيْبِ
কামিল বান্দা
যাবতীয় বস্তুর নিগূঢ় তত্ত্ব ও রহস্য সম্পর্কে অবিহিত হন এবং তার কাছে অদৃশ্যের
বিষয়ও প্রকাশিত হয়ে যায়।)
মিরকাতের দ্বিতীয় খণ্ডের ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় الَصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَفَضْلِهَا শীর্ষক অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছেঃ-
(পূত পবিত্র আত্মা যখন সীমাবদ্ধ শারীরিক
গণ্ডির বাহিরে আসে তখন আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করে সু-উচ্চ স্তরে উপনীত হয় এবং
তাদের সামনে কোনরূপ আবরণ অবশিষ্ট থাকে না। তখন সমস্ত বস্তুকে নিজের সামনে উপস্থিত
ও স্থুল বস্তু সদৃশ দেখতে পায়। এধরনের অনূভুতি আপনা আপনিই কিংবা ফিরিশতার ইলহাম
দ্বারা অর্জিত হয়।)
শাহ আবদুল আযীয সাহেব (রহমতুল্লাহে
আলাইহে) তাফসীরে আযীযীতে সূরা জ্বিনের তাফসীরে ফরমানঃ-
(লওহে মাহফুজ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন এবং
উহার লিপিদর্শন করা সম্পর্কে কোন কোন ওলী থেকে ও মুতওয়াতির পর্যায়ে বর্ণনা পাওয়া
যায়।
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহমতুল্লাহে
আলাইহে) তার রচিত কিতাবুল এলামে এবং আল্লামা শামী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত
সুল্লুল হুসসামে উল্লেখ করেছেনঃ-
اَلْخَوَاصُّ
يَجُوْزُ اَنْ يَّعْلَمَ لْغَيْبَ فِى قَضْيَةٍ اَوْ قَضَاءٍ كَمَا وَقَعَ
لِكَثِيْرٍ مِّنْهُمْ وَاشْتَهَرَ
(এটা বৈধ্য যে বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ (আওলিয়া কিরাম) কোন ঘটনা বা
সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গায়বী ইলম অর্জন করেন যেমন অনেক আওলিয়া কিরাম থেকে এ ধরনের
ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে এবং তা সাধারণ্যে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে।
শাহ ওলিউল্লাহ সাহেব (রহমতুল্লাহে
আলাইহে) আলতাফুল কুদস নামক কিতাবে লিখেছেনঃ-
(আরিফের আত্মা একেবারে তার দৈহিক আকৃতির
রুপ পরিগ্রহ করে থাকে এবং তার সত্ত্বা রূহের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। তখন তিনি
হুযুরী জ্ঞানের সাহায্যে সমগ্র জগত দেখতে পান।)
আল্লামা যুরকানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে)
তার রচিত শরেহে মওয়াহেব গ্রন্থের সপ্তম খণ্ডের ২২৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ-
(লাতায়েফুল মেনন কিতাবে উল্লেখিত আছে যে
কোন কামিল বান্দা কর্তৃক আল্লাহ তাআলার অদৃশ্য বিষয় সমূহ থেকে কোন অদৃশ্য বিষয়ের
জ্ঞান লাভ আশ্চর্যের বিষয় নয়। এটা সেই হাদীছেই ব্যক্ত হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে
মুমিনের জ্ঞানকে ভয় কর কেননা তিনি আল্লাহর নূরে দেখেন। এটাই অপর এক হাদীছেরও অর্থ
জ্ঞাপন করে যেখানে বলা হয়েছে আল্লাহ তাআলা বলেন আমি তার চোখ হয়ে যাই যদ্বারা তিনি
দেখেন। সুতরাং তার দেখা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত অসাধারণ শক্তির বলেই সম্পন্ন
হয়ে থাকে। তাই তার গায়ব সম্পর্কে অবগত হওয়াটা বিস্ময়কর কোন ব্যাপার নয়।)
আল্লামা ইমাম শারানী (রহমতুল্লাহে
আলাইহে) তার রচিত اليواقيت
والجواهر নামক কিতাবে
উল্লেখ করেছেনঃ-لِلْمُجْتَهِدِيْنَ
الْقَدمُ فِى عُلُوْمِ الْغَيْبِ
(গায়বী ইলম সমূহের ক্ষেত্রে মুজতাহিদগণেরও
দৃপ্ত পদচারণা রয়েছে।)
হুযুর গাউছে পাক (রহমতুল্লাহে আলাইহে)
ফরমানঃ-
نَظَرْتُ اِلَى
بِلَادِ اللهِ جَمْعًا-كَخَرْدَلَةٍ عَلَى حُكْمِ اتِّصَالِىْ
(আমি আল্লাহ তাআলার সমস্ত শহরগুলোকে এভাবে দেখেছি যেমন
কয়েকটি তৈলবীজ পরস্পর সন্নিবেশিত হয়ে আছে।)
শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী
(রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত যুবদাতুল আসরার গ্রন্থে হযরত গাউছে পাকের
(রহমতুল্লাহে আলাইহে) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য উক্তির বর্ণনা দিয়েছেনঃ-
(গাউছে পাক (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ফরমানঃ
হে সাহসীভক্তগণ হে আমার সন্তানগণ এসো আমার এ অকুল সমুদ্র থেকে কিছু আহরণ কর। খোদার
কসম নেককার ও বদকার লোকদেরকে আমার সামনে উপস্থিত করা হয় আর আমরা চোখের কোনা লওহে
মাহফুজের দিকে নিবদ্ধ থাকে। আমি আল্লাহ তাআলার অপার জ্ঞান সমুদ্রে ডুব দিয়ে থাকি।)
আল্লামা জামী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার
রচিত نفحات الانس কিতাবে হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (কুঃসিঃ) এর একটি উক্তি
উল্লেখ করেছেন। উক্তিটি হলোঃ-
(হযরত আযীযান (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন
যে একদল আওলিয়া কিরামের সামনে পৃথিবীটা দস্তরখানার মত আর আমি মনে করি আঙ্গুলের
নখের মত। কোন বস্তুই তাদের দৃষ্টি বহির্ভূত নয়।)
ইমাম শারানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) كبريت احمر
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ-
(আমি আমার শাইখ সৈয়দ আলী হাওয়াছ
(রাদিআল্লাহু আনহু) কে বলতে শুনেছি আমার মতে ওই পর্যন্ত কোন ব্যক্তি কামিল হিসেবে
গণ্য হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিজ মূরীদের পিতার ঔরসে থাকাকালীন গতিবিধি
সংক্রান্ত ক্রিয়া প্রক্রিয়া এমনকি মীছাকের দিন থেকে তার বেহেশত কিংবা দোযখ প্রবেশ
করা অবধি তার যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন।)
শাহ ওলিউল্লাহ সাহেব (রহমতুল্লাহে
আলাইহে) فيوض الحرمين নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ-
ثُمَّ اِنَّهُ
يَنْجَذِبُ اِلَى خَيْرِ الْحَقِّ فَيُصِيْرُ عَبْدَ اللهِ فَيَتَجَلَّى لَهُ
كُلُّ شَئٍّ
অতঃপর সেই আরিফ
ব্যক্তি হক তাআলার সুমহান দরবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আত্মবিলীন হয়ে যান এরপর তিনি
আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হন। তখন তার কাছে প্রত্যেক কিছুই উন্মুক্ত ও প্রতিভাত
হয়ে যায়।)
মিশকাত শরীফের প্রথম খণ্ডে কিতাবুত
দাওয়াতের ذكر الله والتقرب শীর্ষক অধ্যায়ে বুখারী শরীফের
সুত্রে হযরত আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃ-
فَاذَا
اَحْبَبْتُه‘ فَكُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِىْ يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِىْ
يُبْصِرُبِهِ وَيَدَهُ الَّتِىْ يَبْطِش بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِىْ يَمْشِىْ بِهَا
(আল্লাহ তাআলা ফরমান, সেই প্রিয় বান্দাকে যখন আমি ভালবাসি,
তখন আমি তার কান হয়ে যাই,
যদ্বারা তিনি শুনেন,
চোখ হয়ে যাই,
যদ্বারা তিনি দেখেন,
হাত হয়ে যাই,
যদ্বারা কোন কিছু ধরেন এবং
পা হয়ে যাই যদ্বারা তিনি চলাফেরা করেন।)
একথা স্মরণ রাখা দরকার যে হযরত খিযির
(আলাইহিস সালাম) ও হযরত ইলিয়াস (আলাইহিস সালাম) এখনও পৃথিবীপৃষ্ঠে জীবিত আছেন।
তারা এখন উম্মতে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর ওলী হিসেবে গণ্য।
হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) যখন পৃথিবীতে (পুনরায়) তশরীফ আনবেন,
তখন তিনিও এ উম্মতের ওলী হিসেবে আসবেন।
তাদের (হযরত খিযির, ইলিয়াস ও ঈসা (আলাইহিস সালাম) ব্যাপক জ্ঞান সম্পর্কে আমি
ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। তাদের জ্ঞানও এখন হুযুর আলাইহিস সালামের উম্মতে ওলীগণেই জ্ঞান
হিসেবে পরিগণিত। -সূত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড-